গুলিতে নিহত শিহাবের শিবচরের বাড়িতে মাতম
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![গুলিতে নিহত শিহাবের শিবচরের বাড়িতে মাতম](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/07/30/image-831751-1722290307.jpg)
ছবি সংগৃহীত
৮ বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান শাহ আলম হাওলাদার। এরপর ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না। এরপরই আবার হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসারে তৈরি হয় আর্থিক টানাপোড়েন। হাল ধরতে বাধ্য হন স্ত্রী নাছিমা বেগম। সেলাইয়ের কাজ করে কোনোমতে চলতে থাকে সংসার। একমাত্র ছেলে হৃদয় আহমেদ শিহাব যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত, তখনই সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজে পাঠিয়ে দেয় দরিদ্র এ দম্পতি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার।
ফার্নিচারের দোকানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করত শিহাব (১৮)। বেতন যা পেত, নিজের খরচ রেখে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত সব টাকা। সংসারের হাল কেবল ধরতে শেখা হৃদয় আহমেদ শিহাব ১৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বাড্ডায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।
শিহাবের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন তার মা-বাবা। বাকরুদ্ধ বাবার নীরবতা ও মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ। ১৯ জুলাই রাতে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে লাশ এসে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে চলে শোকের মাতম। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনও কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে শনিবার তার লাশ দাফন করা হয়।
সরেজমিন শিহাবের বাড়িতে দেখা যায়, সন্তান হারিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা নাছিমা বেগম। শোকে বাকরুদ্ধ বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকছেন ঘরের এক কোণে। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করে উঠছেন বোন, শোকে আচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশী। বাড়ির পাশের কবরস্থানে এসে ভিড় করছেন স্বজনরা। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে প্রলাপ বকছেন দাদা রফিক হাওলাদার।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বাড্ডার লিংকরোডে ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার ‘হাসান স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার’-এ কাজ করত শিহাব। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মনির মোল্লার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যায় শিহাব। খাবার শেষ করে পাশেই কারখানায় (ফার্নিচার) ফিরতে গিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক। তখনই একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শিহাবের শরীরে। বুকের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে অপর পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায় গুলি। তখন ওই এলাকার মসজিদের এক ইমাম (পূর্বপরিচিত) সঙ্গে ছিলেন শিহাবের। তিনি খবর দেন ফার্নিচার দোকানে। খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। চিকিৎসা না পাওয়ায় বনশ্রীর নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মনির মোল্লা বলেন, ‘শিহাব হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। ভর্তি করতে চায়নি কোনো হাসপাতাল! চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল।’
নিহত শিহাবের চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল শিহাব। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শিহাব।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজ নিচ্ছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’