চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযানের সফল অবতরণ
ইতিহাস গড়ল ভারত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সব শঙ্কা কাটিয়ে ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-৩’ চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করেছে। দেশটির স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে মনুষ্যবিহীন চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে প্রথম দেশ হিসাবে ভারত চাঁদের রহস্যময় দক্ষিণ মেরুতে (কুমেরু) পৌঁছতে সক্ষম হলো এবং নতুন ইতিহাস গড়ল। চাঁদে নভোযান পাঠানো চতুর্থ দেশ এখন ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মহাকাশযান সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। এ সম্প্রচারের সাক্ষী হয়েছে লাখো মানুষ। সম্প্রচার দেখার জন্য সন্ধ্যার পরও স্কুল খোলা রাখা হয়। চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন। চন্দ্রযানের সফল অবতরণের জন্য দেশে সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এছাড়া সংবাদপত্র ও নিউজ চ্যানেলজুড়ে ব্যানার শিরোনাম ও অবতরণের ক্ষণগণনার টাইমার যুক্ত করা হয়। শনিবার রাশিয়ার চন্দ্রাভিযান লুনা-২৫ ব্যর্থ হওয়ায় সবার মাঝে ‘চন্দ্রযান-৩’-এর অবতরণ নিয়ে এক ধরনের কৌতূহল ও সংশয় ছিল। ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া ৫টা ৪৫ মিনিটে শুরু করেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। অবতরণ প্রক্রিয়া শুরুর পর বিক্রমের গতি ১ হাজার ১৫০ মিটার প্রতি সেকেন্ডে কমিয়ে আনা হয়। চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা জানান, এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকমতো চলছে। চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণের শেষ ১৫ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর অবতরণ ১৫ মিনিটে বড় ধাক্কা খেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে অবতরণ করেছে। তাদের আশা সব চ্যালেঞ্জ জয় করে চন্দ্রযান-৩ নতুন ইতিহাস গড়বে। এটি যেখানে নেমেছে, চাঁদের ওই অঞ্চলে বরফ পানি অথবা জমাট বাঁধা বরফ রয়েছে। এতে ওই স্থানটি পানির পাশাপাশি হতে পারে অক্সিজেন ও জ্বালানির উৎস। যা ভবিষ্যতে আরও চন্দ্রাভিযান অথবা স্থায়ীভাবে চাঁদে বসতি গড়তে সহায়ক হতে পারে। এর আগে ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে ‘চন্দ্রযান-৩’ সফল উৎক্ষেপণ হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভারের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এ রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে অবস্থানকারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, ‘টিম চন্দ্রযানের বিজ্ঞানীদের আমার শুভেচ্ছা। প্রতি মুহূর্তের আপডেটের ওপর তিনি নজর রাখেন। তিনি বলেন, এ মুহূর্তটির জন্য তারা বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেছেন। ১৪০ কোটি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা। এ মুহূর্তে ভারতের উদয়মান ভাগ্যের আহ্বান। অমৃতকালের আহ্বান। অন্তরীক্ষে নতুন ভারতের উদয়। আমি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে দেশবাসীর সঙ্গে সঙ্গে আমার মনও এখানেই ছিল।’ বিক্রম চাঁদের মাটি ছুঁতেই হাততালি দিয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তাকে দেখা যায় ভারতের পতাকা দোলাতে। চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী এবং ১৪০ কোটি ভারতবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি বলেন, আমরা ভারতে পৃথিবীকে মা বলি আর চাঁদকে বলি মামা। ভারতের শিশুদের মায়েরা এতদিন বলে এসেছেন, ‘চন্দামামা দূর কি হ্যায়’ (ওই দূরে চাঁদমামা)। আমার বিশ্বাস খুব শিগগিরই ভারতের আগামী প্রজন্মের শিশুরা বলবে ‘চন্দামামা ট্যুর কি হ্যায়’ (চাঁদমামা বেড়ানোর জায়গা)।’
চাঁদের বুকে চন্দ্রযানের সফলভাবে অবতরণ উপলক্ষ্যে দেশে সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র গঙ্গা নদীর তীরে শিশুরা জড়ো হয়ে নিরাপদ অবতরণের জন্য প্রার্থনা করে। বেশ কয়েকটি জায়গায় মসজিদে মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। রাজধানী নয়াদিল্লিতে শিখ মন্দির গুরুদুয়ারায় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি চন্দ্রযানের জন্য প্রার্থনা করেন। প্রার্থনার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভারত বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতিও অর্জন করছে।