Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাজেট বাস্তবায়নসহ ৭ খাতে অগ্রাধিকার

নতুন অর্থমন্ত্রীর যাত্রা শুরু

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাজেট বাস্তবায়নসহ ৭ খাতে অগ্রাধিকার

অর্থবছর শেষ হতে এখনো ৬ মাস বাকি। এরই মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকৃত বাস্তবায়নের হার এখনো অনেক কম। গেল পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার ৩১ শতাংশ এবং এডিবি বাস্তবায়ন হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থনীতিকে টালমাটাল করে তুলছে লাগামহীন মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী জুনে ২ হাজার ১১ কোটি ডলারের রিজার্ভ গড়ে তুলতে হবে। এমন অসমাপ্ত কাজ নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এসব কাজ বাকি রেখে গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শুধু তাই নয়, খেলাপি ঋণ কমানোসহ বাকি রয়েছে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার। স্থিতিশীলতায় ফেরেনি এখনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামীকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করবেন নতুন অর্থমন্ত্রী।

এমন একটি সময় আবুল হাসান মাহমুদ আলী দায়িত্ব নিয়েছেন যখন বিশ্বব্যাপী বিরাজ করছে এক ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা দফায় দফায়। দেশে চলছে ডলারের সংকট, বাড়ছে খেলাপি ঋণের হার। অবশ্য এসবের জন্য অনেকটা দায়ী করা হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি পালন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

নতুন দায়িত্ব নিয়ে কোন কাজ অগ্রাধিকার দিতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি এ নিয়ে চলছে অর্থনৈতিক ঘরানায় আলোচনা।

শুক্রবার প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, বিদেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তবে প্রথমে তিনি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অবহিত হবেন। এরপর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবেন।

এর আগে মঙ্গলবার যুগান্তরের পক্ষ থেকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নতুন অর্থমন্ত্রী যিনি আসবেন তাকে কোন বিষয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত- জবাবে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অগ্রাধিকারের খাতায় থাকতে হবে রাজস্ব আহরণ। কারণ রাজস্ব আহরণ সেভাবে বাড়েনি। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি এগিয়ে নিতে এখনো কিছু জায়গা আবিষ্কারের বাকি সেগুলো করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কাজ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী আগামী মার্চে এক হাজার ৯২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা। গেল ডিসেম্বর নাগাদ ছিল এক হাজার ৭৭৮ মার্কিন ডলার। এটি অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে থাকছে। এজন্য রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সংকটের মুখে এরই মধ্যে বাজেট থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতোমধ্যে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে আগামী ৬ মাসে আরও ৫ থেকে ৬ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। এ বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে আনা এবং বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে। অর্থবছরের শুরুতে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ধরে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমে আসে। সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগে মনোযোগী হতে হবে নতুন অর্থমন্ত্রীকে।

এদিকে ঋণখেলাপি কমিয়ে ব্যাংকিং খাত সংস্কার বড় একটি অসমাপ্ত কাজ। সদ্য বিদায়ি অর্থমন্ত্রী প্রথমে বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কিন্তু পরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ছোট-বড় ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট আরও বেশি।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশাও বেশি। কারণ তিনি অভিজ্ঞ, একাধারে তিনি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং অর্থনীতির অধ্যাপকও। এখন খেলাপি ঋণ কমানোসহ ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করতে হবে। এর আগে একটি বড় আর্থিক খাতের দুর্নীতিকারীকে ধরে শাস্তির আওতায় এনে নতুন সরকার ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একটি বার্তা দিতে পারে। নতুন অর্থমন্ত্রীর অগ্রাধিকার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে কমাতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির দরকার আছে। মূল্যস্ফীতির কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার বাড়াতে হবে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স খাতে নজর দিয়ে আয় বাড়াতে হবে। এটি যোগ হবে রিজার্ভে। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল আদায় করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মুদ্রানীতি, সুদ হার ও মুদ্রা বিনিময় হারের সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে। এটি সবার কাছে পৌঁছানো এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা বিনিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থ পাচার প্রতিরোধ, ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, অফশোর ব্যাংক আইন-২০২৪, জাতীয় বিমানীতি-২০২৪, জাল নোট প্রতিরোধ আইন-২০২৪, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৪, বিনিময়যোগ্য দলিল আইন-২০২৪ চূড়ান্তকরণের কাজটি বাকি আছে। এসব কাজও বাস্তবায়ন করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম