মেডিকেল ছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু
ধীরে নামছে বন্যার পানি বাড়ছে দুর্ভোগ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢল কমে আসায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ধীরগতিতে পানি নামতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে কিছু কিছু মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। আবার হাওড়াঞ্চলে পানি বাড়তে থাকায় নতুন করে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। তবে আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে ত্রাণের সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য দুর্ভোগের সীমা নেই। কোথাও ত্রাণবাহী নৌকা দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ। সরকারিভাবে শুকনো ও রান্না করা খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বন্যার্তরা। এদিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে নৌকা ডুবে রংপুর মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিল্টনসহ দুজন মারা গেছেন। সিলেট নগরীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে অভি নামে এক স্কুলছাত্র মারা গেছে। নেত্রকোনার কলমাকান্দায় গোসল করতে গিয়ে ডুবে রিফাত নামে এক শিশু মারা গেছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সিলেট : বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢল থামায় সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কোথাও বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি। নদ-নদীর পানিও বাড়েনি। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে টানা বর্ষণের পর শুক্রবার সকালে সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। বিভিন্ন এলাকায় রোদ ঝলমল করায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শুক্রবার বেলা ১টার দিকে বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে নগরীর মুক্তিরচক এলাকায় অভি (১৭) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজমুল হোসেন। সিলেট তালতলা ফায়ার সার্ভিসের লিডার শহিদুন ইসলাম জানান, পানিতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় স্কুলছাত্র। ফায়ার সার্ভিসের টিম স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে।
শুক্রবার সকালে নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, তোপখানা, জামতলাসহ আশপাশের এলাকায় বাসাবাড়ি ও রাস্তায় হাঁটুপানি দেখা গেছে। সরজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি কিছুটা কমেছে। তবে নতুন করে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের মধ্যে তারা চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে রয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তবে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানিয়েছেন, আকাশে আরও মেঘ রয়েছে। ফলে নতুন করে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। নগরীর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও পাহাড়ি ঢল থামায় পানি কমতে শুরু করেছে। একইভাবে সদর, ওসমানীনগর দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ওসমানীনগরে সর্বোচ্চ এক লাখ ৮৫ হাজার ও গোয়াইনঘাটে এক লাখ ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জে ৯৫ হাজার ৫০০, জৈন্তাপুরে ৯০ হাজার, জকিগঞ্জে ৮৫ হাজার ও সদরে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নগরীর ২৩ ওয়ার্ডে ৬০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় পানি কমছে। বৃষ্টিপাত না হলে পানি দ্রুত কমে যাবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার রাতে ছিল ২৭ হাজারের বেশি মানুষ। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ২৩ হাজারের কিছু বেশি অবস্থান করছিলেন। পানি কমতে থাকায় অনেকে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এটি চলমান থাকবে। বানভাসিদের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কোম্পানীগঞ্জের হাইটেক পার্ক ও জৈন্তাপুরের সারিঘাট এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি, মৎস্য ও পশুর খামার তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঝিনাইগাতীতে নৌকা ডুবে মেডিকেল ছাত্রসহ ২ জনের মৃত্যু : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ কন্দুলী গ্রামে ঢলের পানিতে নৌকা ডুবে রংপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্র মো. মোশারফ হোসেন মিল্টন ও তার বন্ধু আমানউল্লাহ মারা যান। মিল্টন (২১) ওই গ্রামের সুরহাব মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র। আমানউল্লাহ (২১) সাদামিয়ার ছেলে। তিনি শেরপুর তিনআনী কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও ৫ জন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঝিনাইগাতী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মিল্টন ঈদের ছুটিতে এসে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে ফুটবল খেলা শেষে শুক্রবার দুপুরে নৌকা দিয়ে বাড়ির পাশে নিচু জায়গায় জমে থাকা পাহাড়ি ঢলের পানি দেখতে যান। এ সময় নৌকা উলটে গেলে পানিতে ডুবে মিল্টন ও আমানউল্লাহ মারা যান।
ওসমানীনগর (সিলেট) : ওসমানীনগরের ৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাটবাজার ও দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের বাড়িঘর ও বহুতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। আর যারা কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছেন না, তারা ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। গত ২ দিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত না হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। সিলেট-২ আসনের (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) সংসদ-সদস্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ৩ দিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তিনি ত্রাণ বিতরণ করেন।
বিশ্বনাথ (সিলেট) : সুরমা নদীর বিশ্বনাথ অংশে একটি বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর উপজেলার লাখো মানুষ বন্যার কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন। এ বছরও একইভাবে সুরমা নদীর পানিতে বিশ্বনাথ উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সুরমা নদীর পারে মাত্র ৬ কিলোমটিার বেড়িবাঁধ হলে আকস্মিক বন্যা থেকে বিশ্বনাথবাসী রক্ষা পাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। খাজাঞ্চি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস বলেন, উপজেলার লাখ লাখ মানুষকে আকস্মিক বন্যা থেকে বাঁচাতে হলে সুরমা নদীর পারে বিশ্বনাথ অংশে একটি বেড়িবাঁধ অতি জরুরি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, উপজেলাবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সুরমা নদীর পারে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এছাড়াও বাসিয়া নদীর প্রবেশমুখ ও শেষ প্রান্তের মুখসহ মাকুন্দা নদী খনন এবং ভরাট হওয়া খালগুলো উদ্ধার করে খনন করা হবে বলে তিনি জানান।
ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) : ফেঞ্চুগঞ্জে চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-পানি সবখানেই। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর অথবা বুকসমান পানি। শুক্রবার সকালের দিকে উপজেলায় বন্যার পানি কম ছিল। কিন্তু বেলা গড়াতেই বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি বাড়তে দেখা যায়। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা সদরের বাজারে অবস্থিত প্রায় ৭০০টি দোকানের মধ্যে ৪০০টি দোকানে পানি ঢুকেছে। উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছে। উপজেলায় ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ : সুনামগঞ্জে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গত দুদিন ধরে বৃষ্টিপাত কমে রোদেলা আবহাওয়া বিরাজ করায় জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে রোদের দেখা পায় সুনামগঞ্জবাসী। উন্নতি ঘটতে থাকে বন্যা পরিস্থিতির। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারি বৃষ্টি না হলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পানি কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর, শাল্লা, ধর্মপাশা, শান্তিগঞ্জ এলাকার বন্যা পরিস্থিতি। দিন দিন আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে ভিড়। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট ও সুপেয় পানির অভাব। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনসহ যারা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তা খুবই কম। যে সমস্ত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেসব জায়গায় সবাই সহায়তা করছে। দুর্গম এলাকায় কেউ যাচ্ছে না। তারা আরও জানান, পানি কমলেও ভোগান্তি কমতে আরও সময় লাগবে। পৌর শহরের মুহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মান্নান মেইকার বলেন, নদীতে পানি কমেছে। তবে আমাদের বাড়িঘরে এখনো পানি। পানির জন্য ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া নেই, ঘুম নেই। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ নিয়ে চিন্তায় আছি। শহরের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, গত রাতেও বাসা ও বাসার সামনে পানি ছিল, আজ পানি নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় আতঙ্ক কমেছে। তবে বাসাবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা আরও কঠিন কাজ। কাজেই দুর্ভোগের সীমা নেই। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গত দুদিন ধরে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার সব নদ নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে খুব দ্রতই সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, শহরের অধিকাংশ সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে নেমে গেছে বন্যার পানি। তবে এখনো প্লাবিত আছে শহর ও গ্রামের নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, পুরো জেলা বন্যাকবলিত। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ছাতকে বানভাসীদের হাহাকার : সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা, চেলা, পিয়াইন ও বটের নদীর পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। বন্যাকবলিত এলাকায় চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। অধিকাংশ গ্রামে এখনো ঠিকমতো পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। সরকারিভাবে ১৬৫ টন চাল বরাদ্দ করা হলেও নগদ কোনো টাকা বরাদ্দ হয়নি বলে ইউএনও জানান। তবে জনপ্রতি?নি?ধিরা বলছেন, এখনো কোনো ত্রাণসামগ্রী তারা বরাদ্দ পাননি।
মদন (নেত্রকোনা) : ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার মদন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পানিবন্দি হয়েছে ৩৪টি গ্রামের ১ হাজার ৬২০টি পরিবার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।
কলমাকান্দায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : নেত্রকোনার কলমাকান্দায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে রিফাত হোসেন (১০) নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির সামনে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় সে। রিফাত উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের আবু কালামের ছেলে।
মৌলভীবাজারে হাওড়ে পানি বাড়ছে, নদীতে কমছে : মৌলভীবাজারে হাওড়ে পানি বাড়ছে। তবে নদীতে পানি কমা শুরু করেছে। জেলার হাওড় অঞ্চলে বন্যা দুর্গতদের সংখ্যাও বাড়ছে। এখন পর্যন্ত হাওড় পাড়ের দুর্গত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। বানভাসি মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ জেলায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওড়, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওড় ও বাইক্কাবিল রয়েছে। নদীর পানি হাওড়ে পতিত হওয়ায় ক্রমাগত হাওড়ের পানি বাড়ছে।
বড়লেখায় ত্রাণের জন্য হাহাকার : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ২৫টি থেকে ৩৩টিতে বৃদ্ধি করেছে। এতে ৬ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অপরদিকে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। শুক্রবার দুপুরে সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার রোকন উদ্দিন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রের দুর্গত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। কুলাউড়া-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েক স্পটে সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল করলেও হালকা যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্র্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ ১৬টি নদীর পানি প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে কাঁচা সড়ক। ডুবে গেছে বাদাম, পাটখেত, ভুট্টা, মরিচ ও শাকসবজি খেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল।
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) : ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদর থেকে ধলডাঙ্গাগামী রাস্তার দেবীবাড়ি নামক স্থানে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন শিলখুড়ি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা। কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টির কারণে বুধবার ওই স্থানে পাকা রাস্তার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ভেঙে পার্শ্ববর্তী ডোবায় পড়ে যায়। এর ফলে অটোরিকশা, গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : রৌমারী সদর, যাদুরচর, শৌলমারী বন্দবেড় ও চর শৌলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।