১৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা কর্মসূচি বিএনপির
প্রথম ধাপে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত; ঘোষণা সোমবার * আজ রংপুর বিভাগে তিন সংগঠনের রোডমার্চ, কাল রাজশাহীতে
তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের একদফা দাবিতে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বৃহত্তর জেলায় রোডমার্চ ও সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। যা সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে হরতাল বা অবরোধের মতো ভিন্ন নামে কর্মসূচির চিন্তা করছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। যা হবে সরকার পতনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি। এর মাধ্যমেই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে সব সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আজ রংপুর বিভাগ থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’। আগামীকাল হবে রাজশাহী বিভাগে। এ কর্মসূচিতেও দুই বিভাগের সব সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপি নেতারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই দাবি আদায় করতে চান তারা। এজন্য দুই ধাপে কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। প্রথম ধাপের কর্মসূচিতে সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করবেন। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। ১৯ বৃহত্তর জেলায় রোডমার্চ বা সমাবেশ কর্মসূচি করার কথা থাকলেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুই কর্মসূচি রেখেই তা চূড়ান্ত করেছেন। তবে জেলার সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে।
নেতারা মনে করেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবেও সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। তাই একদফা দাবি আদায়ে বিএনপিরও পেছনে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। এ আন্দোলন দলের নেতাকর্মীদের জন্য বাঁচামরার লড়াই। কারণ তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিভিন্ন মামলায় আগামী এক মাসে অন্তত ৫০ কেন্দ্রীয় নেতাকে সাজা দেওয়া হতে পারে।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে সোমবার বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দেশের মানুষকে নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এতে সবাই একত্রিত হয়েছে। সবাই একমত, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সংসদে আছে, জাতীয় পার্টির নেতারাও বলেছেন এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং আমরা একদফা দাবিতে আবারও কর্মসূচি দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদফা দাবিতে তরুণ যারা আছে, ভোট দিতে পারে না তারা একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শনিবার (আজ) রংপুর ও রোববার (কাল) রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ। আশা করছি এ কর্মসূচিতেও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ঢেউ নামবে।’
সূত্রমতে, বিএনপির টানা কর্মসূচি যুগপৎ হবে কিনা তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত নিতে দু-এক দিনের মধ্যে বৈঠকের কথা রয়েছে। এছাড়াও চলতি মাসের শেষের দিকে ঢাকায় ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের পৃথক সমাবেশ করার বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের পক্ষ থেকে বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
একদফা দাবিতে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ যৌথভাবে পালন করছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, শনিবার (আজ) রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার এবং রোববার (কাল) বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত প্রায় ১২৯ কিলোমিট দীর্ঘ তারুণ্যের রোডমার্চ হবে। রংপুর থেকে সকাল ১০টায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হবে। আর পরদিন সকাল ৯টায় বগুড়ার চার রাস্তার মোড় থেকে শুরু হবে রোডমার্চ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি রোডমার্চের শুরুতে এবং শেষে দুটি জনসভা হবে এবং পথে আরও বেশকিছু পথসভা হবে। বিগত দিনের মতো মোটরসাইকেলসহ যে যার মতো করে রোডমার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। আশা করি, দেশের যুব-তরুণ সমাজ ঘর থেকে বেরিয়ে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজপথের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটাবে।
নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার থাকার কারণে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে গুম করে দেওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটনের ব্যাপারে তিনি (আদিলুর রহমান খান) ছিলেন সোচ্চার। এ বিষয়গুলো তিনি সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরেছেন হিউম্যান রাইটস কমিশনে ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে। যে কারণেই আজ কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন পুরোপুরিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, দলীয়করণ হয়ে গেছে।’
মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগের মতো গ্রেফতারও শুরু হয়েছে। জামালপুরে ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিু আদালত কী করছেন, ৭ দিন পরপর হাজিরা দেওয়ার তারিখ দিচ্ছেন। একই ঘটনা ঢাকাতেও। এমন কোনো থানা নেই, যেখানে সাধারণ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। কয়েক বছর ধরে নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? দুঃখ হয়, উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করছেন। মিডিয়ার একটা বড় অংশ এটাকে ডিফাইন করে। আশ্চর্য হই, বিস্মিত হই, দুঃখিত হই, লজ্জিত হই।’
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, এখনো নির্বাচন সংক্রান্ত ৫০টি মামলা হাইকোর্টে আছে। যেগুলোর বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনসংক্রান্ত মামলার ফলাফল আদেশ হাইকোর্ট দেননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সামনের নির্বাচনে তারা আসছে। এই নির্বাচনে তখনই যাওয়া সম্ভব হবে, যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবারও বলেছেন তিনি অবাক হচ্ছেন নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আমরাও তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। কারণ, বাংলাদেশের সব মানুষ জানে নির্বাচন হয় না, ভোট হয় না। মানুষ ভোট দিতে পারে না। ২০১৪ সালে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। আর ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট হয়েছে। সব সময় মানুষকে বোকা বানানোর জন্য যা খুশি, তাই করছে সরকার।