Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুগান্তরকে ড. আব্দুল মঈন খান

সামনে অনেক জল গড়াবে কোথায় ঠেকবে বলা কঠিন

বিএনপি সঠিক পথেই আছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলবে * দলে কোনো নেতৃত্ব সংকট নেই, পুনর্গঠন চলমান প্রক্রিয়া

Icon

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সামনে অনেক জল গড়াবে কোথায় ঠেকবে বলা কঠিন

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

আগামীতে অনেক জল গড়াবে, যার ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালচিত্র কোথায় গিয়ে ঠেকবে এ মুহূর্তে তা বলা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেছেন, বিএনপি সঠিক পথেই আছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিএনপিসহ বিরোধীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ জানুয়ারির ভোট জনগণ বর্জন করেছে দাবি করে তিনি বলেন, এটি তাদের বড় সফলতা। আর আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। কর্মসূচিতে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে দলে কোনো নেতৃত্ব সংকট নেই। দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনও চলবে।

স্থায়ী কমিটির এ সিনিয়র নেতা মনে করেন, রাজনীতিতে যদি কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়, তখনই কিন্তু সংঘাত আসে। আজকে যে সংঘাতময় ও প্রতিহিংসার রাজনীতি সরকার সৃষ্টি করেছে, এটা সরকারকেই উদ্যোগী হয়ে দূর করতে হবে। যদি দেশ থেকে সংঘাত ও প্রতিহিংসার রাজনীতি দূর করতে না পারি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে না পারি তাহলে কিন্তু আলটিমেটলি এ সরকারকেই আঘাত হানবে। সরকার হয়তো মনে করছে, বন্দুকের মুখে এভাবে গায়ের জোরে দেশ শাসন করে যাবে, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। তা সম্ভব নয়। রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের সেবা করা, হৃদয় জয় করা। আওয়ামী লীগ সরকার সে ব্যাপারে আজকে নৈতিকভাবে সম্পূর্ণ পরাজিত হচ্ছে।

সোমবার গুলশানের বাসায় যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. মঈন খান।

সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, চলমান আন্দোলন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, নেতৃত্বসহ সার্বিক বিষয়ে খোলামেলা উত্তর দেন তিনি। বিরোধী দলের এ শীর্ষ নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বাংলাদেশের প্রতি নীতিনির্ধারণ করার সময় সব বিষয় সমন্বয় করেই করে থাকে। আর বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের যে নীতি তা সঠিকভাবে কাজ করছে, কি করছে না তা বসে এই মুহূর্তে বিবেচনা করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

যুগান্তর : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিএনপি একতরফা, ডামি ও অনিয়মের নির্বাচন বলছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট বর্জনের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়েছে বলে মনে করেন?

ড. মঈন খান : শুধু আমরা যারা বিরোধী দল তারা নয়, সারা দুনিয়া এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব শুধু মুখে কথা বলেনি, বিবৃতি দিয়ে বলেছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা জাতিসংঘ পর্যন্ত এ নির্বাচনের ওপর মতামত দিয়েছে। তার বাইরেও মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নির্বাচনের ওপর চোখ রেখেছে, বক্তব্য রেখেছে।

ডামি, সাজানো বা প্রহসনের নির্বাচন বলুন-এগুলো শুধু আমরা বলিনি, একথাগুলো কিন্তু সারা বিশ্ব বলেছে। ভোটের শতাংশের বিষয়টি কিন্তু সম্পূর্ণভাবে অর্থহীন। এ কারণে যে আজকে নির্বাচন কমিশন যে শতাংশটি দেখিয়েছে, এটা তো কমিশনের কোনো নির্ধারণের বিষয় ছিল না। এটা সরকার নির্ধারণ করেছে।

সরকার দেখাতে চেয়েছে এই ভুয়া নির্বাচনে এত শতাংশ ভোট পড়েছে। কমিশন সরকারের কথার প্রতিধ্বনিত করেছে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ, তথা ১২ কোটি ভোটার প্রায় সবাই এ নির্বাচন বর্জন করেছে। সেখানেই আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুগান্তর : ভোটের আগে হরতাল-অবরোধ, লিফলেট বিতরণ, অসহযোগ কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির অর্জন কি?

ড. মঈন খান : আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠার সহিংস রাজনীতি করে। কিন্তু বিএনপি এ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে মানুষের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেছি। বাংলাদেশের মানুষ না খেতে পেরে হয়তো তা সহ্য করবে, কিন্তু ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে ছিন্ন করবে এটা মেনে নেবে না।

ঠিক ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তাই হয়েছে। দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে নির্বাচন নামক প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সে কারণে আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তারা প্রহসনের ভোট বর্জন করেছে। আমরা দেখেছি কেন্দ্রের সামনে ফাঁকা। আমাদের কর্মসূচিগুলো ছিল মানুষের কাছে যাওয়া, মানুষকে সম্পৃক্ত করা। গণতন্ত্রহীনতার যে পরিস্থিতি তা মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া। মানুষ ভোট বর্জনের মাধ্যমে কথাগুলো সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেছে। সেখানেই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি সফল।

যুগান্তর : সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে বলে বিভিন্ন সময়ে দলের নেতারা বলেছেন। কিন্তু সরকার তো কোনো দাবিই মেনে নেয়নি, সেক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ কিনা?

ড. মঈন খান : সরকার দাবি মেনে নেয়নি এটা আমরা অস্বীকার করব না। সরকার দাবি মেনে নেয়নি কারণ তারা জনগণের সরকার নয়। আমরা যে দাবি জানিয়েছি, তা জনগণের দাবি। জনগণ গণতন্ত্র চায়। এই বাংলার মানুষ কোনোদিন অন্যায় আধিপত্য মেনে নেয়নি। সরকার গায়ের জোরে বন্দুক-বুলেট দিয়ে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ কিন্তু এটা অতীতেও মেনে নেয়নি, এখনও মেনে নেয়নি। তাই তাদের যে প্রতিবাদ তা নীরবে ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে দেখিয়েছে। সুতরাং বিএনপি সফল।

যুগান্তর : বিএনপি নেতারা বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রণযোগ্যতা পাবে না। কিন্তু ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন।

ড. মঈন খান : এটি সঠিক। আজকে যে বিশ্বের পরাশক্তি দেশ রয়েছে তারা দুটি ভাগে বিভক্ত। এখানে যে মেরুকরণ হয়েছে, একদিকে চীন-রাশিয়া এবং বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে ভারত। আর অন্যদিকে রয়েছে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব। কাজেই এখানে দুটি মেরুকরণের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক সরকারকে একটি পক্ষ সমর্থন দিয়েছে। তারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারও প্রকাশ্যে বলেছে তারা সমর্থন নিয়েছে। কাজেই এটা তো আজকে প্রকাশ্য আলোচনার বিষয়।

যুগান্তর : নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে-এমন কথাও দলের অনেকে বলেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি?

ড. মঈন খান : দেখুন নিষেধাজ্ঞা দেবে এটা আমি জানি না। তবে তারা তো নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে দিয়েছে। তারা প্রথমে কিছু কিছু ব্যক্তির ওপর দিয়েছিল। পরে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কিছু কিছু ব্যক্তির ওপর দিয়েছে। তবে এটা কোনো সঠিক বক্তব্য নয় যে, বিরোধী দল নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভর করে আন্দোলন করছে। আমরা আন্দোলন করছি দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আজকে বিশ্বে একটির সঙ্গে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে সেটা হলো অর্থনীতির বিষয়টি। ব্যবসা-বাণিজ্য এসব মিলে একটি দেশের নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে। পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্রের কথা বলেছে এটা সত্য। গণতন্ত্রের সঙ্গে তারা স্যাংশনকে সম্পর্কিত করেছে সেটাও সত্য। পাশাপাশি তাদের যে ব্যবসায়িক স্বার্থ এ দেশের সঙ্গে রয়েছে সেটাও তো অস্বীকার করার উপায় নেই। এই যে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বিষয়টি। এর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন রয়েছে। মোটামুটি বিশ্ববাজারে আমি বলব প্রথম স্থান না হলেও গার্মেন্ট এক্সপোর্টে পশ্চিমা বিশ্বে আমরা তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার অভাবের কারণে যদি এখানে গার্মেন্ট শিল্পে কোনো আঘাত আসে বা ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কর্মসংস্থানের অভাব হবে, অনেকে চাকরিচ্যুত হবেন তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি দেখুন এই বাংলাদেশ থেকে যে সুলভ মূল্যে পশ্চিমা বিশ্বের যে বাজার রয়েছে এবং পরিধেয় বস্ত্রের বিষয়। এটা এমন একটি বিষয় যেটা প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনে আসে। কোটি কোটি মানুষ কিন্তু বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বলুন বা ইউরোপের বাজার বলুন সেখানে যদি বাংলাদেশের সুলভ মূল্যের তৈরি এ পোশাক না থাকে তাহলে তা শুধু যে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে তা নয়, সেটি তো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে ক্রেতারা রয়েছেন তাদের ওপরও প্রভাব পড়বে। কাজেই এই বিষয়গুলো তো পশ্চিমারা একেবারে না দেখে থাকতে পারে না। তারা বাংলাদেশের প্রতি নীতিনির্ধারণ করার সময় সব বিষয় সমন্বয় করেই নীতিনির্ধারণ করে থাকে।

যুগান্তর : বিএনপির কোনো কূটনৈতিক ব্যর্থতা আছে কিনা?

ড. মঈন খান : বিএনপির কোনো ব্যর্থতা দেখছি না। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে ভুলে গিয়ে একটি অগণতান্ত্রিক একদলীয় সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। এটা কিন্তু ভারতের নীতিনির্ধারকদের মারাত্মক ব্যর্থতা। এটা তাদের বিবেচনা করা উচিত তারা কিভাবে এ ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসবে। দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক দুটি সরকারের মধ্যে হয় না, জনগণের মধ্যে যদি বন্ধুত্ব না থাকে তাহলে সরকারে সরকারে বন্ধুত্ব তাতে কোনো লাভ হয় না। বাস্তব একটি উদাহরণ দেই, একটা ক্রিকেট খেলা হয়েছে, সেখানে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের তরুণ সমাজ তারা বন্ধু রাষ্ট্রের পরাজয় দেখে প্রকাশ্যে রাজপথে উল্লাস করেছে। এটা তো আমাদের ব্যর্থতা নয়, এটা তো বন্ধু রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এই মুহূর্তে তাদের যে নীতি তা বাংলাদেশের বেলায় সঠিকভাবে কাজ করছে, কি করছে না তা অবিলম্বে বসে বিবেচনা করা উচিত। তারা হয়তো মনে করতে পারে সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে অনেক কিছু অর্জন করেছে। আসলে এটা তাদের কোনো অর্জন নয়, এটা তাদের চরম ব্যর্থতা।

যুগান্তর : নির্বাচনের পর আন্দোলনের গুরুত্ব কতটা আছে?

ড. মঈন খান : আন্দোলন তো নির্বাচনের জন্য নয়। আন্দোলন হচ্ছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া হিসাবে আমরা বলেছি, একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। কাজেই নির্বাচনটা ছিল একটি ‘মেকানিজম’, যার মাধ্যমে এ দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব। নির্বাচনের নামে একটা নাটক সরকার মঞ্চস্থ করেছে। সেটা আমরা ঠেকাতে পারিনি। তার অর্থ এই নয়, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যে সংগ্রামে নেমেছি, তা থেমে যাবে। সেই সংগ্রাম চলবেই। রাজপথে ছিলাম, আছি। রাজপথেই আন্দোলন করে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের মৌলিক অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে পারব।

যুগান্তর : এখন নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন আন্দোলন করে দাবি আদায় করা সহজ হবে না। আগের মতো এখন কর্মসূচিতে লোকসমাগম হবে বলে মনে করেন?

ড. মঈন খান : বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ আন্দোলন করছে না। রাষ্ট্রের যে কাঠামো এখন আছে, এর মধ্যে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা পরিবর্তন চাই। দেশের সাধারণ নিরীহ মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, ন্যায়বিচারের জায়গা নেই। এ পরিস্থিতিতে জনগণকে আশ্বাস দিচ্ছি, আশার বাণী শোনাচ্ছি আমরা আন্দোলন করে যাব। কিন্তু কোনো সংঘাতের রাজনীতিতে যাব না। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। তাদের শক্তিতেই আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।

যুগান্তর : কেউ কেউ দলের নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলছেন, আসলে কি আপনাদের নেতৃত্বের কোনো সংকট আছে?

ড. মঈন খান : আমি পালটা প্রশ্ন করতে চাই, দেখুন বিগত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। একদিনে প্রায় ৭ হাজার ইউনিয়নেও পদযাত্রা করেছি। যেটা বাংলাদেশে কেন, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ধরনের কর্মসূচি কেউ কখনও কোথাও দেখেছেন কিনা জানা নেই। কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে। সরকার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তা অতিক্রম করে মানুষ উপচে পড়েছে। কাজেই বিএনপিতে যদি সত্যিকার অর্থে নেতৃত্বের শূন্যতাই থাকত, তাহলে এ কর্মসূচিগুলো কোটি মানুষের পর্যায়ে চলে গিয়েছে, তা কি সম্ভব হতো?

আজকে আমরা জনগণকে সংঘবদ্ধ করেছি, তাদের নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি এটা কিভাবে সম্ভব হলো? আমাদের যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সেখানে কোথাও কোনো অভাব কেউ দেখেছে? বরং জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা দেশব্যাপী কোটি কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করেছি, কর্মসূচি করেছি। এ সফলতা প্রমাণ করেছে বিএনপির নেতৃত্বের কোনো সমস্যা নেই। বরং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী একটি দল।

যুগান্তর : এখন কি শুধু আন্দোলনের দিকেই মনোযোগ থাকবে, নাকি দলকেও পুনর্গঠনের কোনো চিন্তা আছে?

ড. মঈন খান : দলের পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং পুনর্গঠনের কাজ চলবে, আন্দোলনও চলবে।

যুগান্তর : নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হচ্ছে না, সামনে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?

ড. মঈন খান : আমাদের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের যে সর্বশেষ কাউন্সিলটি হয়েছে, তারপর আজকে দ্বিতীয় শেষ করে তৃতীয় একটি কাউন্সিলের সময় প্রায় চলে এসেছে। কিন্তু শেষ কাউন্সিলের উদাহরণ যদি দেই, সে সময় কাউন্সিলের আগের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত সরকার কাউন্সিলের স্থান দখল করে রেখেছিল। কাউন্সিল করতে দেবে না। পরে সেই দিনের কাউন্সিল সংক্ষিপ্ত করে সমাপ্ত করতে হয়েছিল।

এ পরিস্থিতিতে আমাদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অনেকভাবে ব্যাহত করে দিয়েছে। এজন্য করেছে যে, সরকার এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে সেখানে বিরোধী দলের কোনো ছাড় নেই। সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও আমরা দেশে গণতন্ত্রের কথা বলছি, নিজেদের দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা করতে আমরা বাধ্য। কাজেই সেটা আমরা কেন করব না। নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিল করে সংগঠনকে পুনর্গঠন করে-এটাই তো রাজনীতির মূল কথা। এটা তো করতে হবে।

যুগান্তর : দলের এই সময়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি কতটা অনুভব করছেন, তিনি সরাসরি থাকলে আন্দোলন আরও গতিশীল হতো কিনা?

ড. মঈন খান : আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অধীনে আমরা দেখেছি, আশির দশকে একটি স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছিলেন, সফল হয়েছিলেন। পরে যখন ৯১ সালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে জনগণের ভালোবাসায় প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভূষিত হন। এটি কি প্রমাণ করে না যে, তার নেতৃত্ব সেটি সফল ছিল। খালেদা জিয়া কিন্তু রাজনীতিতে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করেনননি। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন সামনের দরজা দিয়ে। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে।

যুগান্তর : আরপিও অনুযায়ী পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচনে না গেলে দলের নিবন্ধন বাতিলের সুযোগ আছে। তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কি করবে দল?

ড. মঈন খান : এরকম কোনো গ্যারান্টি নেই যে এই সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। আগামীতে অনেক জল গড়াবে। এবং এই জল গড়ানোর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক চালচিত্র সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই ভবিষ্যদ্বাণী আমি মনে করি না যে এই মুহূর্তে কেউ করতে পারে।

যুগান্তর : সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ড. মঈন খান : যুগান্তরকেও ধন্যবাদ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম