পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে নেফিউর বৈঠক
দুর্নীতি দমনে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার
১১ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ নিষেধাজ্ঞাকে দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সোমবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এদিন বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সচিব এ কথা জানান।
১১ জনের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি (রিচার্ড) নিজেও যেহেতু স্যাংশনসের কর্মকর্তা ছিলেন একসময়, সুতরাং কোনো ইন্ডিভিজুয়ালের কথা বলেননি।
মার্কিন এ কর্মকর্তা মূলত জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবিরোধী প্রশিক্ষণ, অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি দমনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন পদ্ধতি। বাংলাদেশও এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের কি কি বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলো কীভাবে আমরা মোকাবিলা করছি, সেসব বিষয়ে কথা হয়েছে।
বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ইউনিট আছে, তাদের সঙ্গে কীভাবে কো-অর্ডিনেট করছি, সহযোগিতা করছি, সে বিষয়ে আলাপ হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কোর্ট থেকেও আমাদের নির্দেশনা আসে দুর্নীতিবিষয়ক, দুর্নীতি দমনবিষয়ক। সেগুলো আমরা কীভাবে প্রতিপালন করছি, এ বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি।
টাকা পাচার নিয়ে নেফিউরের কোনো মতামত ছিল কি না জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, অর্থ পাচার তো দুর্নীতির একটি অংশ। এ নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। আমরা বলেছি যেসব ব্যাংক বা ছোট ছোট আইল্যান্ড কান্ট্রি, সেগুলোয় সহজেই টাকা পাচারের বিষয় আছে। আমরা হুন্ডি নিয়ে কথা বলেছি।
এগুলোয় আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকা দরকার। এটি কোনো একটি দেশ বা সংস্থার পক্ষে শতভাগ দেখা সম্ভব নয়। আমি সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছি। কারণ এটা সমাজে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে সব দেশেই এটা একটা সমস্যা। এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এ ধরনের সমস্যা নেই, কমবেশি সব জায়গায় আছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র নিয়ে তাদের কোনো মতামত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এগুলো নিয়ে হয়তো অন্য জায়গায় আলোচনা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় অর্থ পাচার হওয়া এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত প্রসঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ফেরত আনা আরও পরের বিষয়। কোন রুটে এগুলো যাচ্ছে, বন্ধ করা বিষয়ে আলাপ হয়েছে। সবই অর্থ পাচার নাও হতে পারে।
আমাদের দেশের অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মিডলইস্টে আছেন। যাদের অনেকে সেখানে টাকা উপার্জন করে পরে কানাডা গেছেন। অনেকে ব্যবসা করেন। তাদের আমদানির একটা অংশ যদি সেখানে থাকে, সেটা কতটা বেআইনি হবে জানি না। অনেকে দেশে অ্যাপার্টমেন্ট, জমি বিক্রি করে সেই টাকা হয়তো নিয়ে গেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টাকাটা কীভাবে নেওয়া হয়েছে বা আইনসংগতভাবে নেওয়া হয়েছে কি না।
তাদের কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইনফরমেশনের জায়গা থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তাদের সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই তাদের সঙ্গে খুব সমস্যা নেই।
মার্কিনিরা এ বিষয়ে যতটুকু তথ্য বিনিময় করে তাতে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারব না। কারণ, তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই আমাদের কাছে এলেন। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রত্যাশা থেকে থাকে, তাহলে তারা সেটি আলাপ করেছেন।
তিন দিনের সফরে রোববার রিচার্ড নেফিউর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে।
সফরের প্রথম দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সোমবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ঢাকা সফরকালে রিচার্ড নেফিউ অর্থ পাচার প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।