Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

প্রার্থীসংখ্যা বাড়লেও কমেছে ভোটের হার

Icon

কাজী জেবেল

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রার্থীসংখ্যা বাড়লেও কমেছে ভোটের হার

ধীরে ধীরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ওপর মানুষের আগ্রহের কমতি দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত উপজেলা

নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা বেড়েছে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য কমেছে। তবুও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। ৫ জুন শেষ হওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৬.১৩ শতাংশ। এই চার ধাপে ৪৪২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়।

এর মধ্যে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের ৬০টি উপজেলায় ভোট পড়ার হার ৩৪.৭৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ৪৪৫টি উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়ার হার ছিল ৪০.৪৯ শতাংশ। ওই হিসাবে এবার ভোটার উপস্থিতি কমেছে চার শতাংশের বেশি। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৪১.৮ শতাংশ। এর মাত্র চার মাস পর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়ল ৩৬.১৩ শতাংশ। জাতীয় সংসদের চেয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাড়ে ৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য বড় একটি রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) অংশ না নেওয়াকে অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

উপজেলা নির্বাচন জৌলুস হারিয়েছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ থাকার কথা, এর কোনো কিছুই উপজেলা নির্বাচনে দেখা যায়নি। আমার মতে, এ নির্বাচনটি হলো ভোটার নেই, বিরোধী দল নেই এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নেই। নির্বাচন যে নির্বাসনে চলে গেছে, এটা এরই প্রতিফলন। এর মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা।

অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার ফলে মানুষ নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। তাই এ ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আস্থাহীনতার কারণে বিরোধী দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমরা ভোটপাগল জাতি। এখন ভোটখরায় ভুগছি। আমরা ভোটপাগল থেকে ভোটখরার জাতিতে পরিণত হয়েছি। নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে।

তবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও সহিংসতা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা কম হওয়ায় সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা খুবই সন্তুষ্ট যে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে ইনসিডেন্ট, বিশেষ করে সহিংসতা হয়নি, সেটা একদিক থেকে স্যাটিসফাইং একটা ইস্যু। কিন্তু এগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ বা পলিটিক্যাল বিশ্লেষণটা আমরা এখন করতে পারব না।

২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্জন করে। এ বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এবং ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করে আসছে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো। দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা গড়ে দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে। অপরদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমেছে।

চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১৭ জন চেয়ারম্যান, ২৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ২৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে সর্বমোট ৬৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ ২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শুধু চেয়ারম্যানই নির্বাচিত হয়েছিলেন ১০৭ জন। এছাড়া এবারের নির্বাচনে সহিংসতাও তুলনামূলক কম হয়েছে। এ হিসাবেই উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের সাফল্য দেখছে ক্ষমতাসীন দল। যদিও এ নির্বাচনকে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে লড়াই হিসাবে বলে আসছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।

চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দলীয় মূল্যায়নের কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন সংঘাতপূর্ণ হবে-এমন আশঙ্কা করলেও বাস্তবে তেমনটা হয়নি। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল।

ফলাফল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ে এবার প্রার্থীসংখ্যা বেশি ছিল। এবার চার ধাপে ৪৭৯টি উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে নির্বাচন হয়েছে ৪৪২টিতে। সর্বশেষ ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৬০টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। তবে হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম, শিবচর, রাউজান, কুমিল্লা আদর্শ সদর ও ভান্ডারিয়া-এই ৮টি উপজেলার সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওইসব উপজেলায় ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। বাকি ৪৩৪টিতে ভোটগ্রহণ হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থগিত হওয়া ২০ উপজেলায় ৯ জুন ভোটগ্রহণ হবে। এবারের নির্বাচনে ১৮৩৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৫ হাজার ৩৭৬ জন প্রার্থী ছিলেন। এ হিসাবে প্রতিটি উপজেলায় তিন পদে গড়ে প্রায় ১২ জন লড়েছেন। অপরদিকে ২০১৯ সালের মার্চে চার ধাপে ৪৪৮টি উপজেলায় ভোট হয়। তখন তিন পদে প্রার্থী ছিলেন ৫২৪৮ জন, যা গড়ে ১০ শতাংশেরও কম। এ হিসাবে গত নির্বাচনের চেয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা প্রতি উপজেলায় গড়ে দুজন বেশি ছিল।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, প্রার্থীসংখ্যা বেশি হলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। প্রার্থীরাই তাদের জয়ের স্বার্থে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এ কারণে নির্বাচনে ভোটও বেশি পড়ে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। প্রতিটি ধাপেই বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইন দেখা যায়নি।

যদিও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ৩৬.১০, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ৩৭.৫৭, তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ৩৬.১০ এবং চতুর্থ ধাপে ৬০ উপজেলায় ৩৪.৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। গড় ভোট পড়ার হার ৩৬.১৩ শতাংশ। সর্বশেষ চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নওগাঁ সদরে সর্বনিম্ন ভোট পড়ে। সেখানে ভোট পড়ার হার ২০.৮৭ শতাংশ। ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৬৬ জন ভোটারের এই উপজেলায় ভোট পড়েছে ৭২ হাজার ৭০৩টি। অপরদিকে মনপুরা উপজেলায় সর্বোচ্চ ৬০.৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম