Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গত অর্থবছরে ২৪ বার সরেজমিন পরিদর্শন

ফাস্ট ট্র্যাকের প্রকল্প ঝুলে যাচ্ছে

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফাস্ট ট্র্যাকের প্রকল্প ঝুলে যাচ্ছে

নানা দিক থেকে তদারকির পরও ধীরগতি বিরাজ করছে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্র্যাকের মেগা ৮ প্রকল্পে। সংকটের মধ্যে সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার পরও শেষদিকে এসে কাজ ঝুলে যাচ্ছে।

শুরু থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ এবং গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ হয়েও হয়নি শেষ। মেট্রোরেল (আংশিক) উদ্বোধন হয়েছে। দ্বিতীয় অংশ উদ্বোধনের তারিখ পেছাচ্ছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

মেগা প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ২৪ বার এসব প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে আইএমইডি।

প্রকল্পগুলো হলো-পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু-মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এসব প্রকল্পের কাজে গতি আরও কমার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সামনের দিনগুলোয় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে সরকারের সব মহল থাকবে নির্বাচনমুখী। সেক্ষেত্রে তদারকিতেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। শুধু মেগা প্রকল্পই নয়, সব প্রকল্পই যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেটি আমাদের চাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কখনো কখনো দেরি হয়, ধীরগতিও হয়। কিন্তু ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দসহ যে কোনো সমস্যা হলেই তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ধীরগতি প্রত্যাশা করি না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন ও আমরা ব্যস্ত থাকব। কিন্তু যারা প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) বা শ্রমিক-কর্মচারী, তারা তো নির্বাচনের কাজে থাকবে না। অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে, তারা তাদের কাজ করবে। সুতরাং মনে করি না নির্বাচনের কারণে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে।

আইএমইডির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিনবার করে মোট ২৪ বার ফাস্ট ট্র্যাকের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব প্রকল্প মনিটরিং করছে আইএমইডি। সেই সঙ্গে প্রতিমাসে সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে ফলোআপ করা হচ্ছে।

সংস্থাটির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, নিয়মিত তদারকি করায় এখন আগের চেয়ে গতি বেড়েছে।

পদ্মা সেতু : সেতু উদ্বোধন হলেও প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলমান। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৫০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ : পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৩২২ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। আংশিক ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে।

মেট্রোরেল : মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী মাসের প্রথমদিকেই মতিঝিল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হবে। এর আগে ২০ অক্টোবর উদ্বোধনের কথা ছিল, সেটি হয়নি। পরে ২৯ অক্টোবর নির্ধারণ করা হলে সেটিও হচ্ছে না। এখন বলা হচ্ছে, নভেম্বরের প্রথমদিকে উদ্বোধন করা হবে।

শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৯৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ। এতে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৬ হাজার ২৮৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এখন আসছে ইউরেনিয়ামের চালান।

মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত কার্যক্রম : মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ৮২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬৭ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৯ শতাংশে।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৩৭ শতাংশে।

দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ : দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ। শিগগিরই ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম