Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঈদ আনন্দ ম্লান করে দিচ্ছে ডেঙ্গি

ঢামেকে এখনো খোলা হয়নি পৃথক ওয়ার্ড

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদ আনন্দ ম্লান করে দিচ্ছে ডেঙ্গি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার চিকিৎসাধীন ডেঙ্গি রোগীরা -যুগান্তর

দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু রোগীদের যথাযথ চিকিৎসায় এখনো খোলা হয়নি পৃথক ওয়ার্ড বা কর্নার। গুরুতর অসুস্থদের জন্য নেই পৃথক আইসিইউ সুবিধা। ডেঙ্গি আক্রান্তদের মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। 

ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী মেঝে ও করিডরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাশাপাশি অন্য রোগীদেরও সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোববার টানা চার ঘণ্টা হাসপাতালটিতে অবস্থান করে এই দৃশ্য দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেঙ্গি চিকিৎসায় এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। 

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি রোগীদের স্বজন এবং সেবায় নিয়োজিত নার্স ও চিকিৎকদের ঈদ আনন্দ ম্লান হতে চলেছে। স্বজনরা জানান, তিন দিন পরই ঈদ। রোগী নিয়ে আমরা ব্যস্ত। আমাদের ঈদ উদযাপন করা হবে না। একই কথা নার্স ও চিকিৎসকদেরও। ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে নতুন ভবনের ইউনিট-৫ এর ৭০২নং ওয়ার্ডে ৫ নম্বর বিছানায় ভর্তি আছেন শনির আখড়ার সুমাইয়া (১৯)। 

বিছানায় মশারি থাকলেও মাথার পাশে গুছিয়ে রেখেছেন। জানতে চাইলে তার ভাই ফরহাদ আহমেদ বলেন, মশারি টানালে গরম লাগে। এই ওয়ার্ডের দুজন নার্স জানান, ১৮ দিন আগে সুমাইয়া ও তার দুইবোন, এক ভগ্নিপতি এখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। সুমাইয়ার দাঁতের রক্তপাত বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানান-সাধারণ মশা ডেঙ্গি রোগীকে কামড়ালে ওই মশাও এডিসের জীবাণু বহন করে। মশাটি কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তিনি ডেঙ্গি আক্রান্ত হবেন। এক পরিবারের চারজন ডেঙ্গি পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি তাই প্রমাণ করে। ডেঙ্গি আক্রান্তদের সঙ্গে অন্য রোগীরাও চিকিৎসা নিচ্ছেন, কিন্তু মশারি ব্যবহার করছেন না। ফলে চিকিৎসক-নার্স ও রোগীর এটেনডেন্ট সবাই ডেঙ্গি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

শয্যা না পেয়ে ষষ্ঠতলার সিঁড়ির পাশে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন কুমিল্লার মহিউদ্দীন। তার স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, ওয়ার্ডে বিছানা সংকট। তাই এখানে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মশারি টানানোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতে মশার কামড় খেতে হচ্ছে। ষষ্ঠতলার পুরুষ ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স তানিয়া সুলতানা বলেন, ভবন-২ এর ৬০১, ৬০২, ৭০১, ৭০২, ৮০১, ৮০২ মেডিসিন ওয়ার্ড ছাড়াও ৯ তলায় ডেঙ্গি রোগী আছে। 

৬০২নং মেডিসিন ওয়ার্ডের ১০টি কক্ষে ৮টি করে ৮০টি বিছানা আছে। আজ (রোববার) ১৫৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গি রোগী ৩৪ জন। প্রত্যেককে সঠিক ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে পর্যাপ্তসংখ্যক মশারি নেই। যেগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো কেউ ব্যবহার করছে না।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ডেঙ্গি আক্রান্ত সায়েম বলেন, ‘বিছানা না পেয়ে দরজার সামনে মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে। তিন দিন ভর্তি থাকলেও কোনো মশারি দেয়নি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। অন্য রোগ সংক্রমণের ভয়ে আছি।’

জানতে চাইলে মেডিসিন ওয়ার্ডের ইউনিট-৮ এর চিকিৎসক ডা. রাকিন মনজুর জোয়ার্দার বলেন, ‘এবার ডেঙ্গি মশার প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ডেঙ্গির ধরন পরিবর্তনসহ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। জরুরি ও বহির্বিভাগের রোগীদের মধ্যে থেকে ফিল্টার করে যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। অন্যদের ফলোআপে থাকতে বলা হচ্ছে।’ 

তার সঙ্গে থাকা আরেক চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গিতে এবার আগের মতো উচ্চমাত্রার পাঁচ দিনের জ্বর নাও হতে পারে। 

সামান্য জ্বর নিয়েও ডেঙ্গি হচ্ছে। আগে বলা হতো যে, পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলে এবং জ্বর সেরে যাওয়ার পরই কেবল জটিলতা শুরু হয়। এবার দেখা যাচ্ছে জ্বরের শুরুতেই বা দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনেও জটিলতা নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আকস্মিক রক্তচাপ কমে যাওয়া, ক্যাপিলারি লিকেজ, রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া, হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়া দেখে জটিলতা বোঝা যাচ্ছে।

শিশু ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এবার শিশুদের শক সিনড্রোম বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে চারজন শক সিনড্রোমজনিত রোগী আসছে। তাদের মধ্যে একজনের আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে।’

এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঢামেকে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন ডেঙ্গি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। গড়ে ১৫ জন ভর্তি হচ্ছেন। শুক্রবার ৩০, শনিবার ১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়ারসহ ভর্তি রোগীদের ৫০ শতাংশই শক সিনড্রোম দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কো-মরবিডিটি, গর্ভবতী ও শিশু বেশি। ইতোমধ্যে ঢামেকে একজন চিকিৎসক এবং দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি জানান, ঢামেকে সব ধরনের রোগী আসে কাউকেই ফেরত দেওয়া হয় না। এখনই পৃথক ডেঙ্গি ওয়ার্ড ও কর্নার খোলা হলে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা কিছুটা সীমিত হয়ে যাবে। নজর রাখা হচ্ছে, রোগী বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসা কলেবর বাড়ানো হবে। 

আর অবকাঠামোর চেয়ে রোগী বেশি ও অতিরিক্ত রোগী থাকায় অনেকে মশারি টানাতে চান না। চিকিৎসক-নার্সদের ডেঙ্গি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। হাসপাতাল আঙিনায় মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো ও লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে।

ডেঙ্গিতে ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৯৯ : এদিকে সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৯ জন ডেঙ্গি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯৮ জনে। এ সময়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

অধিদপ্তর জানায়, শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১১৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২৬৭ জন ও ঢাকার বাইরের ১৩২ জন। চলতি বছরের ১ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সাত হাজার ২৩৮ জন। 

তাদের মধ্যে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬১৯ জন। আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ১৬১৯ জন। একই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৬৯৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৪৬৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১২২৮ জন। আর এ সময়ে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৫ জন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম