উপজেলা ভোটেও নেই সমমনাদের আগ্রহ
বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে আন্দোলনে দৃষ্টি রাখছে সমমনা দল ও জোটগুলো
নূরে আলম জিকু
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঘনিয়ে আসছে উপজেলা নির্বাচনের দিনক্ষণ। এ নিয়ে বিরোধী শিবিরে নেই কোনো উত্তাপ। মুখ খুলছে না বিএনপি। সমমনা দলগুলোও নিশ্চুপ। ফলে অনেকটাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভোট বর্জনের পথে হাঁটছে সরকারবিরোধী মিত্ররা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেয়ে আন্দোলনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ কিংবা স্বাধীন নয়। তাদের (সরকার) ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা নেই। এজন্য ভোটার ও নেতাকর্মীরা আগ্রহ হারিয়েছেন। অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল তারা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে আন্দোলনে দৃষ্টি রাখছে সমমনা দল ও জোটগুলো। একই সঙ্গে বিএনপির ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই সামনের দিনের কর্মসূচি বাস্তাবায়নে জোর দিচ্ছেন নেতারা। কেউ কেউ সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি দল ও জোটকে সুসংগঠিত করতে মনোযোগ দিচ্ছেন। ভিন্ন কথাও বলছেন অনেকে। তাদের মতে, কৌশলগত কারণে সরকারবিরোধী দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলেও আন্দোলনে প্রভাব পড়বে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকাঠামো নির্ধারণী পর্যায়ে আন্দোলনের পথ সুগম করতে পারে। একদফার আন্দোলনে থাকা দলগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সমমনা দলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগরই মাঠপর্যায়ে পরিচিতি নেই। এজন্য আগ্রহ নেই নির্বাচনে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বিএনপির ওপরই ভরসা করছেন নেতারা। অনেকেই বলছেন, বিএনপিসহ সমমনাদের কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে দল কিংবা জোটগত না হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন অনেকেই। পদ-পদবির বাইরে থাকা নেতাদের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখাতে পারে দলগুলো। তবে এসব বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। একদলীয় শাসনতন্ত্র কায়েম করেছে। যে কারণে বিএনপিসহ আমরা যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছি। জাতীয় নির্বাচন বয়কট করেছি। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও কোনো আগ্রহ নেই।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আমরা পার্টিগতভাবে অংশ নেব না। গণতন্ত্র মঞ্চও পার্টিগতভাবে অংশগ্রহণ করবে না। এখন পর্যন্ত এই আলোচনা হয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে কিংবা আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে, তাদের ব্যাপারে আমরা কি পদক্ষেপ নেব এটা নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আমরা দলগতভাবে দলের প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করছি না।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা জোটগতভাবে দীর্ঘদিন ধরেই একদফার আন্দোলনে আছি। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। বরাবরের মতো বলছি-বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আত্মহত্যার শামিল।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই। তাদের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না তা ৭ জানুয়ারি আবারও প্রমাণ হয়েছে। কারণ ইসি, ডিসি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত। উপজেলা নির্বাচনেও সমমনা জোটের অংশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষ আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাব।
এদিকে, চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে যুগপৎ কর্মসূচির পাশাপাশি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সমমনা দলগুলো। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন দল ও জোট নেতারা। সংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিগগিরই বিভাগীয় সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। পর্যায়ক্রমে জেলা সমাবেশ শেষ করে ঢাকায় বড় সমাবেশ করবে মঞ্চ। বিভাগীয় সমাবেশের বিষয়টি আজ চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
অলি আহমেদ বলেন, আমাদের বিভিন্ন দলের সঙ্গে বিএনপির আলাপ-আলোচনা চলছে। কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবে। সবার অংশগ্রহণ হবে এই ধরনের কর্মসূচি আসবে। আগামী দিনের কর্মসূচি চূড়ান্ত হলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করব। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাব। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই মুহূর্তে আমাদের দলের বিস্তার ঘটাতে কাজ করছি। সদস্য সংখ্যা বাড়ানো ও দলকে শক্তিশালী করতে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।