আয়করে পরিবর্তন
দেরিতে রিটার্ন জমার জরিমানা কমেছে
সাদ্দাম হোসেন ইমরান
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের নিুসীমা বাড়ানো না হলেও আয়ের স্তর বাড়ানো হয়েছে। কমানো হয়েছে দেরিতে রিটার্ন জমার জরিমানা। এক ব্যক্তি কোম্পানির করপোরেট করও কমানো হয়েছে। এসব কারণে করদাতারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। অন্যদিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর, কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় জমি রেজিস্ট্রেশনের উৎসে কর কমানো হয়েছে। অর্থবিল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। পরবর্তী এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ করহার ধার্য আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে করহার ঠিক রেখে ৩ ও ৪ লাখ টাকার পরিবর্তে আয়ের স্তর বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪ ও ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এ পরিবর্তনের কারণে আয়কর আদায় কমতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি কেউ মাসে এক লাখ টাকা বেতন পান, সে হিসাবে তার বার্ষিক আয় ১২ লাখ টাকা। মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ কর রেয়াতযোগ্য বিধায় তাকে ৮ লাখ টাকার ওপর আয়কর দিতে হবে। বাজেটে স্তর পরিবর্তন করায় নতুন নিয়মে তাকে বছরে আয়কর দিতে হবে ৪০ হাজার টাকা। যেখানে পুরোনো নিয়মে তাকে কর দিতে হতো ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ একই আয়ের ওপর আড়াই হাজার টাকা আয়কর কম দিতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিডিপি) গবেষণাতেও একই তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডির হিসাবে, করের স্তর বাড়ানোয় ৪ লাখ টাকার স্ল্যাবে (রেয়াত বাদে আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা) থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে কর আদায় কমবে ১০ শতাংশ। একইভাবে পরবর্তী সব ধাপে কর আদায় কমবে যথাক্রমে ৮ শতাংশ (রেয়াত বাদে আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা), ৪ শতাংশ (রেয়াত বাদে আয় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা) এবং ১ শতাংশ (রেয়াত বাদে আয় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা)।
আয়কর আইনে বলা আছে, প্রত্যেক করদাতাকে কর দিবসের (৩০ নভেম্বর) মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। তা না হলে মাসিক ৪ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ দিতে হবে। পাশাপাশি সর্বশেষ প্রদেয় করের (আগের বছরের আয়) ওপর ১০ শতাংশ বা এক হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই অঙ্কের জরিমানা হবে। এছাড়া কর নির্ধারণ প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-করদাতাকে মোট আয়ের ওপর কর পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে করদাতা আয়কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত হবেন না এবং কর রেয়াতও পাবেন না। প্রস্তাবিত বাজেটে আইন সংশোধন করে বিলম্ব সুদ ২ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে জরিমানা হিসাবের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন বছরের যে কোনো সময় উৎসে কর হিসাবে কেটে নেওয়া কর, মোট কর থেকে বাদ দেওয়া হবে। এতে করদাতাদের আগের চেয়ে কম জরিমানা দিতে হবে।
এক ব্যক্তির কোম্পানি কর কমল : বাজেটে এক ব্যক্তির করপোরেট কর কমানো হয়েছে। করহার করা হয়েছে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, শর্ত পূরণ করতে পারলে করহার হবে ২০ শতাংশ। শর্ত হচ্ছে- ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে এবং কোম্পানি পরিচালনায় বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হলে তা ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে করতে হবে। এক ব্যক্তির কোম্পানি করহার কমানোয় ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত প্রোপাইটারশিপ ব্যবসা কোম্পানিতে রূপান্তর হতে পারে। কারণ প্রোপাইটারশিপ ব্যবসার আয়ের ওপর ব্যক্তিশ্রেণির হারে আয়কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ করা হয়েছে, আর এক ব্যক্তির কোম্পানি কর ২০ শতাংশ।
জমি রেজিস্ট্রি খরচ কমল : গাজীপুরের জয়দেবপুর, কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় জমি রেজিস্ট্রেশনের উৎসে কর কমানো হয়েছে। নতুন নিয়মে জয়দেবপুর, কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ এলাকায় ‘ক’ শ্রেণির জমি-প্লটের জন্য দলিলমূল্যের ৬ শতাংশ বা ২ লাখ, ‘খ’ শ্রেণির জমি-প্লটের জন্য দলিলমূল্যের ৬ শতাংশ বা ৮০ হাজার টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা ২ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা ৮০ হাজার টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা ২০ হাজার টাকা উৎসে কর দিতে হবে। আগে জয়দেবপুর ও রূপগঞ্জ এলাকার জন্য কাঠাপ্রতি দলিলমূল্যের ৮ শতাংশ অথবা ৪ লাখ টাকা এবং কালীগঞ্জ এলাকায় দলিলমূল্যের ৬ শতাংশ অথবা ৩ লাখ টাকা উৎসে কর ছিল। জমি রেজিস্ট্রির সময় এ উৎসে কর আদায় করা হয়।
‘ক’ শ্রেণির জমি হচ্ছে-রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা (জমি বা প্লট)। ‘খ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে এসব এলাকার (ক শ্রেণিতে উল্লিখিত এলাকা) আবাসিক প্লট ও জমি। শ্রেণি-‘গ’তে রাখা হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, কিন্তু ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকা। শ্রেণি-‘ঘ’তে আছে এসব স্থানের (গ শ্রেণিভুক্ত) আবাসিক এলাকা। শ্রেণি-‘ঙ’তে ক, খ, গ, ঘ শ্রেণি ব্যতীত অন্য সব এলাকা পড়েছে।
হেবা দলিলে উৎসে কর : প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-প্লট বা ফ্ল্যাট দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছে। অন্য দলিলের ন্যায় সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তান্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হবে। বর্তমানে হেবা দলিলে ২ হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা, স্ট্যাম্প শুল্ক ১০০০ টাকা, হলফনামা স্ট্যাম্প ৩০০ টাকা, কোর্ট ফি ১০ টাকা ইত্যাদি।