Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

‘ঠেকায়ে কারও কাছে কিছু নেইনি, কাউরে উপকার করে যদি...’: এসআই ওবায়েদুর রহমান

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘ঠেকায়ে কারও কাছে কিছু নেইনি, কাউরে উপকার করে যদি...’: এসআই ওবায়েদুর রহমান

গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ বক্সে দায়িত্ব পালনকারী কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফুটপাতে চাঁদাবাজির এন্তার অভিযোগ। বিশেষ করে বক্সের ইনচার্জ এসআই ওবায়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। হকারদের ভাষ্য-এক জায়গায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের সুবাদে ব্যাপক চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন ওবায়েদুর। গুলিস্তানের বিস্তীর্ণ ফুটপাত ঘিরে অবৈধ আয়ের অবারিত সুযোগ থাকায় তিনি অন্যত্র বদলি হতে রাজি নন। ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি আহাদ বক্সে দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝে একবার অন্যত্র বদলি করা হলেও কিছুদিনের মধ্যে তিনি ফের আহাদ বক্সে ফিরে আসেন।

হকারদের অভিযোগ-গুলিস্তানের ফুটপাত সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এসআই ওবায়দুরের হাতে। তার ইচ্ছার বাইরে এলাকার ফুটপাতে একবেলা বসার ক্ষমতা কারও নেই। এমনকি ফুটপাতে চাঁদাবাজির লাইনম্যানও ঠিক করে দেন ওবায়দুর। কেউ অবাধ্য হলে তাকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। একপর্যায়ে বিনা নোটিশে তাকে ধরে নিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়।

হকারদের ভাষ্য-আহাদ বক্সের নামে তাদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা নেওয়া হয়। দোকান ভেদে চাঁদার অঙ্ক পঞ্চাশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত। কেউ টাকা না দিলে পুলিশ এসে তার চৌকি উলটে দেয়। মালামাল ফেলে দেয় রাস্তায়। এমন পুলিশি হয়রানির ভয়ে তটস্থ থাকেন সবাই। ফলে পুলিশের কাছে চাঁদার ভাগ চলে যায় স্বংয়ক্রিয় পদ্ধতিতে।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলেন লাইনম্যান বাবুল ওরফে সর্দার বাবুল। তিনি নিজেও হকার। এলাকায় গেঞ্জির দোকান রয়েছে তার।

চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার বিকালে সর্দার বাবুল যুগান্তরের কাছে অকপট স্বীকারোক্তি দেন। তার দাবি, এলাকায় টিকে থাকতে তিনি পুলিশের হয়ে চাঁদা তোলেন। তা না হলে তাকে এলাকা ছাড়া হতে হবে। বাবুল বলেন, তিনি স্থানীয় হকারদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা তোলেন। পরে পল্টন থানা, সার্জেন্ট আহাদ বক্স, টহল পুলিশ টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। টাকার ভাগ পান স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।

আহাদ বক্সের অনারবোর্ড অনুযায়ী এসআই ওবায়েদুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ মার্চ ইনচার্জ হিসাবে গুলিস্তানে পোস্টিং পান। টানা ৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু ২ বছর পরই ফের তিনি পুরোনো কর্মস্থলে ফেরেন। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি তিনি আহাদ বক্সে দায়িত্ব পালন করছেন।

হকারদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে এসআই ওবায়েদুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে হকি স্টেডিয়ামের দোতলায় যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘ সময় একই জাগায় কর্মরত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা ঊর্ধ্বতন স্যারদের বিষয়। সৈয়দ নুরুল স্যার (বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি) যখন মতিঝিলের ডিসি ছিলেন তখন আমি ছিলাম আল হেলাল বক্সে। সেখান থেকে স্যার আমাকে আহাদ বক্সে নিয়ে আসেন। নুরুল স্যারকে খালি আমার নামটা বলবেন। স্যার নিজে আমাকে ডাইক্যা এখানে বসাইছে।’ চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব মিথ্যা। ২ শতাংশ অভিযোগও সত্য নয়। এখানে ১০ হাজার লোকের কাছে আমার কথা জিজ্ঞেস করবেন, দেখবেন কেউ গালি দিতে পারবে না। হকারদের কেউ যদি অভিযোগ করে তবে সেটা তাদের মনগড়া অভিযোগ।

তাহলে কি গুলিস্তানের ফুটপাতে চাঁদাবাজি নেই এমন প্রশ্ন করলে ওবায়দুর বলেন, দ্যাখেন, এখানে রাজনৈতিক কিছু বিষয় আছে। পুলিশ চাইলেই এক রাতের মধ্যে আলাদিনের চেরাগের মতো সবকিছু ঠিক করে দেবে সেটা সম্ভব নয়। তবে বলতে পারি, এখানে এর আগেও দু-তিন জন ইনচার্জ এসেছেন তারা কেউই কিন্তু ৩-৪ মাসের বেশি টিকতে পারেনি। স্বেচ্ছাচারিতা করেছে। হ্যাঁ আমরা পুলিশ। আমাদের বিভিন্ন জায়গা মেইনটেইন করে চলতে হয়। দেখা গেছে কাউরে যদি উপকার করে...। কিন্তু আমি কাউরে ঠেকায়ে পঞ্চাশ পয়সা নিছি, আমার পুরো চাকরি জীবনে এমন নজির নেই।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম