Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কলাম্বিয়ার বিক্ষোভে পুলিশি অভিযান, বিপর্যস্ত ক্যাম্পাস

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কলাম্বিয়ার বিক্ষোভে পুলিশি অভিযান, বিপর্যস্ত ক্যাম্পাস

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গ্রেফতার অভিযানের পর শিক্ষার্থীরা জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছে।

সেখানকার সব ক্লাস বাতিল করা হয়েছে আর পরীক্ষা কবে হবে সেটাও ঠিক নেই। তবে এ অবস্থায়ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় ও ক্যালিফোর্নিয়ায় ইসরাইল-সমর্থকদের হামলার পর তারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এদিকে ইসরাইলের বিরোধিতা মানেই ইহুদিবিদ্বেষ-এমন একটি বিতর্কিত বিল পাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। খবর বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্সের।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টানিয়ে শিক্ষার্থীরা ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। তাদের এ বিক্ষোভ এখন ইহুদিপন্থি শিক্ষার্থী ও পুলিশের সহিংসতার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের পাশাপাশি ইসরাইলপন্থিরাও হামলা চালাচ্ছেন। এমন এক হামলার পর দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার রাতে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) ক্যাম্পাস।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যাম্পাসে প্রায় ৩২ হাজার স্নাতক শিক্ষার্থী রয়েছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে তাদের অনেকে ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ করে আসছেন। তাদের প্রতিহত করতে ইসরাইলে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছিলেন ইসরাইলপন্থি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ফিলিস্তিনিপন্থি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ইসরাইল সমর্থকরা।

তারা ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের দিকে আতশবাজি, পানির বোতল ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেন। লোহার পাইপ, লাঠিসোঁটা নিয়ে ফিলিস্তিনপন্থিদের তাবু ও প্ল্যাকার্ডেও ভাঙচুর করা হয়। এর একপর্যায়ে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। বুধবার ভোর নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ইউসিএলএ ক্যাম্পাস থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক সের্গিও ওলমস আলজাজিরাকে বলেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলায় তিনি কয়েকশ ইসরাইল-সমর্থককে অংশ নিতে দেখেছেন। বিক্ষোভকারীদের তারা লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়েছেন ও কয়েকটি ঘটনায় কাচের বোতলও ছুড়ে মেরেছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে আলজাজিরার সংবাদদাতা রব রেনল্ডস বলেন, সহিংসতার পরও ক্যাম্পাসে তাঁবুগুলো রয়েছে। ইসরাইলপন্থিদের হামলা সত্ত্বেও সেখানে রয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা পালিয়ে যাননি।

ইউসিএলএ উপাচার্য মেরি ওসাকো এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ সহিংসতা’ বলে উল্লেখ করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে বলেছে, ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে সহিংসতার একাধিক ঘটনার পর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ডেকেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে ১৮ এপ্রিল প্রথম প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারের পরও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁবু সরিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ বন্ধ করতে সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

তবে তা না মানায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা শুরু হয়। তারপরই সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন হ্যামিলটন হল দখলে নেন শিক্ষার্থীরা। গাজায় নিহত শিশু হিন্দ রজবের সম্মানে ওই ভবনে তারা ‘হিন্দস হল’ লেখা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।

২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা ভবনটি দখলে রেখে বিক্ষোভ করেন। পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। পুলিশকে ঠেকাতে ফটকের বাইরে বিক্ষোভকারীরা মানবঢাল তৈরি করেছিলেন। কয়েক ঘণ্টার অচলাবস্থার পর শেষ পর্যন্ত পুলিশ হ্যামিল্টন হলে ঢুকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। এ সময় পুর্লিশ ‘ফ্ল্যাশব্যাং’, রাবার বুলেট ব্যবহার করে ব্যারিকেড তুলে দেয় এবং অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।

শিক্ষার্থীরা বিবিসিকে বলেছেন, মঙ্গলবার বিক্ষোভ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসই এখন বিপর্যস্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আন্না ওআকস বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।’ এক রাতের নৈরাজ্য ও সংঘাতের পর বুধবার সকালে ক্যাম্পাস এলাকা ছিল অন্যরকম। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেছেন, ‘আমরা থামব না। আমরা বিশ্রামে যাব না।’

শিক্ষার্থীদের অনেকে জিনিসপত্র গুছিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন। এখনো যারা আছেন তারা বলছেন যে, তারা এখন অনেকটা অন্ধকারে আছেন। ডাইনিং সার্ভিস দ্রুতই চালু হবে কিনা সেটাও তাদের জানা নেই। এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের শিক্ষার্থী উইল পারকিনসন বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই যে, কী করতে হবে।’

বন্ধুর রুম থেকে তিনি দেখেছেন হ্যামিলটন হলে পুলিশের অভিযান। ওই অভিযানের সময় তিনি যেখানে ছিলেন সেই ভবন থেকে বের হতে পারেননি। পারকিনসন জানান, ইউনিভার্সিটি ক্যাফেটেরিয়াতে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার কারণে কলাম্বিয়া কর্তৃপক্ষ বাইরে খাওয়ার জন্য তাদের অর্থ দিয়েছে।

অনেকে আবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টিলের ব্যারিকেডের কাছে গিয়ে স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে সরে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন অনেকে।

এদিকে পুলিশি অভিযানের পর এক বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত শফিক বলছেন, ‘তাকে গভীর দুঃখ নিয়েই শিক্ষার্থী ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পুলিশকে নির্দেশ দিতে হয়েছে। এ ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে।’

নিউইয়র্কের মেয়র এরিক এডামস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জন চেল বলেন, নিউইয়র্ক সিটি কলেজ থেকে ১৭৩ জন ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ১১৯ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের পুলিশ জানিয়েছে, ডার্টসাউথ কলেজে অভিযান চালিয়ে তারা বিক্ষোভের তাঁবু গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এবং ৯০ জনকে গ্রেফতার করেছেন।

সবশেষ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক ছাড়াও আরও যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করার ঘটনা ঘটেছে, সেসবের মধ্যে রয়েছে নিউ অরলিন্সের টিউলেন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা ও ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন। নিউইয়র্কের সিটি কলেজ, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা চ্যাপেল হিল ও ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

গ্রেফতার শিক্ষার্থীসহ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অনেকে পরিণতি যা-ই হোক না কেন, তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। তবে পুলিশের অভিযানে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই তাঁবু থেকে চলে গেছেন। শুরুতে সেখানে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী থাকলেও এখন সেখানে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে আলজাজিরা উল্লেখ করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি বিল পাশ করা হয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার থাকা সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও বুধবার বিলটি পাশ করা হয়। এটি এখন অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠানো হবে। প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাশের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩২০ জন সদস্য। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৯১ জন।

সিনেটে পাশ হওয়ার পর বিলটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে এর মধ্য দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল হলোকস্ট রিমেমব্র্যান্স অ্যালায়েন্সের (আইএইচআরএ) দেওয়া ইহুদিবিদ্বেষের সংজ্ঞাকে বিধিবদ্ধ করা হবে। আইএইচআরএর সংজ্ঞাকে আইনে যুক্ত করা হলে ইহুদিবিদ্বেষের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ। আইএইচআরএর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ইসরাইল রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে কিছু বলাকেও ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে গণ্য করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম