শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
অর্থ সংকটে পড়েছে থার্ড টার্মিনাল
চলতি বছরে চালু হওয়া অনিশ্চিত * ১৫০ কোটি টাকা লোন চেয়ে বেবিচক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক
মুজিব মাসুদ
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থ সংকটে পড়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। এ কারণে শেষ মুহূর্তে এসে থমকে গেছে কাজের গতি। ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
আমদানিকৃত মালামাল পড়ে আছে বিভিন্ন বন্দরে। ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ করতে না পারায় এসব মালামাল খালাস করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সরঞ্জামগুলো চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন পোর্টে পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিল বকেয়া থাকায় ঠিকাদাররাও যথাসময়ে এগুলো নিচ্ছে না।
এ অবস্থায় আগামী অক্টোবরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। টার্মিনালটি কখন অপারেশনে যাবে এটি এখন আর কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ অবস্থায় যথাসময়ে অপারেশনে না গেলে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থ সংকট থেকে রেহাই পেতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। গত ১ জুলাই তিনি বেবিচক কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫০ কোটি টাকা লোন চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে তিনি বলেছেন, প্রকল্প কাজের স্বার্থে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে জিওবি খাতে বরাদ্দকৃত তহবিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত আয়কর ও ভ্যাট এবং আমদানিকৃত মালামালের কাস্টম ডিউটি পরিশোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরি প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ঋণ প্রদানের জন্য তিনি এই চিঠি দেন।
তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। বেশির ভাগ কাজ শেষ। ইতোমধ্যে থার্ড টার্মিনালের অপারেশনাল রেডিনেস অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সফারসংক্রান্ত প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
শিগগিরই মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। টার্মিনালের সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবারেশনের কাজ শেষ। ইতোমধ্যে একাধিকবার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। মোট কথা টার্মিনালটি এখন ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
তৃতীয় টার্মিনালের ডাবল এন্ট্রি ব্রিজসহ ১২টি বোর্ডিং গেট শুরুতে চালু হবে এবং পরে আরও ১৪টি বোর্ডিং সেতু স্থাপন করা হবে। ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়। সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অবশিষ্ট অর্থায়ন করেছে।
পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে তৃতীয় টার্মিনালে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের একটি ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ার পর ঢাকা বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এতে বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে ২৪ মিলিয়ন (পুরোনো টার্মিনালসহ), যা এখন আট মিলিয়ন এবং বিমানবন্দরটি প্রতিবছর পাঁচ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডেল করতে পারে।
এখানে ৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফ্ট পার্কিং এরিয়া এবং অ্যাপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দুটি ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমোডাল পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারে।
নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) ও একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এছাড়া আশকোনা হজক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন। তৃতীয় টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের অধীনে একটি জাপানি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১০৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট রয়েছে। একটি করিডরের মাধ্যমে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনালে যেতে এখন আর যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোর নানা অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।