আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার বাংলাদেশ
ইশতিয়াক সজীব
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অতীতে বহুবার আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়েছে বাংলাদেশ। এবারের টি ২০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্ভাগ্যজনকভাবে চার রানে হেরে যাওয়া ম্যাচে আরেকবার তার পুনরাবৃত্তির পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আম্পায়ার ও আইসিসিকে ধুয়ে দিচ্ছেন সবাই। বাংলাদেশের এক সমর্থক লিখেছেন, ‘এ তো দিনের আলোয় ডাকাতি।’ সোমবার নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে লো স্কোরিং ম্যাচে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের চার রান হাতছাড়া হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি আইসিসিকে নিয়ম বদলানোর কথা ভাবতে বলেছেন তামিম ইকবাল, মরনে মরকেল, সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, ওয়াকার ইউনুস ও ওয়াসিম জাফরের মতো ক্রিকেটবোদ্ধারা।
গত পরশু রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ১১৩ রানের জবাবে জয়ের আশা জাগিয়েও বাংলাদেশ থামে ১০৯ রানে। বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশের ইনিংসের ১৭তম ওভারে। প্রোটিয়া পেসার ওটনিল বার্টম্যানের বল মাহমুদউল্লাহর পায়ে লেগে চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। বোলারের আবেদনে সাড়া দিয়ে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লু দেন আম্পায়ার। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিভিউ নিলে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল ছিল স্টাম্পের বাইরে। এরপর আম্পায়ার সিদ্ধান্ত পালটে মাহমুদউল্লাহকে নটআউট ঘোষণা করলেও আইসিসির প্রশ্নবিদ্ধ নিয়মের কারণে লেগ-বাই হিসাবে চার রান যোগ হয়নি বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। নিয়ম অনুযায়ী, আম্পায়ার আউট দেওয়ামাত্র ‘ডেড’ হয়ে যায় বল। সেই সিদ্ধান্ত রিভিউয়ে বদলে গেলেও কোনো রান যোগ হয় না। ওই চার রান বাংলাদেশ পেলে বদলে যেতে পারত ম্যাচের ফল। কারণ শেষ পর্যন্ত চার রানেই হেরেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করা তাওহিদ হৃদয়। রাখঢাক না রেখে সরাসরি তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আঁটসাঁট ম্যাচে সেটি আমাদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না। ওই চার রান পেলে ম্যাচের চেহারা ভিন্ন হতে পারত। আমার আর কিছু বলার নেই। নিয়ম তো আইসিসি করেছে। এটা আমাদের হাতে নেই। ...আম্পায়রাও মানুষ। ভুল হতেই পারে। কিন্তু ওই চার রান ছাড়াও দুটি ওয়াইড আমাদের দেওয়া হয়নি। এমনকি আমার আউটও আম্পায়ার্স কল ছিল। এমন উইকেটে একটি-দুটি রানও অনেক বড় ব্যাপার।’
ম্যাচ শেষে ক্রিকইনফোর এক অলআইন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ব্যাটিং গ্রেট তামিম ইকবাল বলেন, ‘ওই চার রান বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে দিতে পারত। আমি হয়তো সমর্থকদের মতো বলছি। তবে এটা আসলেই বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি নিয়ে ভেবে দেখা উচিত আইসিসির। এটা বদলাতে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না তাদের। আর আম্পায়ারদের উচিত দুই সেকেন্ড অপেক্ষা করে বল কোথায় যাচ্ছে, তা দেখে সিদ্ধান্ত জানানো।’
তামিমের সঙ্গে সহমত পোষণ করে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবক পেসার মরনে মরকেল বলেন, ‘আমিও মনে করি, এই নিয়ম বদলানো জরুরি। আশা করি, বিশ্বাকপের পর তেমন কিছু হবে।’ একই অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলেন, ‘আম্পায়ার চাইলে বল বাউন্ডারি লাইন অতিক্রম করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত জানালে চার রান পেত বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশের হারের পেছনে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় দায় দেখছেন পাকিস্তানের সাবেক পেসার ওয়াকার ইউনুস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘ডেড বলের বিতর্কিত নিয়ম নিয়ে ভাবা উচিত। এর কারণেই কম রানের থ্রিলার ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ।’
ভারতের সাবেক ব্যাটার ওয়াসিম জাফরও অভিন্ন সুরে বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহকে ভুল এলবিডব্লু দেওয়ার পর রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত বদলে গেলেও বাংলাদেশ পেল না প্রাপ্য চার রান। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল চার রানেই। বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য খারাপ লাগছে।’