সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’: কোটা সংস্কার আন্দোলনে আজকের কর্মসূচি
যুগান্তর প্রতিবেদন ও ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য নিরসনে লাগাতার আন্দোলন ও ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এবার সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব মিলিয়ে ৫% কোটা রাখার দাবি জানিয়ে আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এ অবরোধ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনের প্ল্যাটফরমটির অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এদিকে কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
আবেদনটি আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে এ আদেশ দেন। কোটা নিয়ে বিচারাধীন মামলায় শিক্ষার্থীদের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদনকে ‘ইতিবাচক’ বর্ণনা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, তিনি মনে করেন তারা সঠিক পথে হাঁটছেন। মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আপিল বিভাগে দরখাস্ত করেছেন। আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। এখন তারা তাদের বক্তব্য আদালতে দেবেন। আমি আশা করব, যেহেতু তারা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। তবে আন্দোলনকারীরা বলেন, যে দুজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে আপিল করেছেন, তারা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এদিকে মঙ্গলবারও কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশাল, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড (অবরোধ) কর্মসূচি পালিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এর আওতাভুক্ত থাকবে। দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের নিকটবর্তী সড়ক অবরোধের আহ্বান জানান তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, এ আন্দোলন কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তৈরি করেনি। হাইকোর্টের রায় ও সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকার প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলন। আমাদের আন্দোলনের ফলে জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে, এর দায় সরকারকে নিতে হবে। কারণ, আমরা এতদিন ধরে আন্দোলন করছি, কিন্তু এখনো সরকার বা নির্বাহী বিভাগ থেকে কোনো আলোচনার ডাক বা আশ্বাস পাইনি। আমরা এমন একটা চূড়ান্ত সমাধান চাচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে কোটা নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়। সেজন্য আমরা অনগ্রসর জাতির কথা বিবেচনায় রেখে সংসদে আইন পাশ করার মাধ্যমে কোটার যৌক্তিক সংস্কার দাবি করছি।
সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, এটা কোটা বাতিলের নয় বরং বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক সংস্কার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাদের দাবিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের রিওয়ার্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতি, পোষ্য কোটার বিরোধিতা করছি। আমাদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা সবাই সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, গণমাধ্যম-সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, দুজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে আপিল করেছে। যারা আপিল করেছে, তারা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমাদের মূল দাবিটা মূলত নির্বাহী বিভাগের কাছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সমন্বয় করেছি। আমাদের মাঠপর্যায়ে জরিপ ও সর্বসম্মতিক্রমে ৫% কোটা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী-এ তিনটি শ্রেণি কোটার আওতাভুক্ত হবে।
যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী কলেজ : অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কলেজ গেটের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সড়কে বসে পড়েন তারা। প্রায় আধাঘণ্টা সড়কটি অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেন, ‘একজন মেধাবী শিক্ষার্থী সারাবছর পড়াশোনা করে চাকরির বাজারে কোটার কাছে হেরে যাচ্ছে। ভালো চাকরি পাচ্ছে না। অথচ একজন অযোগ্য লোক কোটা থাকায় চাকরির বাজারে টিকে যাচ্ছে।’
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে শহরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে বৃন্দাবন সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ‘কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বিক্ষোভ মিছিল, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসংযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও দুপুর ১২টার দিকে ৫টি ছাত্রী আবাসিক হলে গণসংযোগ চালান তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রীদের হলের গেটের সামনে গিয়ে আন্দোলন সম্পর্কে তাদের বলেছি, তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। শুরুতে নারী শিক্ষার্থী কম থাকলেও গণসংযোগের পর বৃদ্ধি পায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালের সামনে অবরোধ করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ৩টা থেকে একই মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) গেটের সামনে অবরোধ করেন ববি শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী গান-কবিতা আবৃত্তি করেন। সন্ধ্যার পর মহাসড়কে মশাল মিছিলের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন ববি শিক্ষার্থীরা। দিনব্যাপী অবরোধের কারণে ৫ কিলোমিটার মহাসড়ক জুড়ে সহস্রাধিক যানবাহন আটকে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ হয়।