Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যবসা-বাণিজ্যে ছন্দ ফেরানোর তাগিদ 

দরকার তিন নীতি সহায়তা

বিডায় বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও ৩ মন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠক আজ

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দরকার তিন নীতি সহায়তা

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা সামাল দিতে কারফিউ জারি করায় গত সপ্তাহে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, দোকানপাট ও উৎপাদন বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের ছন্দ ফিরে পেতে বন্দর-শিপিং ডেমারেজ মওকুফ ও কাস্টমসে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিল্পমালিকরা। 

এসব পদক্ষেপ নেওয়া গেলে অল্প সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আগের অবস্থানে পৌঁছবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। শনিবার দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত সপ্তাহে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকায় আপাতত বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ চার্জ মওকুফ চেয়েছি আমরা। পাশাপাশি শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, তাই ঋণের সুদটা ব্যাংক যাতে পরে নেয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। 

এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা শুনতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো সরকারপ্রধানকে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিকারকদের বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করার দাবি জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে বন্দরের ক্লিয়ারিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার ১৫ দিন পর্যন্ত চার্জ আরোপ না করার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।

বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সহিংসতায় রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এ সুযোগে একটি গোষ্ঠী বায়ারদের নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে। 

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উৎপাদন সচল রাখা। এজন্য যা যা করা দরকার সরকার সেই পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, কারফিউ থাকায় বন্দরে পণ্যবোঝাই কনটেইনার এসে পড়েছিল। যেহেতু কনটেইনার খালাসে ব্যবসায়ীদের গাফিলতি ছিল না, সেহেতু কনটেইনারের পোর্ট ও শিপিং ডেমারেজ মওকুফ করে নৌমন্ত্রণালয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেবে বলে আশা করি। এছাড়া ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ পেছাতে হবে।

হাতেম আরও বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। গ্যাসের সরবরাহ পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করবেন। এছাড়া পণ্য খালাসে কাস্টমসে নানা প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব জায়গায় সহযোগিতা করতে হবে। যেমন যেসব বিধিনিষেধে রাজস্ব ক্ষতি হয় না, সেসব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া প্রয়োজন।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। তিনি বলেন, কারফিউর কারণে অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের বিল বা চার্জ মওকুফ করে এসএমএস দিয়েছে। কিন্তু শিল্পমালিকদের ঋণের বিষয়ে কোনো এসএমএস বা নির্দেশনা দেখতে পাইনি। অথচ ব্যক্তি গ্রাহকের চেয়ে শিল্প বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ঋণ মওকুফ বা সুদ মওকুফ চাই না। 
শুধু চাই ব্যাংক ঋণের কিস্তি অন্তত এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হোক। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিতে পারে। একইভাবে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মেয়াদ এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
খোকন আরও বলেন, রপ্তানিকারকদের শিল্পে কাঁচামাল ছাড় করাতে বন্দরে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বন্দরে পণ্যবোঝাই কনটেইনার এসে পড়লেও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ব্যাংকে ডকুমেন্ট আসেনি। তাই পোর্ট ডেমারেজ মওকুফ করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ এখন রপ্তানিকারকদের প্রধান মাথাব্যথা। করোনাকালীন সময়ের মতো এই দুই চার্জ মওকুফ করা উচিত। 

এছাড়া ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের চার্জ মওকুফ করলেও শিল্প ঋণের বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল বড় ইস্যু নয়। কারখানা চললে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। যেহেতু বন্ধ ছিল, তাই ওই সময়ের বিল তো দেওয়া লাগছে না। কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকুক বা খোলা থাকুক ব্যাংক ঋণের সুদ এবং বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ দিতে হবে। তাই এ দুটোর সমাধান জরুরি।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, এখনো কোনো বিদেশি ক্রেতা বিলম্বে শিপমেন্টের জন্য ডিসকাউন্ট দাবি করেনি। এ ধরনের কোনো তথ্য পাইনি। যদি বায়ার ডিসকাউন্ট বা এয়ার শিপমেন্ট চায়, সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশের অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সাধারণত দোকান ব্যবসা করেন। গত সপ্তাহে কারফিউর কারণে ছোট-বড় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে কারফিউ থাকায় অনেক ক্রেতা চাইলেও সন্ধ্যা ও রাতে শপিংমলে যেতে পারছেন না। আমাদের একটাই চাওয়া, সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেবে, যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কাজকর্ম করে দিনযাপন করতে পারে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ১৬ জুলাই সহিংসতায় রূপ নেয়। এদিন সারা দেশে শিক্ষার্থীসহ ৬ জন নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, দোকানপাট ও শিল্পের উৎপাদন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম