Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দুই পক্ষের আস্থার সংকট স্পষ্ট

সরকার ও পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের ভিন্নমত

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুই পক্ষের আস্থার সংকট স্পষ্ট

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি মিশন এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের একের পর এক বক্তব্য, বিবৃতি, সরকারের পালটা জবাব, অবস্থান স্পষ্টকরণে তাদের (বিদেশি দূত) তলবের ঘটনা ঘটছে। এতে সরকার এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানদের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে এই সংকট আগামীতে আরও বাড়তে পারে-এমন শঙ্কাও আছে।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ১৭ জুলাই রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হিরো আলম হামলার শিকার হন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার বুধবার তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন জানিয়ে, ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। তবে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে না বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।

জানতে চাইলে রাজনীতিবিদ ও সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মুখোমুখি অবস্থান বা বৈরী পরিবেশ তৈরি করবে বলে মনে করি না। এ ধরনের আদান-প্রদান বৈঠক হওয়াটা স্বাভাবিক। কূটনৈতিক সম্পর্কে এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদিও মতামতের ভিন্নতা থাকতে পারে। আমাদের ব্যাখ্যার সঙ্গে তাদের ব্যাখ্যা এক নাও হতে পারে। রাষ্ট্র হিসাবে পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সব সময় সবকিছু সুমধুর থাকতে হবে, এমন নয়। যেমন ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানির বণ্টন নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।

তিনি বলেন, এই ধরনের আদান-প্রদান হওয়া ভালো। তবে আদান-প্রদান হওয়া মানেই পারস্পরিক বিরোধী অবস্থানে চলে এলাম, এটি আমি বিশ্বাস করি না। আমি কেন নেতিবাচক দিক দেখি না। আমরা আমাদের অবস্থান পাকা করেছি। বিশেষ করে শক্ত করে বলা হয়েছে, ভিয়েনা কনভেনশনের কথা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিয়েনা কনভেনশনের কোন কোন ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে সেটিও উল্লেখ করেছেন। আমরা তো প্রটেস্ট করিনি। তারা যে কাজটি ঠিক করেনি, সেটিই বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন-তলব নয়, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমি মনে করি এটি ‘তলব’ই হয়েছে তাতে যে ভাষাই ব্যবহার করা হোক।

প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেক্ষেত্রে আমরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। তারা (বিদেশি রাষ্ট্রদূত) যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, সেটাও সংবাদমাধ্যমে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, সরকারের বিষয়ে কথা বলেছে, সেটা সরকারকে আগে জানানোই উচিত ছিল। হুট করে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে ঠান্ডা মাথাতেই দেওয়া উচিত। সেটিই করা হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সরকার এবং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে মনে হয়। দুই পক্ষ থেকেই আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। সরকার বারবার ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘনের কথা বলছে। আর রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজেদের অবস্থানে অনড় আছেন।

তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে সেখানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতেই তারা এটি করেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে এটি সহজেই দূর হবে বলে মনে করি না। নির্বাচনকে ঘিরে অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা হয়তো আরও ঘটতে থাকবে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা মূলত ব্যাখ্যা করেছেন এটি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হয়নি। তারা আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য করেছেন। তারা মনে করেছেন যে, আমাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যে এনগেজমেন্ট তারই অংশ। কিন্তু আমরা যুক্তিটি খণ্ডন করেছি এভাবে, ভিয়েনা কনভেনশনে পরিষ্কার বলা আছে, রাষ্ট্রদূতদের যে কোনো বিষয়ে প্রথম যোগাযোগমাধ্যম তিনি যে দেশের রাষ্ট্রদূত সেই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গণমাধ্যমের সঙ্গে তাদের কথা, যোগাযোগকে আমরা সব সময় সাধুবাদ জানাই। কিন্তু যে কোনো বিষয়ে তাদের উচিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সেটি আমাদের জানানো। সেটি আমরা তাদের উদাহরণ দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে, আমাদের টেরিটোরিয়াল শাখার মহাপরিচালকবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বা সেক্রেটারিরা আছেন।

তারা ছাড়াও পররাষ্ট্র সচিব, অন্যান্য কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী সবার কাছেই তাদের সারা বছর দিনের যে কোনো সময় যোগাযোগ করার মতো ব্যবস্থা আছে। সেক্ষেত্রে এ কাজটি যে তারা যথাযথ করেননি সেটিই ছিল তাদের ডিফেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের রেসপন্স।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকেই দেশে নানা কূটনৈতিক তৎপরতা সরব হতে থাকে। ইইউসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির টুইট, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কয়েকবার বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা, ঢাকায় জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলব করা হয়।

সর্বশেষ ইইউসহ ১৩ রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানদের বিবৃতি এবং পরে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিবৃতির বিপরীতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম