বিপিএসসির প্রশ্নফাঁসে আট উত্তর খুঁজছে সিআইডি
প্রশ্নফাঁসে একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ ৯১ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি
ইমন রহমান ও মহিউদ্দিন খান রিফাত
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিসিএসসহ বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অন্তত ৩০টি ক্যাডার-নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিপিএসসির একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ ৯১ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এদের মধ্যে ৩১ জনের নাম পেলেও বাকিরা অজ্ঞাত। ফাঁস করা প্রশ্ন বিক্রি করে চক্রটি বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সিআইডি তদন্তের অংশ হিসাবে এখন ৮ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। এর মধ্যে রয়েছে রেলওয়ের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ পরীক্ষার মূল প্রশ্ন তারা কীভাবে সংগ্রহ করেছে এবং সরবরাহই বা করেছে কে; প্রশ্নফাঁসের এ চক্রটির সঙ্গে আর কারা জড়িত; কীভাবে তারা এই প্রশ্ন ফাঁস করত, কারা কীভাবে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করত; কীভাবে পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্ন এবং উত্তর বিতরণ করত; কতজনের কাছে প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর বিতরণ করা হয়েছে; চক্রটি প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কত টাকা লেনদেন করেছে এবং এর সুবিধাভোগীই বা কারা।
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বিপিএসসির উপপরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ছয়জনের দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী আসামিদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য ১৬ জুলাই দিন ধার্য করেন। বাকি পাঁচ আসামি হলেন-পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির (৪৯), ডিডি আবু জাফর (৫৭), প্রতিরক্ষা ও অর্থ বিভাগ এসিসিডিএফের (বিওএফ) অডিটর প্রিয়নাথ রায় (৫১), মিরপুরের পোশাক কারখানার ব্যবসায়ী নোমান সিদ্দিকী (৪৪) ও ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম (২৭)।
মোটা অঙ্কের টাকায় ফাঁস করা প্রশ্ন কিনে কারা পেয়েছেন চাকরি এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতার আসামিরা বেশ কিছু ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তার নাম বলেছেন। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে সিআইডি। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলেই তাদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ওইসব কর্মকর্তা কীভাবে টাকা দিয়েছেন, চাকরি হওয়াকালীন সময়ের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও সংগ্রহ করছে সিআইডি।
ইতোমধ্যেই আসামিদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ফাঁস করা প্রশ্নে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম পরিচয়। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ। কয়েকজন কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে গেছেন।
সিআইডি জানায়, বিপিএসসির ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ৩৩তম বিসিএসের প্রশ্নফাঁস করে ১০ জনকে দেয়। তাদের মধ্যে তিনজন বিসিএস ক্যাডার হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ রেলে শতাধিক চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগে খলিলুরের হাত ছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছে। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির প্রশ্নও ফাঁস করা হয়েছে। খলিলুর অফিস সহায়ক হলেও তার সম্পর্ক বিপিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করতেন তিনি। সংকেত পেলেই চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে লেনদেন করতেন খলিলুর। ইতোমধ্যেই বিপুল সম্পদ গড়েছে খলিলুর।
এত সম্পদ হলেও চলাফেরা ও গ্রামের বাড়িঘর দেখে বোঝার উপায় নেই। মিরপুরের ৬০ ফিট এলাকায় আলিসান বাড়ি, ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে কয়েক কোটি টাকা। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ক্যাডার, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর, গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, অডিটর, নার্সিংসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ৬ জন।
তারা হলেন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন, সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
বিপিএসসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ : কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শোকজ করেছে বিপিএসসি। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আমরা তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে আমরা কমিশনের সব কর্মকর্তা ও কমচারীর ওপর নজর রাখছি। এতে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে।