মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত
খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার স্থাপন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার (হৃৎস্পন্দন তৈরির যন্ত্র) স্থাপন করা হয়েছে। রোববার বিকালে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ক্যাথল্যাবে এ যন্ত্র বসানো হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা একাধিকবার বোর্ড সভা করে পেসমেকার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, তার হৃদ্রোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল, একটা স্টেন্টও (রিং) লাগানো ছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ড তার হার্টে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে বিশেষায়িত কক্ষে (ক্যাথল্যাবে) নিয়ে পেসমেকার স্থাপন করা হয়।
এদিকে পেসমেকার স্থাপনের আগে দুপুরে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্রে পেসমেকার বসানোর বিষয়ে একমত হন। নানা পরীক্ষার পর রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে ক্যাথল্যাবে নেওয়া হয়। সন্ধ্যার আগেই পেসমেকার বসানোর কাজ শেষ করেন চিকিৎসকরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তবে তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানান মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক।
এদিকে শনিবার রাতে হঠাৎ খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে সাড়ে ৩টার দিকে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে দ্রুত ভর্তি করা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে। তাৎক্ষণিক তার ফুসফুসের পানি অপসারণ করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
এছাড়া লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ চিকিৎসক জোবাইদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ বোর্ডে যুক্ত আছেন। এর আগে চলতি বছরের ২ মে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুদিন চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।
এদিকে রাত ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা না গেলে, এই মুহূর্তে তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করলে তা বিব্রতকর হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। দুটি সারানো হয়েছে। আমি বারবার বলেছিলাম যে কোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। তার হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, গত শুক্রবার রাতে সেই অঘটনটিই ঘটতে যাচ্ছিল। সেই অবস্থায় তার চিকিৎসকেরা দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর এবং চিকিৎসা শুরু করেন। আজ প্রথমে অস্থায়ী পেসমেকার এবং পরবর্তীতে স্থায়ী পেসমেকার লাগানো হয়। এই মুহূর্তে তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছেন।