Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নদী রক্ষা কমিশনের অভিযোগ

নদী দখলের সহযোগিতায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়

স্বীকৃতি পেল ১০০৮ নদী * মেঘনায় বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে এক নারী মন্ত্রী সম্পৃক্ত * নৌসচিবের বিরুদ্ধে দখলদারদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নদী দখলের সহযোগিতায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়

দেশের নদ-নদী দখল-দূষণে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতার অভিযোগ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। একই সঙ্গে নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রমে সহযোগিতা না করা এবং এ প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে রাখারও অভিযোগ তার। তিনি জানান, নদী দখলদারদের সঙ্গে কিছু রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এনজিওকর্মী শক্ত অবস্থান নেন। রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী : সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

তবে নৌ মন্ত্রণালয় ও অধীন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নদী রক্ষা কমিশনের কোনো কাজ আমাদের কাছে পেন্ডিং নেই। তাদের কাজে অসহযোগিতা করা হয়েছে এমন বিষয় আমার জানা নেই। কমিশনের সব কাজে সহযোগিতা করে আসছি। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এখতিয়ার অনুযায়ী যা যা করতে পারে, তাই করছে। 

এ অনুষ্ঠানে সারা দেশের ১ হাজার ৮টি নদীর তালিকা এবং নদীর সংজ্ঞা প্রকাশ করা হয়। এসব নদীর দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার। ২৮০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে নদী রয়েছে ৫টি। ২০০ থেকে ২৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী আছে ৯টি। দেশে দীর্ঘতম নদী পদ্মা। এর দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার। ১২টি জেলায় এ নদী প্রবাহিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৩৬টি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মেঘনা নদী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইছামতি ও সাঙ্গু নদী। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, নদীর জেলাভিত্তিক তালিকা সংযোজন-বিয়োজন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। 

নদী দখল প্রসঙ্গে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, অনেক নদী পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। হায়েনার মতো নদীর ওপর হামলা চলছে। নদী দখল, বালু উত্তোলন ও দূষণের মাধ্যমে এ হামলা চলছে। এটা ক্রাইম। এই ক্রাইম বাড়ছে। 

তিনি বলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। সেখানে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০ কোটি ঘনমিটার বালু তোলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। কারও নাম উল্লেখ না করে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, হায়েনার দল থেকে নদীকে মুক্ত করতে পারছি না। ওই হায়েনার দলের পেছনে একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। 

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এর আগে মেঘনা থেকে এক ব্যক্তি ৬৬৮ কোটি সিএফটি বালু চুরি করেছেন। ওই বালুর আর্থিক মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাকে ২৬৭ কোটি টাকা রয়্যালটি দেওয়ার কথা বলে তার চুরিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ওই বালুসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীকে লিজের নামে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করছে নৌ মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। 

চট্টগ্রামে নদীর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে বেজা। সেখানে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কর্ণফুলী ড্রাই ডককে উচ্ছেদ করে নদীর জমি নদীকে ফিরিয়ে দিতে লিখিত নির্দেশ দিয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের রেফারেন্সে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের (মো. মোস্তফা কামাল) স্বাক্ষরে চিঠি দিয়ে বলেছে, এটা নদীর জমি নয়। কর্ণফুলীর অবস্থা ভয়াবহ। সেই দখলদারের পক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তি এবং কিছু কিছু এনজিওকর্মী শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছেন। 

তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলী নদী পরিবেশের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী। একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদী। ঢাকার চারপাশের নদীর বিষয়ে তিনি বলেন, এসব নদী দূষণমুক্ত করতে ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েও পাইনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব ছিল এসব নদী দূষণমুক্ত রাখা। তারা তা করেনি। তবে নদী দখলমুক্ত করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করায় নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

নৌমন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নদী রক্ষা কমিশনকে অকার্যকর করে রাখার অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের দক্ষ কর্মকর্তাদের স্ট্যান্ডরিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা এই নদ-নদী দখলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান নদীর অভিভাবক। 

আমার হাত-পা কেটে ফেলেছে। নদীর নামের তালিকা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশের জন্য টাকা চেয়েও পাইনি। বছরে আমার প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ কোটি টাকার কম বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকেও কম। নদী রক্ষা কমিশনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। অনেক চেয়েও এ প্রতিষ্ঠানের জন্য নৌযান পাইনি। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, সবার উচিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কাজে সহায়তা করা। অনুষ্ঠানে নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মনিরুজ্জামানও বক্তব্য দেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম