সেলফিন অ্যাপে দৈনিক ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যুগান্তর : ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা বর্তমানে কী কী সেবা পাচ্ছেন? আগামী দিনে আপনাদের সেবার পরিধি বৃদ্ধির কী কী পরিকল্পনা আছে?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : ইসলামী ব্যাংক সময় ও প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় রেখে ডিজিটাল পরিষেবা উন্নয়ন করে যাচ্ছে, যার সুবিধা গ্রাহক পাচ্ছেন। ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা এখন নানামুখী সুবিধা পাচ্ছেন। গ্রাহক যে কোনো স্থান থেকে ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা, ব্যালেন্স, স্টেটমেন্ট এবং লেনদেন সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে পারেন। এছাড়া তহবিল স্থানান্তর ও পরিষেবা বিল পরিশোধ করতে পারেন। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক অন্যদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোসহ এটিএম/সিআরএম থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারেন। গ্রাহক দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে চালু করা আমাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ বিগত চার বছরে বহুমুখী সুবিধার কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইনস্ট্যান্ট প্রিপেইড ভার্চুয়াল ভিসা/মাস্টার কার্ডযুক্ত স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপটির মাধ্যমে গ্রাহক যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট, কার্ড কিংবা এমক্যাশ, বিকাশ ও নগদের মতো এমএফএসএ তাৎক্ষণিক ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। যে কোন ব্যাংকের কার্ড, ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও এমক্যাশ থেকে সেলফিনে টাকা আনা যায়। সেলফিনের ক্যাশ-বাই-কোড ব্যবহার করে প্রাপকের অ্যাকাউন্ট ছাড়াই টাকা পাঠানো যায়। গ্রাহক নিজেই গোপন পিন দিয়ে বা ভিসা ডাইরেক্ট চ্যানেলে গ্রহণ করতে পারেন বিদেশি রেমিট্যান্স। ই-কমার্স পেমেন্ট (কিউ আর কোড/ অনলাইন গেটওয়ে), মোবাইল রিচার্জ, টিকিট কেনা ও স্কুল-কলেজ ফি প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস ইত্যাদি ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল (ডিপিডিসি, ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা, নেসকো, পল্লী বিদ্যুৎ প্রিপেইড, তিতাস ও জালালাবাদ) স্বাচ্ছন্দ্যে পরিশোধ করা যায়। খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডের বিল, এ-চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ বিভিন্ন সরকারি ফি পরিশোধ করা। ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা সহজে ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসেসিং ফি দিতে পারছেন। আগামী দিনে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা আরও ব্যাপক সুবিধা পাবেন। ডিজিটাল পরিষেবার বহুমুখী উপযোগিতাকে আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
যুগান্তর : বর্তমানে আপনাদের দৈনিক ও মাসিক লেনদেন কেমন? এই লেনদেন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেনে ইসলামী ব্যাংক অনন্য সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে এ ব্যাংকে দৈনিক প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার ডিজিটাল লেনদেন সম্পাদিত হয়, যা টাকার হিসাবে প্রায় ১১০৮ কোটি টাকা। শুধু সেলফিনের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার লেনদেন হয়, যা টাকার হিসাবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এছাড়া আই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হয় ৪৫ হাজার, যা টাকার হিসাবে প্রায় চারশ কোটি টাকার বেশি। এ লেনদেন বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমগুলোকে আমরা আরও গ্রাহকবান্ধব ও সময়োপযোগী করে তুলছি।
যুগান্তর : অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন কতটা নিরাপদ?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : আমাদের সেলফিন ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করা গ্রাহকদের জন্য শতভাগ নিরাপদ। অ্যাপটি সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিজস্ব তৈরি এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত একটি বহুমুখী চ্যানেল। সেলফিন অ্যাপ ব্যবহারে গ্রাহকের ডিজিটাল ঝুঁকিতে পড়ার সুযোগ নেই।
যুগান্তর : ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের চার্জ নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ রয়েছে। এই চার্জ বেশি মনে করেন কি?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : এমএফএস নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ থাকলেও ইসলামী ব্যাংকের অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং পরিষেবা ‘সেলফিন’-এর চার্জ নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ নেই। কারণ মোবাইলভিত্তিক লেনদেনের খরচের দিক থেকেও সেলফিন অন্য এমএফএস থেকে অনেকটা আলাদা। যেমন এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস)-এর লেনদেনের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয় তুলনামূলক অনেক বেশি। কিন্তু সেলফিনের ক্যাশ বাই কোডের মাধ্যমে টাকা পাঠালে হাজারে মাত্র ১ টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের যে কোনো এটিএম/ সিআরএম থেকে ক্যাশ উত্তোলন করা যায়। এমএফএস চ্যানেলে ক্যাশ আউট করতে গেলে অনেক ব্যয়বহুল। এমএফএস-এর মাধ্যমে ছোট ছোট ট্রানজেকশন যেমন ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, পিটুপি, মোবাইল রিচার্জ, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট-এ ধরনের লেনদেনগুলো করা যায়। পক্ষান্তরে সেলফিনের মাধ্যমে স্বল্প খরচে বৃহৎ ট্রানজেকশন যেমন দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ফান্ড ট্রান্সফার করা যায়। তেমনই সারা দেশে ২২০০ স্থানে স্থাপিত এটিএম বুথ থেকে সেলফিনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সুযোগ আছে।
যুগান্তর : আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ডিজিটাল ব্যাংকিং কতটা ভূমিকা রাখছে?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের কাছেও ডিজিটাল ব্যাংকিং এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যাংক থেকে দূরে থাকা জনগোষ্ঠী ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে ব্যক্তি হিসাব পরিচালনা করছেন। দ্রুত, নিরাপদ ও ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যাংকের বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
যুগান্তর : ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের সম্ভাবনা দেখছেন?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : ডিজিটাল ব্যাংকিং ভবিষ্যতে আরও উন্নততর ও গ্রাহকবান্ধব হয়ে উঠবে। ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে এবং মেশিন লার্নিং (এমএল) ব্যবহার করে গ্রাহকদের আচরণ এবং পছন্দগুলো বিশ্লেষণ করে তাদের জন্য আরও নিবিড় ব্যাংকিং পণ্য ও পরিষেবা তৈরি করা হবে। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল সহকারী এবং চ্যাটবটগুলো আরও বেশি পরিশীলিত হয়ে উঠবে, গ্রাহকদের ২৪/৭ সেবা প্রদান করবে। ডিজিটাল ব্যাংকিং আরও বেশি সহজ এবং একীভূত হয়ে উঠবে। অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা যেমন: বিমা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং ই-কমার্সের সঙ্গে সংহত হবে।
যুগান্তর : গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হবে না, বরং ব্যাংকই মানুষের হাতে হাতে ঘুরবে-এ সুবিধা নিশ্চিত করাতে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : এ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপগুলোকে আরও বেশি ব্যবহারকারীবান্ধব এবং বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ করে তুলছি। গ্রাহক এখন তাদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে, লেনদেন করতে, বিনিয়োগের জন্য আবেদন করতে এবং আরও অনেক ধরনের সেবার জন্য তাদের মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন। সেলফিন ব্যবহার করে এমটিডিআর ও এমএসএস থেকে কর্জ নেওয়া ও কর্জ পরিশোধ করা যাবে। সেলফিনে অটো পেমেন্ট সিস্টেম চালু হবে, যার মাধ্যমে গ্রাহক ইউটিলিটি বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদান করতে পারবেন। আমরা দেশব্যাপী এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছি। এটি গ্রাহকদের গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোয় অ্যাক্সেস করতে সাহায্য করবে। আমরা গ্রাহকদের তাদের ফোন ব্যবহার করে ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোয় অ্যাক্সেস করার জন্য টেলি-ব্যাংকিং পরিষেবা চালু করছি।