Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আইএমএফ ঋণশর্ত সংস্কার

নানামুখী চ্যালেঞ্জে সরকার

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নানামুখী চ্যালেঞ্জে সরকার

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে নানামুখী সংস্কার নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। চলমান বৈশ্বিক সংকট, যুদ্ধ, ডলার সংকট, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলা, মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যে কারণে ঋণ পেতে শর্তপূরণের অনেক সংস্কার করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব বাড়ানোসহ নয় খাতে সর্বোচ্চ নজরদারি বাড়াতে বলেছে আইএমএফ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

১৫ অক্টোবর মরক্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক বৈঠকে বলা হয়েছে আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে অনেক দেশ বৈশ্বিক ঋণ নিচ্ছে। এর অধিক সুদসহ ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপের মুখে পড়েছে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। এতে অনেক দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর ঋণ নীতি সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, আইএমএফ মিশন ৪-১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে। মূলত তাদের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার আগে শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে এসেছিল। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে। সূত্রগুলো জানায়, বৈঠককালে মোটা দাগে কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে বলেছে আইএমএফ। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকিং মোকাবিলায় খেলাপি ঋণ কমানো, রাজস্ব আয় ও কর জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি, সরকারি টাকা ব্যয়ের দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, ভর্তুকি যৌক্তিকরণ, রির্জাভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে নতুন ফরমুলা কার্যকর।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমার মনে হয় বাস্তবতার নিরিখে আইএমএফ প্রতিনিধিদল শর্তের ব্যাপারে আপাতত কিছু ছাড় দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য কিছু কমাবে। যেমন রিজার্ভ আমার ধারণা ২০ বিলিয়ন ডলার করবে, যেটা ২৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। রাজস্বের লক্ষ্য কিছু কমাবে। ডলারে বাজারভিত্তিক দর, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় এ বিষয়গুলো আছে। ডলার নিয়ে কিছু কাজ হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় হয়তো নির্বাচনের পর সরকার করবে, তখন দাম বাড়বে। তবে সমাঝোতার ক্ষেত্রগুলো জানতে হলে তাদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যেটা ওরা বোর্ডের কাছে জমা দেবে। এখন আইএফমএফের বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের ব্যাপারে। তবে সাধারণত রিভিউ মিশন তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সুপারিশ করে। ফলে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ বাংলাদেশ পাচ্ছে। কিন্তু এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেলেই পরের কিস্তিগুলোও পাওয়া যাবে। এখন তারা শর্তে কিছু ছাড় দিয়েছে। কিন্তু আইএমএফ তার শর্ত পূরণের অবস্থা দেখে পরের কিস্তিগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

সূত্রমতে, আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ সফরকালে একাধিকবার বৈঠক করেছে অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, অস্থিতিশীলত মুদ্রা বাজারসহ বৈশ্বিক সংকটের মুখে পড়ে চাপের মুখে আছে সামষ্টিক অর্থনীতি। যে কারণে শর্ত পূরণে যেসব সংস্কার নেওয়ার কথা ছিল সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইএমএফ তাদের মতামতে বলেছে, এমন একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে শর্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন। তবে শর্ত পালনে সিদ্ধান্ত নেওয়াকে তারা ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। সংস্থাটি মনে করছে দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় আনতে নিরপেক্ষ রাজস্ব নীতি দরকার। পাশাপাশি সংস্কারের দিকেও নজর দিতে হবে। আর্থিক নীতি কাঠামো আধুনিকায়ন, শাসন ব্যবস্থা উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।

এই মিশনে সবচেয়ে যে দুটি বিষয় আলোচিত হয়েছে তা হলো রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আর আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আরও অনেক শর্ত পূরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়, বিশেষ করে ঋণখেলাপির পরিমাণ কমানো, খেলাপি ঋণের পরিমাণ উলটো বেড়েছে।

বৈঠককালীন সংস্থাটি যেসব পরামর্শ দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানো। রাজস্ব আদায় বাড়ানো গেলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত স্থান তৈরি হবে। এছাড়া টেকসই পদ্ধতিতে কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য সমন্বিত কর নীতি এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছে সংস্থাটি। এছাড়া রিজার্ভ থাকতে হবে ২৬ বিলিন ডলার। এখন সেটি হয়তো ২০ বিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়ের শর্ত রয়েছে।

এছাড়া সরকারি টাকা ব্যয়ের দক্ষতা উন্নত করতে বলেছে আইএমএফ। তবে সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে টাকা খরচের গুণগতমান নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের। সেখানে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অর্থবছরের শেষ টাকা খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু শুরুতে অর্থ ব্যয় করা হয় ধীরগতিতে। অপর দিকে রাজস্ব আহরণ এবং অর্থ ব্যয়ে এ দুয়ের মধ্যে কোনো পরিকল্পনা থাকছে না। এতে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে। যা মোকাবিলা করতে গিয়ে অপরিকল্পিত ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারকে। আবার অপরিকল্পিত ঋণজনিত ব্যয়ের দায় ভার বহন করতে হয়। যা আর্থিক শৃঙ্খলাকে নষ্ট করে। এ পরিস্থিতি এড়াতে অর্থবছরের শুরুতে বাজেট বাস্তবায়নে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম