Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ছন্দে ফিরছে সারা দেশ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ছন্দে ফিরছে সারা দেশ

ছবি: সংগৃহীত

কার্যত এক সপ্তাহ পর অনেকাংশে সচল হলো সারা দেশ। অফিস-আদালত, ব্যাংক, পুঁজিবাজার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নির্বিঘ্নে কাজে ফিরেছেন কর্মজীবী মানুষ। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আদালতপাড়ায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ভিড় ছিল উপচে পড়া। সড়কে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ হাজার হাজার গাড়ি নেমেছে। পাশাপাশি ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা। গাড়ির চাপে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় চিরচেনা দীর্ঘ যানজটও তৈরি হয়। রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে চাঁদপুর ও ভোলার ইলিশার উদ্দেশে দুটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। চাঁদপুর থেকে দুটি লঞ্চ সদরঘাট এসেছে। এছাড়া খুলেছে বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও হাটবাজার। ফুটপাতে ফিরে এসেছেন হকাররাও। বিভিন্ন এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও চালু হয়েছে। তবে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মেট্রোরেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

ঢাকাসহ তিন জেলায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। শুক্রবার মধ্যরাতে কারফিউ জারির পর গতকালই প্রথম সাত ঘণ্টা শিথিল করা হয়। অন্যান্য জেলায়ও জেলা প্রশাসকদের নির্ধারণ করা কয়েক ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল ছিল। এদিন সরকারি অফিস ও ব্যাংক কয়েক ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল ছিল। আজও ঢাকায় কারফিউ সাত ঘণ্টা শিথিল থাকবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন, সংঘাত-সহিংসতা ও কারফিউ জারি থাকায় এক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে একধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করে। গত সপ্তাহের বুধ থেকে শুক্রবার সারা দেশে ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে। নিরাপত্তা আতঙ্কে বুধবার থেকেই সারা দেশে যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি অফিসে উপস্থিতি কমে যায়। সারা দেশে ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের। নির্বাহী আদেশে রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সব সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়। বুধবার প্রথম টানা সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল। এদিন সরকারি-বেসরকারি অফিস বেলা ১১টা থেকে চার ঘণ্টা খোলা ছিল। ব্যাংকেও কয়েক ঘণ্টা লেনদেন হয়। তবে ব্যাংকের সব শাখা খোলা ছিল না।

নির্বিঘ্নে কাজে যোগ দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ছিল। মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই পরিস্থিতি কেটে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আবার অফিসে আসতে পারায় ভালো লাগছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। ঢাকার চিরচেনা পরিবেশ ফের দেখতে পাচ্ছি।

লালমাটিয়া মহিলা সরকারি কলেজের ছাত্রীনিবাসে থাকা তাসকিনা আফনান সাবাকে নিতে এসে ঢাকায় আটকা পড়েন মা আইরিন জাহান। কারফিউ সাত ঘণ্টা শিথিল থাকা এবং বাস চলাচল করায় বুধবার সাভারে নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন তিনি। এ ঘটনা জানিয়ে আইরিন জাহান বলেন, সংঘাত-সংঘর্ষের জেরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় শুক্রবার মেয়েকে কলেজ থেকে নিয়ে আসার সময় ঢাকায় আটকা পড়ে এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। গাড়ি চলাচল করায় নিজ বাড়িতে যেতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। তিনি বলেন, একদিকে ইন্টারনেট বন্ধ, অন্যদিকে আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করায় মনে হচ্ছিল জেলে আছি।

সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর ফার্মগেট, মিরপুর, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কল্যাণপুর, বনানী, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন রাস্তায় তীব্র যানজট ছিল। যানজটে ঢাকার রাস্তায় একরকম স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। গণপরিবহণ না পাওয়ায় এবং যানজটের কারণে অফিসগামী যাত্রীরা বিপদে পড়েন। কারফিউ শিথিলের সময় বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন অফিস খোলা ছিল। কিন্তু যানবাহন পেতে দেরি হওয়ায় এবং যানজটে পড়ে অনেকে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। অফিস শেষেও মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। আরও দেখা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর এবং আশপাশের এলাকা বুধবার যানজটে স্থবির হয়ে ছিল। দুর্বৃত্তদের অগ্নিকাণ্ডে স্টেশন পুড়ে যাওয়ায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে উত্তরা, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও কাওরান বাজার সড়কে বেশি চাপ পড়ে। চলমান কারফিউর কারণে এখনো সড়কে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ টহল রয়েছে। এ কারণে নগরবাসী বাইরে বের হওয়ার সাহস পেয়েছেন এবং নতুন করে কোনো বিশৃঙ্খলা না হওয়ায় জনমনে স্বস্তিও ফিরেছে।

বুধবার বেলা ১১টায় মিরপুর-১০ নম্বরে কথা হয় পাইকারি ব্যবসায়ী এমএ আউয়ালের সঙ্গে। ব্যবসার কাজে মিরপুর-১০ নম্বরে এসেছেন। যুগান্তরকে তিনি বলেন, কারফিউ চলমান রয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য অফিস চালু করা হয়েছে। এতেই বাইরে এত মানুষ। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত আসতে পুরো সড়কে যানজটের ধকল সইতে হয়েছে বলে জানান তিনি। দুপুর ১টায় বাংলামোটার এলাকায় কথা হয় গণমাধ্যমকর্মী মো. রাশেদ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, অফিসের কাজে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করতে হয়েছে। সকাল থেকে যে সড়কে গিয়েছি, সেখানে তীব্র যানজট দেখেছি। দুপুরে তেজগাঁও এলাকা, বাংলামোটর ফেরার পথে যানজটে রীতিমতো নাকাল হয়েছি।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. ইমান হাসান জানান, অফিসের কাজে সকালে বনশ্রীর বাসা থেকে মিরপুর-১০ নম্বরে যান। সেখান থেকে বাংলামোটর যান। পরে আবার কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বনানী ও কুড়িল হয়ে অফিসে ফেরেন। দিনব্যাপী এই যাতায়াতের পথে তীব্র যানজটে নাকাল হয়েছেন। সড়কে বিপুল মানুষের উপস্থিতি এবং কিছু সড়কে বেরিক্যাড থাকায় চলাচলে নাভিশ্বাস উঠেছে। বুধবার যানজটে নাকাল ছিল মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকাও। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রচণ্ড যানজট দেখা যায়। আশপাশের অলিগলিতেও যানজট ছিল। গণপরিবহণ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থলগামী মানুষ। মনির হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, তিনি মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকা থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি রিকশা নিয়ে কাওরান বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। আসাদ গেটে এসে ওই রিকশা ছেড়ে কিছুটা হেঁটে আরেকটি রিকশায় ওঠেন। দীর্ঘসময় যানজটের ধকল কাটিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাওরান বাজার পৌঁছান। রাস্তায় গণপরিবহণের পাশাপাশি রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার আধিক্য ছিল। অনেকেই গণপরিবহণ না পেয়ে এসব ছোট যানবাহনে গন্তব্যে গেছেন। রাজধানীর আগারগাঁও মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় কর্মজীবী যাত্রীদের। তাদেরই একজন আজম খান বলেন, আগারগাঁওয়ের ৬০ ফিট এলাকা থেকে বের হয়েছি রিকশায়। পুরো রাস্তা জট লাগা দেখে হেঁটে এলাম আগারগাঁও। যাব মতিঝিল। কিন্তু রাস্তায় গণপরিবহণ নেই বললেই চলে। যা-ও ২/১টা দেখা যাচ্ছে, সামনে যানজটে আটকা, আবার যাত্রীতেও ঠাসা। বাধ্য হয়ে সিএনজি নিয়ে যেতে হচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর জোনের সহকারী কমিশনার তারেক সেকান্দার বলেন, নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মেট্রোরেল বন্ধ, অন্যদিকে নিরাপত্তার কারণে বন্ধ গণভবনের সামনের সড়ক। সংগত কারণে কল্যাণপুর, মিরপুর, গাবতলী, শ্যামলীর সব গাড়ি আসছে আগারগাঁও রুটে। এ কারণে গাড়ির চাপ ছিল।

দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে দূরপাল্লার বাস। বুধবার সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ছেড়ে গেছে যাত্রীবাহী পরিবহণগুলো। বুধবার সকালে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চল অভিমুখে বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা জানান, অনেকেই ঢাকায় আটকা পড়েছিলেন। বাস চলাচল শুরু হওয়ায় তারা নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।

লঞ্চ চলাচল শুরু : কারফিউ শিথিল হওয়ায় বুধবার সীমিত আকারে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। বুধবার চাঁদপুর থেকে দুটি লঞ্চ ঢাকা নদীবন্দরে এসেছে। ঢাকা থেকে চাঁদপুরে এমভি সেভেন সী এবং ভোলার ইলিশার উদ্দেশে এমভি কর্ণফুলী-১৪ লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ওইসব লঞ্চে তুলনামূলক যাত্রী কম ছিল।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম