আগস্টের অশ্রুবিন্দু থেকে জাগবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ
আসাদ মান্নান
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘আগস্ট শোকের মাস/তোমাকে কাঁদতে হবে/যদি তুমি রক্তমাংসে প্রকৃত বাঙালি হও,/মানুষের ঘরে যদি জš§ নিয়ে থাকো,/তবে তোমাকে কাঁদতেই হবে-/এই যেমন আমি কাঁদছি, আমরা কাঁদছি।’
এরকম একটি কবিতা দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম-শেষ করতে পারিনি। সারারাত ঘুমাতে পারিনি, দুঃস্বপ্নে জেগে উঠে ভাবছি। আমার বিশ্বাস পাঠকও ভাববেন, কী অন্যায় ছিল তার? কেন এমন নৃশংস আক্রোশের শিকার হলেন তিনি-যার জন্য শিশুপুত্র অবুঝ রাসেল ও অনেক স্বজনসহ সপরিবারে জীবন দিতে হলো জাতির পিতাকে? তাও কিনা পাকিস্তান নামক একটা আজব রাষ্ট্রের জš§দিনের রাতে! দিবালোকের মতো সব পরিষ্কার-খুনিরা কেন এ অভিশপ্ত আগস্ট মাসের পনেরো তারিখটা বেছে নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে। তার অপরাধ-তিনিই তো দায়ী, ওদের পেয়ারের পাকিস্তানকে ভেঙে দিয়েছেন বলে।
২.
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরাধীন,
দারিদ্র্যপীড়িত, অবহেলিত, শোষিত, লাঞ্ছিত বাংলার মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি ও তার সঙ্গীরা। এজন্য প্রথমে প্রয়োজন ছিল একটা স্বাধীন দেশ-বাংলাদেশ। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর ১৯৭১-এ তিরিশ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন-আমরা পেলাম একটা স্বাধীন দেশ তারই কল্যাণে, যা ঘাতকেরা কখনো চায়নি। কাজেই প্রতিশোধ তো নিতেই হবে। ওদের সাধের পাকিস্তানকে ভাঙার মাশুল তাকে দিতে হলো সপরিবারে।
হায়রে নিয়তি! অভাগা বাঙালি আজ বিশ্বে এক অকৃতজ্ঞ পিতৃঘাতী জাতি বলে পরিচিত-এ লজ্জা নিবারণের পোশাক কী তা আমার জানা নেই। তার দূহিতা বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা জীবনবাজি রেখে দেশটাকে আজ এক অনন্য মর্যাদায়, অনন্য উচ্চতায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আজ একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানিরা পর্যন্ত উচ্চকণ্ঠে বলছে-বাংলাদেশের মতো হও, মাথা উঁচু করে দাঁড়াও আÍমর্যাদা নিয়ে। অথচ তাদের মানসপুত্র প্রেতাÍারা আজও এ দেশের অগ্রযাত্রার পথে পথে প্রতিবন্ধকতার কাঁটা বিছিয়ে চলেছে। তারা তাদের অবৈধ অর্থে ভিনদেশি লবিস্টদের ভাড়া করে দেশের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। তারা দেশের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে ক্ষতিকর তৎপরতা। পরাজিত পাকিস্তানিরা আমাদের ধর্মের নামে শোষণে শাসনে অবদমিত করে রেখেছিল। আজ তাদের এ দেশীয় দোসররা গণতন্ত্রের জন্য মেকি কান্নায় প্রতারণা করছে এ দেশের মানুষকে, বিশ্ববাসীকে। তারা সাম্প্রদায়িক চেতনার বিষবাষ্প ছড়িয়ে চলেছে অবিরাম। অসাম্প্রদায়িক চেতনা তাদের কাছে বিষতুল্য। অথচ পৃথিবীব্যাপী কে না জানে-পরমতসহিষ্ণুতা, মানবিকতা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছাড়া গণতন্ত্র বাঁচতে পারে না।
৩.
আগস্ট শোকের মাস। আমাদের অশ্রুবিন্দুকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গে রূপান্তরিত করার মাস। আর সেই আগুনে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে পুড়িয়ে দেওয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞার মাস। আমাদের ভালোবাসার অশ্রুবিন্দু থেকে গড়ে উঠবে সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা এবং মানবিকতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাংলাদেশ-এটাই হোক এবারের শোকের মাসের অঙ্গীকার।
অনুলিখন : শুচি সৈয়দ