Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এক্সিম-পদ্মা একীভূত

পদ্মা ব্যাংকে টাকা তোলার চাপ ৫০ ভাগ বেড়েছে

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পদ্মা ব্যাংকে টাকা তোলার চাপ ৫০ ভাগ বেড়েছে

পদ্মা ব্যাংক থেকে আমানত তোলার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। তবে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরের পর পদ্মার বিভিন্ন শাখায় টাকা তোলার এক ধরনের হিড়িক পড়েছে। দুই দিনেই টাকা তোলার চাপ আগের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ক্ষুদ্র আমানতকারীরা বেশি আসছেন। ছোট অঙ্কের টাকা দেওয়া হলেও যারা বেশি চাইছেন, তাদের পরে আসতে বলা হচ্ছে। সোমবার ও মঙ্গলবার ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় সরেজমিন আমানতকারীদের ভিড় দেখা যায়।

মঙ্গলবার পদ্মা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকেই গ্রাহকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আমানতকারীদের ভিড় ছিল বেশি। ছোট অঙ্কের কিছু টাকা দেওয়া হলেও বড় অঙ্কের জন্য সময় নিচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। ১ থেকে ৪ লাখ টাকা দিতে দেখা গেছে। এর বেশি যারা চাইছেন, তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। মঙ্গলবার টাকা তুলতে আসা শিমুল দম্পতি বলেন, ‘আমাদের অল্প টাকা, তাই তুলতে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে।’ একই সময়ে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা তোলার জন্য এসেছি, আমাকে দুই দিন পরে আসতে বলেছে।’

শুধু টাকা তুলতেই নয়, অনেকেই আসছেন খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। সোমবার কাঞ্চন নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করি পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে। মার্জারের খবর শোনার পর খোঁজ নিতে এসেছি। ব্যাংকাররা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন কোনো সমস্যা হবে না।’ অপর এক গ্রাহক বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা রাখলে কিছুটা আতঙ্ক তো থাকবেই। তবে যেহেতু এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এক হয়ে যাচ্ছে, তাই সমস্যা নাও হতে পারে। এখন দেখা যাক কী হয়।’

এদিকে হঠাৎ করেই টাকা তুলতে আসা আমানতকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে কর্মকর্তাদের ওপর। তারাও বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করছেন।

এ বিষয়ে মতিঝিল শাখা প্রধান মনির হোসেন বলেন, ‘স্বাভাবিকের তুলনায় আমাদের টাকা তোলার চাপ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি প্রেশার পড়েছে আমাদের ওপর। কারণ, মানুষের মাঝে একটা বিষয় কাজ করছে টাকা দেবে কি না। এটা স্বাভাবিক। আমরা গ্রাহকদের বোঝাচ্ছি। অনেকে বুঝছে, অনেকে বুঝছে না। যারা বুঝতে চাইছে না, তাদের টাকা দিয়ে দিচ্ছি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারেক রিয়াজ খান বলেন, বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকে ১ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে গত দুই বছরেই গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার। এছাড়া অনেক সংকটের মধ্যে তিন বছরে ৩৫০ কোটি টাকা আমানত পেয়েছি। তাতে বর্তমানে আমানতের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। খেলাপির ঋণ ৬৭ শতাংশ থেকে ৬১ দশমিক ৮৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। এছাড়া পাঁচটি ইসলামি উইন্ডো চালু করেছি। গত দুই বছরে দুটি পূর্ণাঙ্গ শাখা এবং ১৪টি উপশাখা বেড়েছে পদ্মা ব্যাংকের। গত পাঁচ বছরে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদের সহযোগিতা ও কর্মীদের দক্ষতার কারণে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ৮৭৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ৬০টি শাখা ও ৬টি উপশাখা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৮ মার্চ বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এর মাধ্যমে দুটি ব্যাংক এক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে আনুষ্ঠানিক আবেদনসহ কয়েক ধাপ পার হয়ে আদালতের সিদ্ধান্তে একীভূত হবে।

এমওইউ অনুষ্ঠান শেষে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনীতির নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করতে এগিয়ে এসেছে এক্সিম ব্যাংক। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব ছিল, তবে কোনো চাপ ছিল না। অর্থনীতির দৈন্যদশা কাটাতে সরকারের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। যার টাকা যেমন আছে, তেমনই থাকবে। একীভূতকরণ কার্যকরের পর পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংকে আমানত রাখতে চাইলে রাখবে, না রাখতে চাইলে নিয়ে চলে যাবে। এক্সিম ব্যাংক একটি শক্তিশালী ব্যাংক। তুলনামূলক দুর্বল পদ্মা ব্যাংককে তারা ‘টেক-কেয়ার’ করবে। পদ্মা ব্যাংকের কারও চাকরি যাবে না। শেয়ারহোল্ডারদেরও কারও ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংকের জাল পড়েছে পদ্মা ব্যাংকে। এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসবে। আপনারা দোয়া করবেন, আজকের আমাদের যে মিলন হয়ে গেল, এটা যেন সফল হয়।’

পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের এমওইউ সই হওয়া মানেই কাল একীভূত হয়ে যাবে তেমন নয়। এখন দুটি ব্যাংকে নিরীক্ষার মাধ্যমে সম্পদ মূল্যায়ন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব পর্যায়ে নীতি সহায়তা দেবে। উভয় ব্যাংকের স্বার্থ শতভাগ সংরক্ষিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, দুটি অডিট ফার্ম দিয়ে খেলাপি ঋণসহ পুরো দায়দেনা নিরূপণ করা হবে। এর মাধ্যমে পরিচালকদের দায়দেনাও উঠে আসবে। যত দ্রুত সম্ভব দুটি ব্যাংক একীভূতকরণ কার্যকর করা হবে। একীভূতকরণ কার্যকরের পর চাইলে আমানতকারী এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম