Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুগান্তরের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ঠিক রাখা জরুরি

পণ্য সরবরাহ ঠিক না থাকলে আইন প্রয়োগ করে লাভ নেই : ড. মসিউর রহমান * মজুতদারি করে সমস্যা তৈরি করলে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী * সরকার ছাড় দিলেও ভোক্তারা সুফল পাচ্ছে না : অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন 

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ঠিক রাখা জরুরি

যুগান্তরের পঁচিশ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বিশেষজ্ঞ আলোচক বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. এমকে মুজেরী, ক্যাব সভাপতি ড. গোলাম রহমান ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান -যুগান্তর

বর্তমানে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য দেশের মানুষের সবচেয়ে অস্বস্তির বিষয়। অর্থনীতিতেও বড় সমস্যা এটি। ইতোমধ্যে বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। রমজান সামনে রেখে শঙ্কা আরও বেড়েছে। এর পেছনে ডলারের উচ্চমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে ঘাটতি, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটসহ বেশকিছু কারণ রয়েছে। তবে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবার আগে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যুগান্তর আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, পণ্য সরবরাহ ঠিক না থাকলে আইন প্রয়োগ করে লাভ হবে না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেন, মজুতদারি করে মূল্যশৃঙ্খলে ব্যত্যয় ঘটালে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। 

সভাপতি ছিলেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তিনি বলেন, অসাধু সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও সাধারণ মানুষ এর সুবিধা পান না। যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, যুগান্তর শুধু সংবাদ প্রকাশ করে তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখছে না। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আজকের এ আয়োজন। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরী, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ এমরান মাস্টার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্স ফেলো ড. বদরুন নেছা আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগান্তরের উপসম্পাদক এহসানুল হক বাবু। 

যুগান্তরের ২৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের যুগ্মসম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, উপসম্পাদক আহমেদ দীপু, বিএম জাহাঙ্গীর ও দেওয়ান আসিফ রশীদ, প্রধান বার্তা-সম্পাদক আবদুর রহমান এবং প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম। 

ড. মসিউর রহমান বলেন, গত কয়েক দশকে বাজারকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাত প্রসারিত হয়েছে। সরকার একা সব দায়িত্ব নিতে পারে না। সবাই দায়িত্ব নিলে কাজটা সহজ হয়। সবাই শুল্ককর কমানোর কথা বলে। কিন্তু শুল্ক কমালে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বাজারের আচরণ বাজারকে করতে দিতে হবে। কিন্তু সেখানে আচরণ যাতে নিয়মমাফিক হয়, সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেখতে পারে। 

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য বা অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটির সংজ্ঞার কথা আসছে। এক্ষেত্রে যে পণ্য আমরা জীবনধারণের জন্য ব্যবহার করি, সেটিই প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন জরুরি। কারণ, সব সময় সবার খাদ্য ও পণ্যচাহিদা এক নয়। বাজারে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। কারণ, সরবরাহ নিশ্চিত না হলে যত আইন করা হোক, কোনো আইনই কার্যকর করা সম্ভব নয়। 

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন যুগান্তরের এ আয়োজন আমাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি বাজারে গিয়ে দেখেছি, চালের বস্তায় কোনো মার্কিং নেই। তাই এ ব্যাপারে বুধবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুসারে এক মাসের মধ্যে চালের প্রতিটি বস্তায় ধানের জাত ও নাম, উপজেলা ও জেলা এবং মিলগেটের মূল্যসহ সবকিছু উল্লেখ করতে হবে। ফলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় একটি সফলতা। 

তিনি বলেন, যারা নিয়ম মোতাবেক ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করে সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হবে না, সেই আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আমরা নীতি সহায়তা দিয়ে যাব। কিন্তু মজুতদারি করে মূল্যশৃঙ্খলে ব্যত্যয় ঘটালে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এটি অব্যাহত থাকবে। 

তিনি বলেন, আরও একটি বড় কাজ রয়েছে। কৃষিপর্যায়ে পণ্য উৎপাদনের খরচ, খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য ও ঢাকা মহানগরীর বাজারগুলোয় পাইকারি ও খুচরা মূল্য ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকবে। আমাদের আইনের কোনো অভাব নেই। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের আইন আছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনার আইন আছে। চালসংক্রান্ত আইন এবং আরও অনেক আইন আছে। আইনের কোনো অভাব নেই। এগুলো যথাযথ প্রয়োগ করা সম্ভব হলে বাজার শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবে। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তবাজার বলে কিছু নেই। এটি একটি ধারণা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে সব দেশেই কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকে। এটি প্রতিবন্ধকতা নয়, শৃঙ্খলা বলা উচিত। কারণ, মুক্তবাজার অর্থনীতির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে চাহিদা, সরবরাহ, কেউ কারসাজি বা মজুতদারি করবে না। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে যেভাবে বাজার পরিচালিত হয়, তাতে এসব বিষয় থাকে না। ফলে মুক্তবাজারের নামে বাজার অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতে দিতে পারি না। 

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তেলের দামের ব্যাপারে চীন-ভারতের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা পরাশক্তি। তাদের সঙ্গে তুলনা চলে না। কারণ, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিউবায় পাট রপ্তানি করেছিলেন। এরপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের কঠিন খাদ্য সংকটে ফেলা হয়েছিল। ফলে এখনো এরকম অবস্থায় আমরা যাইনি যে নিজেরা এরকম চ্যালেঞ্জ নিতে পারব। তার মতে, আমাদের রিজার্ভ চাপে আছে। কিন্তু তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের জন্য যথেষ্ট। 

গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে দেশের একশ্রেণির লোকের কিছু যায়-আসে না। আবার কিছু কম মানুষের দুবেলা খাওয়াদাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। পৃথিবীর অনেক দেশ বিভিন্নভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে যত সমস্যা আছে, যত বিষয় আছে, এটাকে কেন্দ্র করে একটি করে মন্ত্রণালয়ও আছে। আজকের যে সমস্যা আলোচনা করছি, দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি। 

এ সমস্যা সমাধান আসলে কোনো মন্ত্রণালয় করবে। মুদ্রাস্ফীতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয় না। এটা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। টাকা ছাপিয়ে যদি বাজারে ছাড়া হয় তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে-এমনটা ভাবার কোনো উপায় নেই। 

অথবা আর্থিক ব্যবস্থাপনা যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, মানুষ দুঃখে-কষ্টে আছে। আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানাই, তারা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন সরকার আসার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সমন্বিত কার্যক্রমের কথা বলেছেন। 

অর্থমন্ত্রী কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিয়ে সভাও করেছেন। কিন্তু সমন্বয়ে কারও না কারও দায়িত্ব থাকতে হবে।
তিনি জানান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আবার তিনি এও বলেছিলেন, আমি যদি আলু আমদানি করতে চাই, তাহলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। আমি যদি চাল আমদানির অনুমতি দিতে চাই, তাহলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। অর্থাৎ পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নেই। তাই আমি অনুভব করি, এখানে সমন্বয়ের খুব বেশি প্রয়োজন। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মন্দায় বিশ্বব্যাপী হু হু করে পণ্যের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশও এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি বেড়েছে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব বাজারে খুব বেশি পড়েনি। ফলে সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জনগণ। 

পণ্যের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে সরকার থেকে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে পণ্য আমদানির জন্য এলসি মার্জিন শিথিল, আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় ও স্থানীয় পর্যায়ের আমদানিতে ভ্যাট কমানো হয়। কিন্তু কোনো সময় ভোক্তারা এর প্রকৃত সুফল পান না। সরকার যে ছাড় দিচ্ছে এর সুফল ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। প্রথমে দেশের জনসংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করে মাথাপিছু চাহিদা ও খাদ্যশস্যের চাহিদার হিসাব বের করা জরুরি। 

এরপর মোট উৎপাদন থেকে নষ্ট ও ক্ষতির অংশ বাদ দিয়ে নিট খাদ্য ও চাহিদার হিসাব মেলাতে হবে। এছাড়া অসৎ মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। বাজারে পণ্যের জোগান ঠিক থাকলেও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী রাতারাতি পণ্য মজুত ও অতি মুনাফার মাধ্যমে মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে যুগান্তর এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। 

সাইফুল আলম বলেন, যুগান্তর বিশ্বাস করে শুধু সংবাদ প্রকাশই একটি গণমাধ্যমের দায়িত্ব নয়। দেশ, মাটি ও মানুষের প্রতিও গণমাধ্যমের দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। সে কারণেই যুগান্তর অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে, কালোবাজারির বিরুদ্ধে তথাকথিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সব সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। আজ যুগান্তর পঁচিশে পদার্পণে আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই-যুগান্তরের এই অঙ্গীকার আরও শক্তিশালীভাবে মানুষের সঙ্গে থাকব, জনগণের সঙ্গে থাকব, দেশ ও এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে থাকব। 

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, যুগান্তরের অর্থনৈতিক প্রতিবেদনগুলো আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আমরাও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্য দিয়ে যুগান্তরের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে পারি। 

মূল্যস্ফীতি এমন একটি জিনিস যার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে যেতে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি হলো পণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়া। আর অস্থিরতা হলো যখন দাম বাড়ে ও কমে তখনই অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে মূল্যস্ফীতি কমে গেলেও পণ্যের দাম নাও কমতে পারে। কারণ একটি বেইজ দাম থেকেই যায়। 

মূল্যস্ফীতি কমলেও ওই বেইজ দামের নিচে পণ্যমূল্য আর নামবে না। এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি মানুষের আয় বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে আছে। 
এই ঝুঁকি সামাল দিতে পারলে একদিকে যেমন আয় বাড়বে অন্যদিকে তেমন মূল্যস্ফীতিও কমবে। সরকার ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি করা হচ্ছে। ক্রেডিট আপডেট করা হয়েছে। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সুদের হার বাড়লে সেটি আবার উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়ে। 

মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করা দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নির্ভর করছে। আমদানি পণ্য এবং উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি বা উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ভেল্যু চেইন বলা হয়। এই চেইনের মধ্যে কোথাও কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। কোথাও যদি একটু লিক বা দুর্বলতা থাকে তাহলে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। 

পাশাপাশি আমাদের দেশে তথ্য-উপাত্তের বড় গরমিল আছে। যতদিন পর্যন্ত না এই তথ্যের গরমিল দূর করা যাবে ততদিন পর্যন্ত নীতিমালায় সামঞ্জস্য আনা যাবে না। ফলে নীতিনির্ধারণও সঠিক হবে না। এক্ষেত্রে আমদানি, উৎপাদন, চাহিদা, রপ্তানি ও মজুতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক তথ্য দরকার। 

এমকে মুজেরি বলেন, যুগান্তরের বিশেষত্ব হচ্ছে একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক রয়েছেন যারা সব সময় অর্থনৈতিক সংবাদ ও বিশ্লেষন নিয়ে কাজ করছেন। অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে আমার এটা ভালো লাগে। 
আজকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে বলতে চাই, মূল্যস্ফীতি ও অস্থিরতার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। 
মূল্যস্ফীতির কিছু কারণ থাকে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এসব পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কিন্তু অস্থিরতার কারণ কি? 

আমরা মূল্যস্ফীতির কারণে না গিয়ে দেখতে পারি কি কি কারণ অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং কিভাবে সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়। এক্ষেত্রে দুভাবে আমরা দেখতে পারি স্বল্পকালীন এবং কাঠামোগত বা দীর্ঘকালীন কারণ। এই স্বল্প ও দীর্ঘকালীন কারণের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো দরকার। তিনি আরও বলেন, যে কোনো পণ্যের মূল্য শৃঙ্খল রয়েছে। যেমন ধান বা চালের মধ্যে উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত শৃঙ্খল ধারণা থাকতে হবে। 

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, দেশে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন হয় ২০১২ সালে। এরপর ২০১৬ সালে গঠন করা হয় কমিশনটি। ২০১৮ সাল থেকে কার্যত পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করে এই কমিশন। পরে কোভিডের কারণে কিছুটা স্থবির থাকে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজির মাধ্যমে সুস্থ প্রতিযোগিতা নষ্ট করে দেয়। সেটি প্রতিরোধ করতেই কাজ করছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। 

ড. বদরুন নেছা আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খদ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পরিবার বর্তমানে উদ্বিগ্ন। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সীমিত বা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে এবং একই সঙ্গে জনসংখ্যার একটি অংশকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসতে বাধ্য করেছে। 

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শ্রেণি পর্যন্ত। পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের নানা পদক্ষেপ যেমন বাজার মনিটরিং, ওএমএস, টিবিসির কার্ড দেওয়া ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ইত্যাদি সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য নাকি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া দ্রব্যমূল্য-এ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত দাম একবার বাড়লে তা কমে আর আগের জায়গায় আসে না। 

মোহাম্মদ এমরান মাস্টার বলেন, আমদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এখন আর কোনো বিশেষ সংবাদ নয়। বরং এটি নিত্য সত্য। যা আজকের আলোচনার অতীব প্রাসঙ্গিক বিষয়। আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে চাহিদা এবং জোগানে ভারসাম্যহীনতা অন্যতম কারণ হলেও মূল্যবৃদ্ধির মূলে আরও বহুবিধ কারণ রয়েছে। 
এর মধ্যে সংরক্ষণ ও সরবরাহ বণ্টনে অব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিরিক্ত পরিবহণ ভাড়া, কর বৃদ্ধি, ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার, চাঁদাবাজি, চোরাচালানি অন্তর্ভুক্ত। 

এছাড়া কালো টাকার দৌরাত্ম্য, ঘুস, দুর্নীতিসহ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, করোনার প্রভাব, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, অসুস্থ প্রতিযোগিতাসহ সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবও বিদ্যমান।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম