Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আমদানির প্রভাব নেই কাঁচামরিচের ঝাঁজে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমদানির প্রভাব নেই কাঁচামরিচের ঝাঁজে

ভারত থেকে আমদানির পরও স্থিতিশীল হয়নি কাঁচামরিচের বাজার। ঈদের পর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কাঁচামরিচের দাম আকাশচুম্বি হয়েছিল। কেজিতে দাম হাজার ছুঁয়ে যখন ২০০ তে নেমেছে, তখন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল ভোক্তা। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের দ্বিগুণ হয়েছে পণ্যটির দাম।

শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৪২০ টাকায় কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে। ঢাকার বাজারে একদিনের ব্যবধানে স্থানভেদে ২০০ টাকা পর্যন্ত মরিচের দাম ওঠানামা করে। মরিচের ঝাঁজে ভোক্তা যখন অতিষ্ঠ তখন বাজারের অন্য কাঁচামালের দামেও সুখবর নেই। সবমিলিয়ে ভোক্তার যেন নাভিশ্বাস অবস্থা।

রাজধানীতে বাজারভেদে শুক্রবার ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হয়েছে। আগেরদিন বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৪০০-৫০০ টাকায়। তবে কারওয়ান বাজারে তুলনামূলক দাম কিছুটা কম ছিল। অন্যদিকে চট্টগ্রামে কাঁচামরিচের দাম কমে আবার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ছয়মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫ গুণের কাছাকাছি।

সরবরাহ সংকটের অজুহাতে আড়তদাররা সেখানে অস্বাভাবিকহারে কাঁচামরিচের দাম বাড়াচ্ছে। মে মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাজারে কাঁচামরিচের কেজি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা উঠেছিল। জুন শেষে তা ৫০০ টাকা ছুঁয়ে যায়। পবিত্র ঈদুল আজহার পর থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

ক্রেতারা জানান, কয়েকদিন ধরে যেভাবে খুশি সেভাবেই দাম নির্ধারণ করছেন বিক্রেতারা। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে নির্ধারণ হচ্ছে দাম। বাজারগুলোতে গিয়েও তাদের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। শুক্রবার মালিবাগ রেলগেটে সিটি করপোরেশন মার্কেটে মরিচ বিক্রি হয় তিনশ টাকা দরে। আবার শান্তিনগর বাজারে বিক্রি হয় ২৫০ টাকা দরে। কাছাকাছি এলাকা মধুবাগে বিক্রি হয় ২২০ টাকা। খিলগাঁও এলাকার একাধিক বাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে তার ওপরে। মিরপুরে বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা দরে।

মধুবাগের বাসিন্দা ইসমাঈল হোসেন বলেন, মরিচের বাজারের কিছুই বুঝি না। একেকদিন একেক দাম। একদিন দেখি ৫০০, আরেকদিন ৭০০ আবার আরেকদিন ২৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কঠোর নজরদারি করে এদের থামানো উচিত। কেবল মরিচই নয়, বেশিরভাগ নিত্যপণ্যেরই একই অবস্থা।

শুক্রবার মালিবাগ রেলগেট বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মিজানের সঙ্গে। তিনি বলেন, টমেটোর কেজি ১৫০ টাকা। এভাবে বাজার চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের টিকে থাকার কোনো উপায় থাকবে না।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সেখানে ২৬ জুন কাঁচামরিচের আমদানির খবরে দাম কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়। তবে আরেক দফা বেড়ে শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা থেকে ৪২০ টাকায়। এছাড়া লাগামহীন সবজির বাজার। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের বন্ধের কারণে ভারত থেকে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামরিচের আমদানি হয়নি এবং দেশীয় যেসব কাঁচামরিচ বাজারে ছিল তা চট্টগ্রামের গুটিকয়েক সিন্ডিকেট কিনে নিয়ে গুদামজাত করে রেখেছিল। মূলত এসব কারণেই কাঁচামরিচের দাম অস্থির ওয়ে ওঠে। যা আগে কখনোই হয়নি।

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুরবানিতে সাধারণত কাঁচামরিচের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু অন্যান্য বছর চাহিদা বাড়লেও সরবরাহও থাকত বেশি। ফলে দাম তেমন একটা বাড়ত না। কিন্তু এ বছর তার ব্যতিক্রম। চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি। যা মজুত ছিল তাও সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে যায়। স্থলবন্দরের তথ্যানুযায়ী, ২৬ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার কেজি। তবে এরপরও চট্টগ্রামে পাইকারি পর্যায়ে দাম এখনো ৪০০ টাকার বেশি।

উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে কাঁচামরিচ আবাদ করা খুবই কঠিন। সাধারণত এ সময়টা আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ করে। মে মাস পর্যন্ত মরিচের উৎপাদন ভালোই ছিল। হঠাৎ করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধির কারণে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। আবার আমদানিও কম হয়েছে এই সময়ে। যে কারণে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে ওঠে অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট। যার ফলশ্রুতিতে কাঁচামরিচের দামের এই অস্বাভাবিক উল্লম্ফন তৈরি হয়েছে।

আড়তদারেরা জানান, আমদানি হলেও চট্টগ্রামের বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কম। যে পরিমাণ মরিচ এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে, তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক কাঁচামরিচ বাজারে আসত। প্রতিটি বড় ট্রাকে মরিচ আসে প্রায় ১৩ হাজার কেজি বা ১৩ টন। সে হিসাবে আগে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ কেজি কাঁচামরিচ বাজারে ঢুকত। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই ট্রাক করে কাঁচামরিচ এসেছে চট্টগ্রামে। সব মিলিয়ে হবে ২৬ টনের মতো। কিন্তু চট্টগ্রামে চাহিদা ৫২ টনের বেশি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ছে।

নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচামরিচের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে বেশিরভাগ সবজির দোকানে কাঁচামরিচ রয়েছে। বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল কাশেম যুগান্তরকে বলেন, পাইকারি আড়তে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মরিচ নেই। শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচামরিচ কিনতে হয়েছে ৩৮০ টাকা থেকে ৩৯০ টাকায়। এর সঙ্গে পরিবহণ, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৪২০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।

অন্য পণ্যের বাজারও গরম : ঢাকার বাজারে নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দর। কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে কেজিপ্রতি দাম ছিল ৪০ টাকা।

চট্টগ্রামে কাঁচামরিচের পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। ঈদের আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৮০ টাকায়। তাছাড়া প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩১০, দেশি মুরগি ৫৮০ ও লেয়ার মুরগি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি বাধাকপি ৪০, পেঁপে ৫০, ঢ্যাঁড়শ ৪০ থেকে ৫০, বরবটি ৬০, কচুরমুখি ১শ’, বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, চাল কুমড়া ৪০, শসা ৫০ ও প্রতি হালি কাঁচকলা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এ অজুহাতে মাছের বাজারে আগুণ। বাজারে প্রতি কেজি কোরাল ৯শ, রুই ৩৫০, রূপচাঁদা ৭শ, থেকে ৮শ, পাবদা ৪৫০ টাকা, শিং ৪শ, পাঙাশ ২শ, চিংড়ি ৭শ ও টেংরা মাছ ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হিলিতে কমেছে কাঁচামরিচের দাম : হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে খুচরা বাজারে কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচের দাম। একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা দরে। ভারত থেকে আমদানির ফলে মোকামগুলোতেও দেশি কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমেছে। তবে দাম কমলেও ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। তারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটিরিং না হওয়ার কারণে কাঁচামরিচের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম