এখনো সমঝোতার পথ খোলা : ফিরোজ রশীদ
একতরফা তফশিল দিয়ে কাবু করা যাবে না: মঈন খান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, এই মুহূর্তে একতরফা তফশিল ঘোষণা করলে আওয়ামী সরকার আবারও প্রমাণ করবে, তারা গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী নয়। বরং একদলীয় স্টিমরোলার চালিয়ে দেশ শাসন করতে চায়।
এদিকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেছেন, ইসি যেমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে কি করবে, কি সিদ্ধান্ত নেবে-সেটাও তাদের কাজ। অর্থাৎ যার যার চিন্তা তার তার। তিনি বলেন, সংকট উত্তরণে সমঝোতার বিকল্প নেই। এখনো সমঝোতার পথ খোলা আছে বলেই আমি মনে করি।
বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই নেতা এসব কথা বলেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নির্বাচন কমিশনাররা।
পরে বঙ্গভবনের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের একদফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়েছে দলটি। এজন্য নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো কথা না বলার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। তাই এ বিষয়ে আব্দুল মঈন খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থায়ী কমিটির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, এটা ২০১৪ বা ২০১৮ সাল নয়। ২০২৪-এ এসে এখন সরকার আর দেশে-বিদেশে কাউকে বোকা বানাতে পারছে না। কারণ তাদের ‘অলটারনেট গণতন্ত্র’র ফানুস ইতোমধ্যেই ফেটে গেছে। কাজেই বর্তমান সরকার নতুন করে আবার একদলীয় সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ভোটাধিকারসহ সব অধিকার হরণ করেই চলবে, এটা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ আর হতে দেবে না।’
আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, ‘সরকার ভাবছে বিরোধী দলকে তফশিলের ঘোষণা দিয়ে কাবু করবে। আসলে এটা একটি দুরাশামাত্র। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের তফশিল ঘোষণার উদাহরণ অনেক দেখেছি। তফশিল ঘোষণার পরে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে, সেই উদাহরণও অনেক দেখেছি। শুধু তাই নয়, তফশিল ঘোষণার পরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে-সে উদাহরণও আমরা দেখেছি। কাজেই তফশিল ঘোষণার হুমকি দিয়ে দেশের বিরোধী দলকে দূরে রেখে দেশের মানুষকে কাবু করতে পারবে না। মানুষ গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেমেছে, গণতন্ত্র আমরা অর্জন করব।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের মানুষ নিজের ইচ্ছায়, স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। সরকার তাদের নেমে আসতে বাধ্য করেছে। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি এবং আগামীতে তা চালিয়ে যাব। বিরোধী দলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়তো কিছু মানুষকে তারা বন্দি করতে পারবে, জেলে নিতে পারবে, হয়তো তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপির যে কোটি কোটি সদস্য ও কর্মী রয়েছে তাদের ঘরছাড়া করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ যারা আজকে জেগে উঠেছে তাদেরকে এ সরকার কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারবে না। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জয় হবেই।
যার যার চিন্তা তার তার-ফিরোজ রশীদ : জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। এখন নিজেরা আলোচনায় বসে ভোটের দিন-তারিখ ঘোষণা করবেন, এটি তাদের কাজ। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে কি করবে, কি সিদ্ধান্ত নেবে-সেটাও তাদের কাজ। অর্থাৎ যার যার চিন্তা তার তার।
তফশিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি কি করবে-এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার সিদ্ধান্ত পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপির ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তিনি পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়টি ঠিক করবেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো এখনো তাদের দাবিতে অনড়। তফশিল ঘোষণার পর তারা আন্দোলনের গতি আরও তীব্র করবে। এতে করে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠবে। সহিংসতা বাড়বে। মানুষের কষ্টও আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংকট উত্তরণে সমঝোতার বিকল্প নেই। এখনো সমঝোতার পথ খোলা আছে বলেই আমি মনে করি। কারণ আলাপ-আলোচনার পথ কখনও বন্ধ হয় না। তবে এই আলাপ-আলোচনা হবে কিনা, সমঝোতা হবে কিনা, তা উভয়পক্ষের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।