Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পুলিশে সোপর্দ অর্ধশত

আগাম জামিনে কঠোর হাইকোর্ট

Icon

আলমগীর হোসেন

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আগাম জামিনে কঠোর হাইকোর্ট

হাইকোর্ট

গুরুতর অপরাধের মামলায় আসামির আগাম জামিনে কঠোর হয়েছেন হাইকোর্ট। বেশকিছু মামলায় আসামিদের জামিন না দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তিন বছরে অন্তত অর্ধশত আসামির জামিন আবেদন খারিজ করে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, সোনা চোরাকারবারি, ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া, অর্থ আত্মসাৎ, হামলা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহকারী সামরিক সচিবের সই ও সিল জালিয়াতির মামলার আসামিও রয়েছেন। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইকোর্ট থেকে পুলিশে সোপর্দের পর আসামিদের প্রথমে সুপ্রিমকোর্ট পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। এরপর পার্শ্ববর্তী শাহবাগ থানা হেফাজতে নেওয়ার পর নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে কোনো কোনো আসামি পরবর্তী সময়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পান। 

বিচারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনেক সময় গুরুতর অপরাধে জড়িত মামলায় আসামিরা আগাম জামিন নিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ান, বাদীকে ভয়ভীতি দেখান। কোনো কোনো আসামি তদন্তকাজে প্রভাববিস্তার করেন। এসব অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে উচ্চ আদালত এসব আসামিকে জামিন না দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেন। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ এটিকে বিচারব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক বললেও আইনজীবীদের কেউ কেউ এতে দ্বিমত পোষণ করেছেন। 

আইনজীবীরা জানান, বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্রেফতারের আগেই শর্তসাপেক্ষে আদালত যে জামিন মঞ্জুর করে থাকেন, একে ‘আগাম জামিন’ বলা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে আগাম জামিনের কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। কিন্তু ৪৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালত যে কোনো ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুরের নির্দেশ দিতে পারেন’ শব্দগুলোর সম্প্রসারিত অর্থ দ্বারা অভিযুক্তকে ক্ষেত্রবিশেষ ‘আগাম জামিন’ দিয়ে থাকেন। 

যখন কোনো ব্যক্তির এ রকম আশঙ্কা থাকে যে কোনো অজামিনযোগ্য মামলায় ওই ব্যক্তি গ্রেফতার হতে পারেন, তখন তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কিছু বিষয় বিবেচনায় তার ‘আগাম জামিন’ মঞ্জুর করেন। আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালত প্রধানত যে বিষয়গুলো বিবেচনা করেন, তা হলো-১. অভিযোগের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা; ২. আবেদনকারী আগে কখনো আমলযোগ্য অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিল কি না; ৩. জামিন পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তি পলায়ন করবে কি না এবং ৪. অভিযুক্তকে গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে সমাজের চোখে হেয় করা হবে-এমন উদ্দেশ্য নিয়ে ওই মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে কি না।

২ জুন অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় জমিজমার বিরোধের জেরে হামলা মামলায় নোয়াখালীর দুই আসামিকে আগাম জামিন না দিয়ে পুলিশে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারা হলেন মামলার এক নম্বর আসামি গোলাম সারোয়ার (৪৫) ও দুই নম্বর আসামি মো. মফিজ মিয়া (৫৫)। পরে তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কের সূত্র ধরে মেয়েটির ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের স্থিরচিত্র ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার মনিয়ন্দ গ্রামের পলাশ মিয়ার (২৬) বিরুদ্ধে। আগাম জামিন চেয়ে আসামির করা আবেদন খারিজ করে ৯ মে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদন খারিজ করে আসামিকে পুলিশে দেন। 

অপহরণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় মো. মাহফুজ সিকদার (১৯) নামের এক আসামিকে আগাম জামিন না দিয়ে পুলিশে দেন হাইকোর্ট। আগাম জামিন চেয়ে আসামির করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৬ মে এ আদেশ দেন। মাহফুজকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ধর্ষণ, ধর্ষণের স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলার আসামি আমির হোসেনকে (৩৫) পুলিশে দেন হাইকোর্ট। আগাম জামিন চেয়ে আসামির করা আবেদন খারিজ করে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর এ আদেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহকারী সামরিক সচিবের সই ও সিল জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলায় মো. করিম মিয়া নামের এক আসামিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তার বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামে। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেন। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে করিম মিয়াকে জামিন না দিয়ে শাহবাগ থানা-পুলিশের হাতে সোপর্দের নির্দেশ দেন। 

হাজিরার পর সোনা চোরাকারবারি হিসাবে চিহ্নিত চট্টগ্রামের আবু আহমেদ ওরফে আবুকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ আদেশ দেন। ২০২২ সালের ২২ মে অর্থ আত্মসাতের মামলায় আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টিকে পুলিশে সোপর্দ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হেফাজতে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই চারজনকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ যুগান্তরকে বলেন, প্রথম কথা হলো-আদালত জামিন দিবেন, বা দিবেন না, তা সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ার। তবে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের বেশকিছু গাইডলাইন রয়েছে। বর্তমানে আগাম জামিনকে আমরা আইনজীবীরা এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, এখন স্বামী-স্ত্রীর মামলার আসামিরাও হাইকোর্টে আগাম জামিন চান। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো-আগাম জামিনের জন্য কেউ উচ্চ আদালতে এলে আদালত যদি মনে করেন যে, তাকে জামিন দেওয়া যায় না, এক্ষেত্রে তাকে পুলিশে না দিয়ে একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ দিতে পারেন। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন (বাপ্পী) বলেন, আদালত অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করেই একেক সময় একেক নির্দেশনা দেন। তারা স্বাধীনভাবে বিচারকাজ করেন। সবকিছু চিন্তাভাবনা করেই আগাম জামিনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেন। বিচারব্যবস্থার জন্য এটাও একটা ইতিবাচক দিক।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম