কলাপাড়ায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
উপকূলে নির্মাণ হবে টেকসই বেড়িবাঁধ
বিলাস দাস, পটুয়াখালী ও অমল মুখার্জী, কলাপাড়া
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের জলোচ্ছ্বাস খুবই অস্বাভাবিক। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব। আমরা চাই এ অঞ্চলের মানুষ যেন দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায়। বারবার যাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া যেসব রাস্তাঘাট ও বাঁধ ভেঙে গেছে বর্ষার আগেই সেগুলো সংস্কার করব। আমার ওপর এতটুকু ভরসা রাখবেন আপনারা। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ভাঙা ঘর নির্মাণ ও সংস্কার করতে পারেন আমি তার পূর্ণ ব্যবস্থা করব।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ মাঠে ঘূর্ণিঝড় রিমালকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ অঞ্চলে আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। উপকূলের মানুষ দুর্যোগের সময় যাতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বেড়িবাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র, সাইক্লোন শেল্টার করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবারকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। আগামীতে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনা খরচে দুই কাঠা জমির ওপরে দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর তৈরি করে দেব। উপকূলের ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছু করবে।
সরকারপ্রধান বলেন, অনেক লোকই তো ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তারা এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। তিনি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ প্রদানে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আজ দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। আমরা রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ নির্মাণ করে আপনাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা সব করে দিয়েছি। এখন ৬-৭ ঘণ্টার মধ্যেই সড়কপথে কলাপাড়া আসা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। যাতে বর্ষার আগেই এগুলো পুনর্নির্মাণ করে মানুষকে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে বাঁচাতে পারা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের সঙ্গে বসে হিসাব নিরূপণ করে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে সেগুলোও সংস্কারের পদক্ষেপ নেবেন। এছাড়া তরিতরকারি ও খেতের ফসল যা নষ্ট হয়েছে কৃষকরা যেন নতুন উদ্যমে আবার চাষাবাদ করতে পারেন সেজন্য বীজ ও সার প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়ার আশ্বাস দেন।
কলাপাড়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ এমপি, শাম্মি আহমেদ এমপি, হাফিজ মল্লিক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্নান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন-পটুয়াখালী-১ আসনের এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এসএম শাহাজাদা, পটুয়াখালী সাংরক্ষিত আসনের এমপি নাজনীন নাহার রশীদ, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, বাউফলের পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. সাইদুর রহমান।
রিমেলের ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে পটুয়াখালীর মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটায় রিমেলের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র পরিদর্শন করেছেন। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারটি যখন ধীরগতিতে অনেক নিচু দিয়ে উড়ছিল তখন তিনি রিমেল-আক্রান্ত দুটি এলাকা প্রত্যক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কলাপাড়ার খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করে।
বাংলাদেশ আইএমওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেরিন স্কলারশিপ চালু করতে চায়-প্রধানমন্ত্রী : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অরগানাইজেশনের (আইএমও) মাধ্যমে ছোট দ্বীপ ও আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে সামুদ্রিক খাতে বৃত্তি চালু করতে চায়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আইএমওর মহাসচিব আর্সেনিও অ্যান্তোনিও ডমিনগুয়েজ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আইএমওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে ১০টি ক্যাডেট প্রশিক্ষণ বৃত্তি চালু করতে চাই।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম বলেন, আইএমও মহাসচিব প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন। বৃত্তি প্রাপ্তদের বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আইএমও মহাসচিব নারী মেরিনার বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম. জিয়াউদ্দিন এবং মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখতে ফিনল্যান্ডের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর সমৃদ্ধির দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে মসৃণ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছ থেকে আরও কয়েক বছর জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখতে ফিনল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছেন। বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত কিম্মো লাহদেবির্তা সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম. নজরুল ইসলাম একথা বলেন। এ সময় অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ : বরিশাল ব্যুরো জানায়, রিমেলে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা বিতরণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর চরকাউয়া খেয়াঘাটে সহায়তা তুলে দেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত ১২০ মাঝি-মাল্লা এবং মুক্তিযোদ্ধা পার্কসংলগ্ন বরফকল এলাকার ৬০ পরিবারকে সহায়তা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার প্রমুখ।