ওয়ার্নার-মার্শের যুগল তাণ্ডবে জয় অস্ট্রেলিয়ার
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণেই বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার বেঙ্গালুরুর এম চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং-স্বর্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুগল তাণ্ডবে যেন সেই খেদ মেটালেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (১২৪ বলে ১৬৩) ও মিচেল মার্শ (১০৮ বলে ১২১)। তাদের সেঞ্চুরি ও ২৫৯ রানের রেকর্ডরাঙা উদ্বোধনী জুটিতে নয় উইকেটে ৩৬৭ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া।
শেষদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শাহিন আফ্রিদি ৫৪ রানে পাঁচ উইকেট নিলেও বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত ২৭ বল বাকি থাকতেই ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে ৬২ রানে হারে পাকিস্তান। শেষ ১২ ওভারে ১০৩ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি বাবর আজমের দল। উলটো মাত্র ৩৬ রানে হারায় শেষ ছয় উইকেট। জোড়া জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তানের এটি টানা দ্বিতীয় হার। বিপরীতে জোড়া হারের পর অস্ট্রেলিয়া জিতল টানা দুই ম্যাচ।
১৩৪ রানের উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের মতো ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি আবদুল্লাহ শফিক (৬৪) ও ইমাম-উল-হক (৭০)। দুজনকেই ফেরান মার্কাস স্টয়নিস। ১৪ বলে ১৮ রান করে অ্যাডাম জাম্পার শিকারে পরিণত হন অধিনায়ক বাবর আজম। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান (৪৬), সাউদ শাকিল (৩০) ও ইফতেখার আহমেদ (২৬) রানের চাকা সচল রাখলেও ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিতে পারেননি। ৫৩ রানে চার উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল বোলার স্পিনার জাম্পা। এছাড়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও স্টয়নিস নেন দুটি করে উইকেট।
এই বিশ্বকাপ পাকিস্তান শুরু করেছিল অন্যতম ফেভারিট হিসাবে। চার ম্যাচ পরেই নিজেদের সাদামাটা দল বানিয়ে ফেলেছে তারা। আগেরদিন রমিজ রাজা তার উত্তরসূরিদের উপদেশ দিয়েছিলেন টস জিতে ফিল্ডিং করার জন্য। পূর্বসূরির হিতোপদেশ মেনেই কি বাবর আজম মুদ্রা-ভাগ্যে সফলতা পেয়ে প্রসন্নচিত্তে অসিদের ব্যাটিংয়ে পাঠালেন? ফলাফল কী হলো? অস্ট্রেলিয়া ৩৬৭ রানের বোঝা চাপিয়ে দিল পাকিস্তানের ঘাড়ে। ৩৬৭ তা-ও কম। এক সময় তো মনে হয়েছিল, অসিদের পুঁজি ৪০০ ছাড়িয়ে যাবে।
ওয়ার্নার ও মার্শ উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৯ রান তুলে সেই আশা জাগিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে এটা সব দল মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। দুজনই শতকে সিক্ত হন। বিশ্বকাপে এই প্রথম এক ম্যাচে সেঞ্চুরি পেলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। মার্শ নিজের জন্মদিনে যেন নিজেকেই উপহার দেন অমূল্য সেঞ্চুরি। ভারতের বিরাট কোহলির পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসাবে ওয়ানডেতে নির্দিষ্ট কোনো দলের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন ওয়ার্নার। পিচ তখন ব্যাটারদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। নতুন বল ব্যাটে আসছিল অনুগত শিক্ষার্থীর মতো।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুতে ওয়ার্নার যখন মারমুখী হয়ে উঠেছেন, তখনই তার একেবারে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন উসামা মীর। পাকিস্তানকে তার চড়া মাশুল দিতে হয়। শাহিন আফ্রিদির সহায়তায় পাকিস্তান যদিও শেষেরদিকে লড়াই করেছে। বল যত পুরোনো হয়েছে, নতুন ব্যাটারদের পক্ষে তত কঠিন হয়ে ওঠে ছন্দ খুঁজে পাওয়া। সেই সুযোগে শাহিন আফ্রিদি বিশ্বকাপে শ্বশুর শহীদ আফ্রিদির পর পাকিস্তানের দ্বিতীয় বোলার হিসাবে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট তুলে নেন।
শেষ ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৭০ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট হারায়। তার মানে, বোলাররা উইকেট থেকে সহায়তা পেতে শুরু করেছিলেন। তার প্রমাণ, নিজের প্রথম চার ওভারে ৫৬ রান হজম করা হারিস রউফের প্রত্যাবর্তন হয় ভালোভাবে। আট ওভারে ৮৩ রানে তিন উইকেট নেন হারিস। তবে ক্ষতি যা হওয়ার, আগেই হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের। ওয়ার্নারের ১২৪ বলে ১৬৩ এবং মার্শের ১০৮ বলে ১২৩-এর পর অসিদের গর্ব করার মতো আর কিছু নেই। ১০ ও ১০৫ রানে ‘জীবন’ পাওয়া ওয়ার্নার মার্শকে সঙ্গে নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে ওডিআইতে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে অস্ট্রেলিয়া বিনা উইকেটে ৮২ রান তোলে।
(স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)