Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জনতার কাঠগড়ায় জনপ্রতিনিধি

‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছেন আশীর্বাদপুষ্ট ওরা ১১ জন

কুমিল্লা ১ : দাউদকান্দি-তিতাস : টেন্ডার ও চাঁদাবাজি, তদবিরবাণিজ্য, অবৈধ বালু উত্তোলন, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের নেপথ্যে চিহ্নিতরা

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা ব্যুরো

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছেন আশীর্বাদপুষ্ট ওরা ১১ জন

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সংসদ-সদস্য (এমপি) সুবিদ আলী ভূঁইয়া পরিবারের ছত্রছায়ায় থেকে যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছেন ওরা ১১ জন। তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদবি থাকলেও বেশিরভাগই ‘হাইব্রিড’ এবং অনুপ্রবেশকারী। তারা এমপি এবং তার ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমনসহ ওই পরিবারের নাম ভাঙিয়ে সিংহভাগ অনিয়ম-দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ করছেন।

টেন্ডার ও চাঁদাবাজি, তদবিরবাণিজ্য, মেঘনা-কাঁঠালিয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেপথ্যে রয়েছেন এ ১১ জন। এছাড়া বিনা টেন্ডারে সিএনজি-অটোরিকশা-মাইক্রো স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, খাসজমি দখল এবং দাউদকান্দি ঘাটের বালুমহাল, পাথর ব্যবসা, মৎস্য প্রকল্প, মাদক ব্যবসা ও হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন তারা যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য।

অনুসন্ধানের জানা গেছে, ওই ১১ জনের ওপর সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবং তার ছেলে মোহাম্মদ আলী সুমনসহ পরিবারের সদস্যদের রয়েছে বিশেষ আশীর্বাদ। যার কারণে বিতর্কিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

জানতে চাইলে সংসদ-সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলেন, আমি এবং আমার পরিবার জনকল্যাণমুখী রাজনীতি করি। আমি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। দুর্নীতি কখনো আমাকে এবং আমার পরিবারকে স্পর্শ করতে পারেনি এবং পারবেও না। আমি তিনবারের সংসদ-সদস্য। আমার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রয়েছে। তবে কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে অভিযোগ পেলেই আমি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা শুনে আমি হতবাক হয়েছি। আমার এবং পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি করা কখনোই সম্ভব নয়। আপনারা (প্রতিবেদক) যেসব অভিযোগ পেয়েছেন তা সরেজমিন গিয়ে ভালোভাবে যাচাই করুন। বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমার পেছনে লেগে আছেন। হয়তো ওই নেতার পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়ে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, আমার ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমনকে এসব বিষয়ে অবহিত করেন। আমি জনগণের জন্য কাজ করি। এর বাইরে কোনো কিছুই আমার নলেজে নেই। তাছাড়া আমার নাম ভাঙিয়ে কোনো নেতাকর্মী অনিয়মে জড়িত থাকলে এলাকায় গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। আমি এসব কিছুই জানি না। তিনি বলেন, আমার আমলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। আমি এসব অনিয়মকে মোটেও পাত্তা দেই না। আপনারা যে ১১ জনের নামোল্লেখ করে অভিযোগ দিচ্ছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। তারা যদি অনিয়মে জড়িত থাকে আমার কাছে অভিযোগ দেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ২০০৮ সালের ভোটের জোয়ারে আওয়ামী লীগের টিকিটে কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি সংসদীয় আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এরপর থেকে টানা তিনবারের এমপি তিনি। নিজের পাশাপাশি তার বড় ছেলে মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমনকে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বানিয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের অভিযোগ-এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়া গত ১৫ বছরে দলের ত্যাগী নেতাদের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেননি। বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড বিতর্কিত এবং দলের গুটিকয়েক লোক এমপির ক্ষমতার প্রভাবে লাভবান হয়েছেন। বিশেষ করে সুবিধাভোগীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ওরা ১১ জন।

অনুসন্ধানে জানা জানা যায়, প্রভাবশালী ১১ জনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন-উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম। তিনি গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি এমপির একজন ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত। এমপির কারণে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি রাজনীতির মাঠেও বেশ প্রভাবশালী। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইলিয়টগঞ্জ বাজারের নিয়ন্ত্রণ ওই শিক্ষকের হাতে। এমপির প্রভাবে নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মুন্সি এক সময়ের উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে তার নামে। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি। এমপি পরিবার তাকে কাছে টেনে নেওয়ায় ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোণঠাসা এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। পরে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

ক্ষমতার প্রভাবে তার ছেলে আক্তার হোসেন মুন্না এলাকার কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরই মধ্যে মুন্না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তাছাড়া লোকমান চেয়ারম্যান উপজেলা মৎস্য লীগের সভাপতি পদের প্রভাব খাটিয়ে এলাকার সবকটি মৎস প্রকল্পও নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে মৎস্যচাষিদের রয়েছে চাপা ক্ষোভ।

উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রকিব উদ্দিন। এলাকাবাসীর অভিযোগ-তিনি দাউদকান্দি উপজেলার পরিবহণ শ্রমিক এবং বিভিন্ন স্ট্যান্ডের জিপি-চাঁদার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এছাড়া মহাসড়কে চলাচলকারী মাইক্রোবাসের চাঁদার নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। দাউদকান্দি ঘাটে বালু এবং পাথরবাহী প্রতি ট্রাক থেকে তার নামে তিনশ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ওই ঘাট থেকে প্রতিদিন শতাধিক বালু এবং পাথরবাহী গাড়ি চলাচল করছে। তাছাড়া গোমতী নদীর পাড়ে নোঙ্গরকারী সব প্রকার নৌযান থেকে তার লোকজন দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। এমপি পরিবারের ছত্রছায়ায় থেকে সে এখন বিপুল অর্থের মালিক।

তারিকুল ইসলাম নয়ন। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। বিএনপি পরিবারের সন্তান এ নেতা এক সময় এমপির ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করতেন। এমপি পরিবারের মন জয় করে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ লাভ করেছিলেন। পরে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কের পাশে টোলপ্লাজা এলাকায় সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে তার বড় ভাই আক্তার হোসেনের মাধ্যমে বিশাল বালুমহালের ব্যবসা তিনি পরিচালনা করছেন। স্থানীয়রা জানান, ব্যাপক আধিপত্য এবং এমপি পরিবারের আশীর্বাদ ছাড়া বিশাল এ বালুমহাল চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমপি পরিবারের ঘনিষ্ঠজন বলেই তিনি এ ব্যবসা পরিচালনা করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন।

আল আমিন ওরফে বালু আলামিন এক সময় ছিলেন খেটে খাওয়া সাধারণ একজন শ্রমিক। ২০০৮ সালের পর সুচতুর আল আমিন নানা কৌশলে এমপি পরিবারের ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। স্থানীয়রা জানান, গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে এমপির ছত্রছায়ায় থেকে মেঘনা এবং কাঁঠালিয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন আল আমিন। নদীর বালুর টাকায় রাজনীতির পাশাপাশি নদী তীরে গড়ে তুলেছেন বিশাল অট্টালিকা। বিলাসবহুল বাড়িসহ এখন বিপুল সম্পদের মালিক তিনি। বেশ কয়েকটি মাছের ঘেরও রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে।

উপজেলা যুবলীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল মাহমুদ। এমপির আশীর্বাদপুষ্ট এ নেতা উপজেলার সব ধরনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন। সব উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারিতে অংশগ্রহণের জন্য ধরনা দিতে হয় এ নেতাকে। স্থানীয়রা জানান, টেন্ডার এবং ঠিকাদারি কাজে হেলাল যা করে তাই হয়। কারণ তিনি এ সেক্টরে এমপির অলিখিত প্রতিনিধি। তার নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কেউ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার সাহস নেই বললেই চলে। তাছাড়া তদবিরবাণিজ্য, সালিশ দরবারসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এ নেতা বিপুল ধনসম্পদের মালিক।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি সোহেল রানা। তিনি এমপির ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমনের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত। স্থানীয়রা জানান, এক সময়ের বিএনপি নেতা সোহেলের প্রধান কাজ হচ্ছে তদবিরবাণিজ্য, সালিশ দরবার এবং ধান্ধাবাজি। উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাবে তিনি এখন দাউদকান্দি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। সরকারি জায়গা লিজ বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত এ নেতা। তিনি দোকান বরাদ্দের নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। এমপি পরিবারের আশীর্বাদে তিনি এখন কোটিপতি।

দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের বাজরা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে পরিচিত। দলীয় কোনো প্রকার পদ-পদবি না থাকলেও তাকে সার্বক্ষণিক দেখা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, এসি ল্যান্ড অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে। উপজেলার সব দপ্তরে তদবিরবাণিজ্যই তার মূল পেশা। স্থানীয়রা জানান, তদবির মাস্টার হালিমের কাছে এলে সব সমস্যার সমাধান মেলে। তবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করে তিনি এখন বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক।

দাউদকান্দির আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন জুলহাস মিয়া। স্থানীয়রা জানান, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত। গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের মাইক্রোস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। তার রয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনী। গৌরীপুর স্ট্যান্ডের পাশে তার বাড়ি। সেখানে বসেই খুন-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছেন আলোচিত-সমালোচিত জুলহাস। এরই মাঝে বেশ কয়েক দফা গ্রেফতার হলেও প্রতিবারই দ্রুত জেল থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। এমপি পরিবারের অদৃশ্য প্রভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে সে এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। অজ্ঞাতস্থান থেকেই তিনি বর্তমানে তার সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন।

সাবেক পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আল আমীন সরকার। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি যোগ দিয়েছেন এমপি পরিবারের সঙ্গে। উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন তিনি। আওয়ামী লীগের যোগদানের পর তিনি কোনো প্রকার পদ-পদবি না পেলেও এমপি পরিবারের প্রভাবে বালুমহাল পরিচালনা করে কোটি কোটি টাকা কামাই করছেন। তাছাড়া পৌরসভার ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করছেন এই প্রভাবশালী। পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল খন্দকারকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা এবং মানববন্ধনও হয়েছিল।

গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান নোমান মিয়া। এক সময় ব্যাংক ঋণে জর্জরিত এ ইউপি চেয়ারম্যনের ভাগ্য বদল হয়েছে এমপি পরিবারের আশীর্বাদে। এলাকার লোকজন জানান, গৌরীপুর বাজারের সিএনজি স্ট্যান্ডসহ সব ধরনের চাঁদা আদায়ের নিয়ন্ত্রণ এ চেয়ারম্যানের কর্মীদের হাতে। এলাকায় সরকারি খাসজমি দখল এবং লিজ বাণিজ্যেও জড়িত তিনি। গৌরীপুর চাল বাজারে দোকান বরাদ্দের নামে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা কামিয়েছেন। সরকারি জায়গার অংশ বিশেষ বেদখল করে তিনি একটি রেস্টুরেন্টও নির্মাণ করেছেন। সব মিলিয়ে বৃহত্তর গৌরীপুর বাজারের নিয়ন্ত্রণ এ চেয়ারম্যান সিন্ডিকেটের হাতে। এমপি পরিবারের ছত্রছায়ায় তিনি কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বশির আহমেদ মিয়াজী বলেন, এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়ার পরিবারের কাছ থেকে তৃণমূল এবং দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তেমন সুবিধা পাননি। অনুপ্রবেশকারী এবং বিতর্কিতরাই এমপি পরিবারের ছত্রছায়ায় থেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

দাউদকান্দি উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. শাহজাহান খন্দকার বলেন, বিগত ১৫ বছরে যারা এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়া পরিবারের ছত্রছায়ায় আসতে পেরেছেন তারাই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওরা ১১ জন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে ছিল অতি সাধারণ। কিন্তু দলের এবং এমপির প্রভাবে তারা সবাই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তিনি বলেন, যারা ত্যাগী এবং একনিষ্ট আওয়ামী লীগ কর্মী তাদের অধিকাংশই দাউদকান্দিতে অবহেলিত।

তবে উল্লিখিত ১১ জনের প্রত্যেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, একটি কুচক্রী মহল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় পরিচ্ছন্ন সংসদ-সদস্য এবং দাউদকান্দি-মেঘনার উন্নয়নের রূপকার কর্মীবান্ধব নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা দাবি করে বলেন, এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কোনো অবৈধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নন। এমপি পরিবারের কোনো সদস্য দাউদকান্দি থেকে আর্থিক সুবিধা নেননি। তারা স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেন। এসব অভিযোগের কোনো প্রকার সত্যতা নেই। তাছাড়া এ নিয়ে কেউ প্রমাণ দিতেও পারবে না।

উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা আমাদের দলীয় নেতাকর্মী। রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। আমি এবং আমার পরিবার কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না। জনগণের কল্যাণে আমরা রাজনীতি করি। আমাদের পরিবারের নাম বিক্রি করে তারা কোনো অনিয়ম করেনি। কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। আপনারা সরেজমিন তদন্ত করে দেখেন। অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কোনো অপপ্রচারকারী মহল এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম