জনতার কাঠগড়ায় জনপ্রতিনিধি
পাঁচ প্রভাবশালীর নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতির সাম্রাজ্য
বরুড়ায় এমপি নজরুলের আশীর্বাদ: মামলা-হামলায় কোণঠাসা অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী
আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লার বরুড়ায় বিভিন্ন খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন ‘পাঁচ প্রভাবশালী’। স্থানীয় সংসদ-সদস্য (কুমিল্লা-৮) নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলের আশীর্বাদে তারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাস, ট্রাক, সিএনজি এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক জমি দখল, জমির ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি, চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ।
শুধু তাই নয়, উপজেলা ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তরে টেন্ডারবাজি এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ওই পাঁচ প্রভাবশালী এবং তাদের অনুসারীদের হাতে-এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত পাঁচ প্রভাবশালী হলেন-বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বখতিয়ার, প্যানেল মেয়র শাহীনুর আলম, কাউন্সিলর শাহজাহান মিয়া, ঠিকাদার সোহেল সামাদ, খোশবাস উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান।
স্থানীয়দের অভিযোগ-এসব অনিয়ম, দুর্নীতি করে দেখতে দেখতে চোখের সামনেই তারা এখন ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’। সংসদ-সদস্য (এমপি) নজরুল ওই পাঁচ প্রভাবশালীর মাধ্যমেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। উপজেলার শত শত ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ওই চক্রের কাছে পদে পদে নাজেহাল হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের গণজোয়ারে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। ২০১৪ সালে আসনটি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে এলাকার আধিপত্য ধরে রাখেন নজরুল।
পরে ২০১৮ সালে নিজস্ব তৎপরতায় জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি আবারও সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদ-সদস্যের শেল্টারে উপজেলার অনিয়ম-দুর্নীতির সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন পৌর মেয়র বকতার হোসেনসহ পাঁচ প্রভাবশালী।
বরুড়ায় এই চক্রের সাম্রাজ্য এবং অনিয়ম এখন সব মানুষের মুখে মুখে। অবৈধভাবে অর্থ রোজগার করতে গিয়ে দলের তৃণমূলসহ ত্যাগী নেতাকর্মীদের তোপের মুখেও পড়েছেন তারা। কিন্তু বেপরোয়া ওই সিন্ডিকেট কোনোভাবেই ক্ষান্ত হচ্ছে না-এমন মন্তব্য স্থানীয়দের।
তাদের মতে, এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত এসব প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে কারও মুখ খোলার সাহস নেই। তবে হালুয়া-রুটির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে একাধিক গ্রুপ প্রায়ই সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী মইনুল ইসলামকে পরাজিত করতে নিজের বিশ্বস্ত সেনাপতি ঠিকাদার সোহেল সামাদকে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী করেন এমপি নজরুল। কিন্তু কোনোভাবেই নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারেননি। এরপর থেকেই মূলত বরুড়ায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে সংসদ-সদস্য নজরুল নিজেকে অনেক প্রভাবশালী দাবি করে প্রায়ই বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তিনি তার নির্বাচনি এলাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও মেনে নেন না বলে দাম্ভিকতা করে এলাকায় বক্তব্য দিয়ে থাকেন। যার ফলে তার অনুসারীরাও একইভাবে এলাকায় দাম্ভিকতা করে কথা বলেন বলে অভিযোগ অনেকের।
এরই মধ্যে এমপি নজরুলের দাম্ভিকতার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যানপন্থি শত শত নেতাকর্মী উপজেলা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে এমপিকে প্রকাশ্যেই ভুয়া ভুয়া এবং রাজাকার, রাজাকার বলে স্লোগান দেয়।
এ সময় নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে উঠলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়দের দাবি-এমপির দাম্ভিকতা এবং নিযুক্ত অনুগতদের অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে তিনি দিন দিন দলে এবং এলাকায় কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বলেন, এমপি নজরুল সাহেব দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী এবং অনেক সুদ কারবারিকে স্বাবলম্বী করেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্র্যন্ত যারা বিএনপির রাজনীতি করেছে তাদের অনেকেই এখন এমপির হাত ধরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদ-পদবি লাভ করেছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। যারা ত্যাগী আওয়ামী লীগ তাদের তিনি মামলা-হামলা করে কোণঠাসা করে রেখেছেন। আমি নিজেও তিনটি মামলার আসামি হয়েছি। বরুড়ায় এমপির অনুসারীরাই দুর্নীতির সব সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।
উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ-সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন আমি অত্যন্ত পরিচ্ছন্নভাবে রাজনীতি করি। কখনো অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিই না। রাজনীতি করতে এসে বরুড়ার উন্নয়ন তথা জনসাধারণের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাইরে কোনো চিন্তাই করি না। কোনো সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দিই না। বরুড়া থেকে কোনোভাবেই অর্থকড়ি কামাই করি না। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করার জন্য কাউকে সুযোগ দিই না। আমার মতো স্বচ্ছ রাজনীতি করে এমন কজন আছে খুঁজে দেখেন?
তিনি বলেন, আমার কিছু অনুসারী আছে যারা মানুষের সঙ্গে কিছু উলটাপালটা করে থাকে। কাউন্সিলর শাহীনুরের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। কিন্তু আমি যত সম্ভব তাদের শাসনের মধ্যেই রাখি। তাছাড়া সারা দেশের চিত্রও তো একই। আমার নির্বাচনি এলাকাটা তো আর বাংলাদেশের বাইরে নয়। সব নেতাকর্মী তো আর সমান নয়। চেষ্টা করি তার মধ্যেও কিছু আছে ভেজাল করে ফেলে। এরপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
একটি বক্তব্যে আপনি বলেছেন, বরুড়ায় আপনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও মেনে নেন না? আপনাকে অনুসরণ করে আপনার অনুসারীরাও মাঠে এমন দম্ভোক্তি করেন-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এমপি নজরুল বলেন, কথার প্রসঙ্গে অনেকে অনেক কিছুই বলে ফেলে। কর্মীরা হয়তো একটু বাড়িয়ে বলে থাকে। আসলে প্রধানমন্ত্রীই আমাদের শেষ ঠিকানা। তিনিই আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এমপি হওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে এমপির ঘনিষ্ঠজনখ্যাত পাঁচ সদস্যের এই চক্রের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর এলাকার দেওড়া গ্রামের কোরবান মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট ভাই প্রবাসী আলম মোল্লার পাওনা টাকার একটা সালিশ করে রায়ের দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্যানেল মেয়র শাহীনুর আলম। আমরা এ টাকা চাইলে মামলার ভয় দেখায়। একই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু মিয়া বলেন, আমার মেয়ে সীমা আক্তারকে হেলথে চাকরি দেওয়ার নামে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে প্যানেল মেয়র শাহীনুর।
একই গ্রামের দুলাল ভৌমিক অভিযোগ করে বলেন, আমার পুত্রবধূ টুম্পা ভৌমিককে স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি দেওয়ার নামে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে শাহীনুর। একই গ্রামের হাজি আব্দুল করিম অভিযোগ করে বলেন, আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা হাওলাদ নিয়েছে শাহীনুর। এখন টাকা ফেরত চাইলে মামলা-হামলার হুমকি দেয়।
পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা সুকুমার পোদ্দার অভিযোগ করে বলেন, আমার পুত্রবধূ প্রিয়াংকা রানীকে প্রাইমারিতে চাকরি দেওয়ার নামে দুই লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে প্যানেল মেয়র। এমপি সিপাহশালাখ্যাত এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু লোকজন নানা ধরনের অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারীরা বলেন, শাহীনুর শুধু প্যানেল মেয়রই নন, তিনি এমপি সাহেবের ঘনিষ্ঠজন। এমপির ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারে না। এমপির ডানহাতখ্যাত এ প্যানেল মেয়রের টার্গেট এলাকার নিরীহ মানুষের অর্থকড়ি হাতিয়ে নেওয়া।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্যানেল মেয়র শাহীনুর আলম বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি, পক্ষে-বিপক্ষে লোকজন থাকতে পারে। আপনি সাংবাদিকতা করেন, আপনার পক্ষে-বিপক্ষে যেমন লোক আছে, আমারও তেমন পক্ষে-বিপক্ষে লোক আছে। তিনি বলেন, এলাকার লোকজনের সঙ্গে আমার কিছু লেনদেন আছে, আমি এসব পাওনাদারের টাকা দিয়ে দেব। আমার বিরুদ্ধে দয়া করে কোনো নিউজ কইরেন না ভাই। আপনার কাছে অনুরোধ।’
স্থানীয়রা জানান, পৌর মেয়র বকতার হোসেন বখতিয়ার পৌরসভার সব ধরনের টেন্ডারে অনিয়ম এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি গত দুই বছর আগে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই টেন্ডারবিহীন পৌরসভার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেন। পরে টেন্ডার দেখিয়ে দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হলেও পরে উপরমহলের চাপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়।
সূত্র জানায়, উদ্যোক্তার মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন তিনি (মেয়র)। এমনকি বহুতল অনেক ভবনের অনুমোদন দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এরই মাঝে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে ব্যাপক ঘাপলার সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। এছাড়া মেয়রের ভাই আক্তার হোসেন পৌর বাজারের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। আরেক ভাই জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণার মামলায় আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এমপির ঘনিষ্ঠজন এ মেয়র দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে এলাকায় বিচরণের ফলে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখায় না কেউ।
এলাকাবাসী জানান, মেয়র ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজাহান মিয়া এবং রিপন খন্দকারের মাধ্যমে কমমূল্যে বিভিন্ন স্ট্যান্ডের ইজারা দিয়ে বলাকা, সিএনজি এবং অটোরিকশা স্ট্যান্ড এবং জিপির নামে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এরই মাঝে জিপির নামে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন মিহির গ্রুপের সঙ্গে কাউন্সিলর শাহজাহান গ্রুপের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় একটি মামলা চলমান রয়েছে।
বরুড়া বাজারের বাসিন্দা মাসুম বলেন, মামলা চলমান অবস্থায় আমাদের ৬০ শতাংশ একটি প্লট এবং বাজারের রেনেসাঁ হসপিটালের পাশে ৭ শতাংশ মূল্যবান জায়গা জোরপূর্বক দখল করেছে শাহজাহান কাউন্সিলর। তিনি অনেক ক্ষমতাধর বলে আমরা আদালতের আশ্রয় ছাড়া কোনো উপায় পাচ্ছি না। তাছাড়া বাজারের হাজি আক্তার হোসেনের দোকানপাট ভাঙচুরসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কাউন্সিলর শাহজাহান মিয়া বলেন, রেনেসাঁ হসপিটালে পাশের জায়গাটি আমি কাগজে এবং দখলে মালিক। আমি কারও জায়গা দখল কিংবা দোকান ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নই। তাছাড়া রিপন খন্দকার পৌরসভা থেকে সিএনজি স্ট্যান্ডের ইজারা নিয়েছে। আমি ইজারা কিংবা চাঁদা আদায়ে সম্পৃক্ত নই।
জানতে চাইলে পৌর মেয়র বকতার হোসেন বখতিয়ার বলেন, আমি পরিচ্ছিন্নভাবে রাজনীতি এবং পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করি। জিপি, চাঁদাবাজি, স্ট্যান্ড পরিচালনা কিংবা টেন্ডার অনিয়মের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই আমি পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে প্রতিপক্ষের লোকজনের গাত্রদাহ হচ্ছে। তাই আমার বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
এছাড়া উপজেলার খোশবাস উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে রয়েছে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ। তিনি এমপির খুবই ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত। ওই চেয়ারম্যান জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা ধরনের নাগরিক সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া সালিশ-দরবারের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং সালিশে রায়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগসহ ভুক্তভোগীরা নানা অভিযোগ করেছেন এ জনপ্রতিনিধির নামে।
খোশবাস এলাকার নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার একটি মামলার সালিশ করে দুই লাখ ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন নাজমুল চেয়ারম্যান। ছয় বছর যাবৎ আমি আমার টাকা ফেরত পাচ্ছি না। ডিলার আলী হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নাজমুল চেয়ারম্যান ১০ টাকা কেজির চালে ব্যাপক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। ৫ মাস যাবৎ শত শত সুবিধাভোগীকে তিনি চাল দিচ্ছেন না। চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। তাছাড়া চেয়ারম্যানের শ্বশুর নুরুল ইসলাম চাল বিতরণে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। কার্ডে নয়, চেয়ারম্যানের শ্বশুর স্লিপে চাল বিতরণ করে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে এলাকার একটি প্রতিপক্ষ লেগে আছে। তারা নিয়মিত আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। আমি কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। যে নারী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তার ব্যাপারে এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন।
এমপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত সোহেল সামাদের নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ ঠিকাদারি কাজ। তিনি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। উপজেলা সদরে বসে সব ধরনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। বাইরের কোনো ঠিকাদার এই এলাকায় কাজ নিলে সোহেল সামাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করলেও এমপির ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এখনো তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের দাবি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে তিনি উলটো দলে এবং এলাকায় আরও প্রভাবশালী হয়েছেন। সম্প্রতি নলুয়া চাঁদপুর এলাকায় খাল খননের একটি কাজে বাধা দেয় সোহেল সামাদের অনুসারীরা। পরে ওই প্রকল্পের ঠিকাদার সোহেল সামাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ সম্পাদন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল জানান, ঠিকাদারি সব কাজের নিয়ন্ত্রণ সোহেল সামাদের হাতে। তাকে ‘ম্যানেজ’ না করে বাইরের কোনো ঠিকাদার বরুড়ায় এসে কাজ করতে পারে না। তিনি এমপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত।
ঠিকাদার সোহেল সামাদ বলেন, আমি একজন ঠিকাদার, কোনো টেন্ডারবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। যেখানে কাজ পাই সেখানেই কাজ করি। মানুষ না বুঝে অনেক সময় বিভিন্ন কাজে বাধা প্রদান করে, অনেকে না বুঝেই নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য এবং অভিযোগ করে। ২০১৮ সালে আমি স্বতন্ত্র থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। এখন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্বে আছি এবং এমপি নজরুল সাহেবের হাত ধরেই রাজনীতি করছি।