ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ডে ফাটল : বিপাকে বিমান
এ নিয়ে তিন দফায় বিমানের উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল ধরা পড়ে
মুজিব মাসুদ
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বহরে থাকা অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ডের ফাটল নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ নিয়ে তিন দফায় আকাশে বিমানের উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল ধরা পড়ে। এর মধ্যে দুই দফায় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার আর একবার বোয়িং ৭৩৭-এর উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ড ফেটে যায়। তবে বোয়িং-৭৩৭ এর ফাটল উইন্ডশিল্ডে ছিল না। উড়োজাহাজটির সাইড গ্লাসে ফাটল ধরা পড়েছিল। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশেষায়িত এ ধরনের উইন্ডশিল্ডে ফাটল ধরা পড়লেও তাতে বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই। ফাটল নিয়েও একটি ফ্লাইট দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারে। বাতাসের চাপে উইন্ডশিল্ড ফেটে গেলেও তা সহজে ভেঙে গুঁড়া হয়ে নিচে পড়ে যাবে না। সাধারণত ছাদ ঢালাইয়ের সময় যেভাবে লোহার রড ব্যবহার করা হয়, একইভাবে উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ড (কাচ) তৈরির সময়ও রডের মতো শিট ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের গ্লাসগুলো উইন্ডপ্রুফভাবে তৈরি করা হয়।
বিমানের পরিচালক প্রকৌশল ও মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট এয়ার কমোডর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, শনিবার বোয়িং-৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের (অচিন পাখি) উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেওয়ার পর তারা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রস্তুতকারক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িংকে জানিয়েছেন। বোয়িং টিম ও বিমানের প্রকৌশলীরা এ নিয়ে পুনাঙ্খুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। কিন্তু কেন ফাটল ধরল এ নিয়ে তারা কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এর আগেও ড্রিমলাইনারের অপর একটি এয়ারক্রাফটের উইন্ডশিল্ডের ফাটল নিয়েও বোয়িং টিম কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি। যদিও ওই ফাটলের পর বোয়িং তাদের সব ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ড পরিবর্তন করে ফেলেছিল। পরিচালক প্রকৌশল আরও বলেন, সাধারণত উড়োজাহাজ চলার সময় হিটিং সিস্টেমে (তাপমাত্রা) কোনো সমস্যা দেখা দিলে উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দিতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে হিটিং সিস্টেম ঠিক করা গেলে ফাটল দীর্ঘ হয় না। সর্বশেষ বিমানের ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ড ফাটলের পর তারা হিটিং সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেখানে কোনো সমস্যা ছিল না। এ কারণেই মূলত বিপাকে পড়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিমানের কেনা বোয়িং ড্রিমলাইনারের বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টের ওয়ারেন্টির মেয়াদ ছিল ৪ বছর। ইতোমধ্যে সবগুলো উড়োজাহাজের ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে উইন্ডশিল্ড পরিবর্তনের জন্য বিমানকে গুনতে হচ্ছে পুরো অর্থ। পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সোমবার সিঙ্গাপুর থেকে নতুন উইন্ডশিল্ড কিনে আনা হয়েছে। আজ সেটা লাগানো হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি উইন্ডশিল্ডের দাম এখন বাজারে ১ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
উল্লেখ্য, শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেওয়ায় শাহজালাল থেকে উড্ডয়নের দুই ঘণ্টা পর আবার ফিরে আসে উড়োজাহাজটি। এরপর উড়োজাহাজটিকে গ্রাউন্ডেট করে রাখা হয় শাহজালালের হ্যাঙ্গারে। ওই ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন ২৮৫ জন। পরে সৌদি আরবগামী ফ্লাইটটির যাত্রীদের রোববার অপর একটি উড়োজাহাজে দাম্মাম পাঠানো হয়েছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ড্রিমলাইনারের ফ্লাইট বিজি-৩৪৯ শনিবার বিকালে ২৮৫ জন যাত্রী নিয়ে দাম্মামের উদ্দেশে রওনা দেয়। দুই ঘণ্টা পর ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন উইন্ডশিল্ডের বামদিকে ফাটল দেখতে পান।
ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেন ঢাকা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিরাপদে শাহজালালে অবতরণ করেন। এরপর সব যাত্রীকে একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং রোববার বিমানের আরেকটি ফ্লাইটে তাদের দাম্মামে পাঠানো হয়েছে।
বিমানের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল সৃষ্টির ঘটনা সচরাচর ঘটে না। এক্ষেত্রে উইন্ডশিল্ডটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় কিংবা হিটিং সিস্টেমের কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, মাঝ আকাশে উইন্ডশিল্ড ফাটল অবশ্যই আতঙ্কের। তবে সংশ্লিষ্ট পাইলটকে ধন্যবাদ যে, তিনি সুন্দরভাবে পুরো পরিস্থিতি সামলেছেন এবং উড়োজাহাজটি নিয়ে নিরাপদে অবতরণ করেছেন।
এর আগে ২০২২ সালে বিমানের একটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেটিকে মালয়েশিয়ার অবতরণ করানো হয়। ওই ফ্লাইটেও ১৪৬ জন যাত্রী ছিলেন। ওই দুর্ঘটনার পর বিমানের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে নতুন উইন্ডশিল্ড লাগানোর পর তারপর ফ্লাইটটি ঢাকায় ফিরে আসে। এতে বিমানকে বিপুল অঙ্কের টাকা গুনতে হয়েছে।
বিমানের পরিচালক প্রকৌশলী বলেন, এর আগেও বোয়িংয়ের তৈরি আরও একাধিক ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ড ফাটলের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান। এসব বিষয় নিয়ে তিনি বোয়িংয়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন। এসব কথাবার্তায় তিনি ধারণা করছেন, বোয়িং টিমও এ নিয়ে চিন্তিত। তারা এসব ফাটল নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেছেন এবং আগের ড্রিমলাইনারগুলোর জন্য তৈরি করা উইন্ডশিল্ডগুলো পরিবর্তন করে নতুন উইন্ডশিল্ড তৈরি করেছেন। বোয়িংয়ের নতুন আপডেট ড্রিমলাইনার বা নতুন তৈরি করা এয়ারক্রাফটের উইন্ডশিল্ডে এখন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও বোয়িং বিমানকে নিশ্চিত করেছে।