সোনাইমুড়িতে পরাজিত প্রার্থীর এজেন্টকে গুলি করে হত্যা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট শাহেদুজ্জামান ওরফে পলাশকে (৩২) গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব মির্জানগর গ্রামে শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পলাশ ওই গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। নেত্রকোনায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নূরুল আমিন হত্যা মামলায় আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ইমামপুর ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নোয়াখালী, সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ : সোনাইমুড়ি থানার ওসি মোহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে ৯টায় পূর্ব মির্জানগর গ্রামের বাড়ির পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পলাশের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে লাশ উদ্ধার করা হয়। তার কপাল ও মুখে ধারালো অস্ত্র ও গুলির আঘাত দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওসি বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। এলাকায় তার মাছ ও মুরগির খামার আছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে অনেকের ঝামেলা ছিল। তবে তার পরিবারের কেউ স্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলতে পারছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পলাশ নোয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আতাউর রহমান ভূঁইয়ার এজেন্ট ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। তার বাড়িতে (ঘটনাস্থল) একটি ঘরের পাশাপাশি মুরগির খামার ছিল। এগুলো দেখাশোনা করতেন পলাশ। শনিবার বিকালে কিছু মুরগি বিক্রির পর খামারের দুই কর্মচারী সন্ধ্যায় চলে গেলে পলাশ একা খামারেই ছিলেন। রাত ৮টায় স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। খামার থেকে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে পরে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান। এরপর রাত ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন পলাশের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, পলাশ পূর্ব মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্ট ছিলেন। ভোটের দিন থেকে নৌকার লোকজন তাকে হুমকি দিচ্ছে। শনিবারও আমার সঙ্গে দেখা করে বলেছে, তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি বিষয়টি থানায় জানাতে বলেছি।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে খুনিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নৌকা প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থী ও নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। তিনি দাবি করেন, পরাজিত প্রার্থী তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে অপপ্রচারে নেমেছেন। তিনি বলেন, হত্যাকারী যে দলেরই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।
কুমিল্লা : দেবিদ্বার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি রোববার দুপুরে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেন তিনি। নৌকা পরাজিত হওয়ার পর থেকে অজ্ঞাতনামা কিছু লোক তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। শনিবার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা তালা ভেঙে ভেতরে ডুকে অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং নগদ টাকাসহ মালামাল লুট করে।
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) : গজারিয়ায় ইমামপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী নাজিমউদ্দিন বলেন, নির্বাচনে আমরা মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক ছিলাম। তিনি পরাজিত হওয়ায় বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। টানা দুইদিনের হামলায় অন্তত ২০/৩০ বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। আরেক ভুক্তভোগী জুয়েল প্রধান বলেন, নির্বাচনের পর থেকে বেছে বেছে নৌকা সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট হচ্ছে। ভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর অনুসারী নূরুল আমিন হত্যা মামলায় আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- আটপাড়া উপজেলার দেওগাঁও গ্রামের ইসলাম উদ্দিন ও রোকসানা বেগম। শনিবার গভীর রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রোববার সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আটপাড়া আমলি আদালতের বিচারক তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।