Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শিল্পোদ্যোক্তারা কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পোদ্যোক্তারা কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না

চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। ফলে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না শিল্পোদ্যোক্তারা। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন। একই সময়ে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ৬০ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। সে হিসাবে শিল্প খাতে ৩ মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ২৭৫১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে দেশের সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। এছাড়া ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতের ওপর অনাস্থা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এর বাইরে ডলার বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকেছে। সার্বিক কারণে ব্যাংক খাতে আমানতে টান পড়েছে। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে আছে। দৈনিক ভিত্তিতে ধার করে চলছে কয়েকটি ব্যাংক। ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না। এটা শিল্পের জন্য অশনি সংকেত।

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ ইডিএফ ঋণে খেলাপি হওয়ায় একটি সরকারি ব্যাংকের ইডিএফ তহবিল বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ভালো উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা সময়মতো ইডিএফ থেকে ঋণ পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শিল্প খাতের ঋণ আদায় হ্রাস পেয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এই ৩ মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার ঋণ আদায় হয়েছে, যা আগের ৩ মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।

ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা ঋণ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এ খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে শিল্পে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৮১৩ কোটি। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শিল্প খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৩ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

ঋণ আদায় কম হওয়ায় শিল্প ঋণের মোট বকেয়া স্থিতি ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্প খাতে ঋণ বিতরণে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে খেলাপি ঋণ কমছে না, ক্ষেত্র বিশেষ বাড়ছে। ঘুরেফিরে ঋণ পাচ্ছে অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন না। আবার কেউ কেউ নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে বিদেশে পাচার করছেন। সাধারণত এসব টাকা আর ফেরত আসে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, শিল্পে ঋণ না পেলে কর্মসংস্থান হবে না। উৎপাদন থেমে যাবে। আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। আর ঋণ দেবেও বা কিভাবে। কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। দুর্নীতির কারণে অনাস্থাও আছে। ডলার সংকট, অর্থ পাচার, হুন্ডি, সবই চলমান। কিছুই থামছে না। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। সব কিছু কেমন যেন স্থবির হয়ে আসছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম