বিজয়ের ৫২ বছর
মুক্ত জনপদে ওড়ে বাংলার পতাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। বীর মুক্তিসেনাদের কৌশল ও সাহসে রণাঙ্গনে অর্জিত হতে থাকে ছোট ছোট বিজয়।
বাঙালির অসীম সাহসের কাছে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা পরাজিত হতে থাকে বাংলার বিভিন্ন জনপদে। জলে, স্থলে, আকাশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানিরা দিশেহারা। অনেক জায়গায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে মিত্রবাহিনীর মাধ্যমে তাদের পুরো বাহিনীকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেওয়া হয় ।
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ছিল বুধবার। এদিন মুক্ত হয়-মৌলভীবাজার, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা। মুক্ত জনপদবাসী বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। এসব এলাকাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা।
অন্যদিকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এদিন এক বেতার ভাষণে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত ও ভুটানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে আবেদন জানান।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূর্বাঞ্চল আখাউড়া মুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হয়। আখাউড়া থেকে রেললাইন ও উজানী শহর অতিক্রম করে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই যৌথবাহিনী পৌঁছে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। ৮ ডিসেম্বর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল চাঁদপুর। ইতিহাস বলে, তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর।
যৌথবাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ সময় ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালান। দিশা না পেয়ে পাকিস্তানি ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যান।
প্রায় ৩৬ ঘণ্টা তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ এবং বিনা প্রতিরোধেই চাঁদপুর হানাদারমুক্ত হয়।
এদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গ্রাস থেকে কুমিল্লা মুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষদিকে ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় বরিশাল অঞ্চল। এদিন বরিশালকে হানাদারমুক্ত করে বিজয়ের পতাকা ওড়ান অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিকে মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তারা তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুরো পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। জেনারেল মানেকশর এ আহ্বান আকাশবাণী (বেতার) থেকে নানা ভাষায় বারবার প্রচার করা হয়। পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা নিজেদের অবস্থা পুরোপুরি বুঝতে না পেরে আত্মসমর্পণের দিকে না গিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সেনাসদস্যদের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরাজয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল রণাঙ্গনে থাকা পাকিস্তানি কমান্ড। কারণ প্রতিক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী।