Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

হার্ডলাইনে পুলিশ গ্রেফতার ৭৬০

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হার্ডলাইনে পুলিশ গ্রেফতার ৭৬০

বিএনপিকে মহাসমাবেশের অনুমতি দিলেও হার্ডলাইনে পুলিশ। মহাসমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কর্মসূচিস্থল ও আশপাশসহ ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 
পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছে এই বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রাজধানীর প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে কড়া চেকপোস্ট। অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে নগরীর মোড়ে মোড়ে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীতে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বিএনপির ৩৩৯ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। 

আর বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৪১১ জন। তাদের মধ্যে পরোয়ানাভুক্ত আসামি ১০৫ জন। ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দারুস সালাম থানা এলাকায় ৫৭ জন, কাফরুল থানা এলাকায় ৩৯ জন, পল্লবীতে ৩২ জন, বনানী ও গুলশানে ১২ জন করে, তুরাগ ও লালবাগে নয়জন করে এবং যাত্রাবাড়ীতে পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি আজ নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করবে। এদিন সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এই দুই কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। অভিযানে বিএনপির নেতাকর্মী গ্রেফতার হলেও আওয়ামী লীগের কাউকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক যুগান্তরকে বলেন, আমরা গণগ্রেফতার করছি না। পুলিশ আইনের বাইরে কাজ করছে না। যাদের গ্রেফতার করছি তারা নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্টের আসামি। এর বাইরে বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা বিভিন্ন সময় চেকপোস্ট বসাই। সন্দেহজনক কাউকে পেলে তল্লাশি করা হয়। 

তিনি বলেন, শুক্রবার দুটি রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো তৃতীয়পক্ষ নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এজন্য বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বাসিয়েছি। হোটেলগুলোতে রেইট দিচ্ছি। হোটেল, রেস্টুরেন্টে যেন কোনো নাশকতাকারী বা অপরাধী চক্র লুকিয়ে আছে কিনা তা বের করতেই হোটেলে অভিযান। কেউ বিরোধী দলের রাজনীতি করলেই তাকে গ্রেফতার করছি-এই অভিযোগ সঠিক নয়। 

বৃহস্পতিবার বিকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার জানান, ২৩টি শর্তে দুই দলকে শক্রবার মহাসমাবেশ ও সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে। 

বিএনপি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চ পর্যন্ত সমাবেশ করবে। এই সীমানার মধ্যেই মাইক স্থাপন করতে পারবে তারা। সমাবেশে ব্যাগ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আসা যাবে না।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, শুক্রবার বন্ধের দিন। তার পরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। আশুরা শুরু হয়েছে। ২৪ জুলাই থেকে প্রতিদিনই তাজিয়া মিছিল হচ্ছে। আশুরার চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সমাবেশ করার যে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দুটো দলকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো দলই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কিছু করবে না বলে আশা করি। কোনো দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের অবস্থা দেখলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জনসমাবেশে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো পলিটিক্যাল পার্টি বা রাজনৈতিক দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযানে নামেনি পুলিশ। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখব। 

বড় দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে কোনো হুমকি আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ মুহূর্তে তেমন বড় কোনো থ্রেট নেই। তবে যেহেতু বড় দুটি দলের বড় সমাবেশ, যে কোনো কুচক্রী মহল বা যে কেউ সমাবেশের সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। এজন্য পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, এপিবিএন ও বিজিবি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। 

এদিকে র‌্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, সমাবেশ-মহাসমাবেশ ঘিরে অপরাধীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে র‌্যাব সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, দুটি কর্মমূচি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে কর্মসূচি ঘিরে কেউ সহিংসতার পাঁয়তারা করলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-দুই দলকেই শর্তসাপেক্ষে কর্মসূচি পালন করতে হবে। উভয়ের জন্য একই নির্দেশনা। 

তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ বিবেচনায় রাস্তায় সভা সমাবেশ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তার পরও কেউ করলে শান্তিশৃঙ্খলার বিষয়ে নজর রাখতে হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে, জানমালের ক্ষতি করলে, ভাঙচুর করলে, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলে, শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। 

বিএনপির ৪৭৩ নেতাকর্মী কারাগারে : আদালত প্রতিবেদক জানান, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গ্রেফতার বিএনপির ৪৭৩ নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানা থেকে গ্রেফতার এসব নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এছাড়া চারজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার মহানগরের ৪১টি থানায় পুরোনো বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৩৬৮ জন এবং চারটি থানা থেকে সন্দেহজনক হিসাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ও ১৫৪ ধারায় ৯৬ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা জেলার সাতটি থানা থেকে ১৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। যার মধ্যে চারজনের একদিনের রিমান্ড ও ৯ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিন নেতাকর্মীদের পক্ষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার : মোহাম্মদপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে অভিযান চালিয়ে মাগুরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম সুমনসহ বিএনপির ১৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে অভিযান চলে।

ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ডেমরা থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির আট নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। 

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বরিশাল বিএনপির ২০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। 

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভৈরবে বিএনপির ৪ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। 

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, বাবুবাজার সেতু ও পোস্তগোলা সেতুর কেরানীগঞ্জ প্রান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সন্দেহ হলেই পথচারীদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে কেরানীগঞ্জে বিএনপির কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন।

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানসহ বিএনপির ৯ নেতাকর্মী ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন। বুধবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম ঢাকার ধানমন্ডি থানার পাশে ৬ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, রামপালে বিএনপির ৪ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম