Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি

রাজনৈতিক বিভক্তি বিচারালয়ে এলে মঙ্গলজনক হয় না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক বিভক্তি বিচারালয়ে এলে মঙ্গলজনক হয় না

রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয়ের দিকে এলে তা মঙ্গলজনক হয় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, আইনজীবীদের বিভক্তি, মতভেদ ও এর প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনা অনষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর তার বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেদিন অবকাশকালীন ছুটি রয়েছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার ছিল তার শেষ কর্মদিবস। তাই প্রথা অনুসারে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।

সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বিদায়ি প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে বক্তব্য দেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড। রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দক্ষতার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আর কোনো উপযুক্ত পরীক্ষা নেই। একটি জাতির জনগণ শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয়, তাহলে রাষ্ট্র ও নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ, সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বিচার প্রশাসনের সর্বোচ্চ আদালত। আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এর শ্রেষ্ঠত্বের ওপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক বিধান দিয়ে সব ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেওয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের ও রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের।

প্রধান বিচারপতি বলেন, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো আইনের শাসন। বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও বিচারকদের রাজনৈতিকভাবে বয়ে যাওয়া হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে সংবিধান, আইন, নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচারকার্য সমাধান করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণের অগাধ আস্থা স্থাপন করতে হবে ও থাকতে হবে। তা না হলে জনগণের অধিকার রক্ষা হবে না। স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে। না হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধু সংবিধানের ভেতরই আবদ্ধ থাকবে।

রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা যেন রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ত্যাগের কথা অন্তত ১০ বার ভাবেন। কারণ, তাদের সিদ্ধান্তে ভুল হলে শেষবিচারে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়, ক্ষতি হয় বিচার বিভাগের।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে মা-বাবার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এবং বিচার বিভাগ ছেড়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত তার মেয়ে, নাতি ও আত্মীয়স্বজনকেও কাঁদতে দেখা যায়।

বিএনপিপন্থি এবং বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের সংবর্ধনা বর্জন : প্রধান বিচারপতির বিদায়ি সংবর্ধনায় অংশ না নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিদায়ি সংবর্ধনা বর্জন সভা করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভার ব্যানারে লেখা ছিল ‘বিচার বিভাগকে আওয়ামী বাকশালীকরণ ও সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা এবং বারের ভোট ডাকাত-অবৈধ দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিবাদে প্রধান বিচারপতির বিদায়ি সংবর্ধনা বর্জন’।

এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সমর্থনে গঠিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল। সঞ্চালনা করেন ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সুপ্রিমকোর্ট ইউনিটের যুগ্ম কনভেনর মোহাম্মদ আলী।

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সদস্য সচিব সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, আইনজীবী আবেদ রাজা, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, গোলাম নবীসহ আরও অনেকে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম