ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই এই মুহূর্তে
সিটি নির্বাচন: গাইবান্ধার মতো ভোট চায় না কমিশন-সিইসি * নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাগিদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ মুহূর্তে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সব সিটি করপোরেশনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এমন আশঙ্কাও আছে। সেই ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যাতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেই প্রস্তুতি রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ‘আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক’ বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। ওই বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব নির্বাচনকে প্রিলুড (ইসির জন্য পরীক্ষা) বলেও অভিহিত করেন। দীর্ঘ বক্তব্যে সিইসি সবকে তাদের দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, বৈঠকে পাঁচ সিটি করপোরেশনের মধ্যে গাজীপুর নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। বাকি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানকার বিস্তারিত ঝুঁকির বিষয়ে তথ্য জানাতে পারেননি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রসঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়, প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে এমন একজনের (সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম) সেখানে প্রভাব রয়েছে। তাকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ইসির পক্ষ থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের মতো আর কোনো নির্বাচন দেখতে চায় না ইসি।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চারজন নির্বাচন কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব; পুলিশের আইজি, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র মহাপরিচালক, ডিজিএফআই’র পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সেখানে আইজি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুলিশ কোনো প্রার্থীর জন্য পক্ষপাত আচরণ করে না। যদিও দুদিন আগে সিইসি বলেছিলেন, পুলিশ প্রার্থীর পক্ষ হয়ে কাজ করে।
বৈঠকের পর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি, তাদের কথাবার্তা শুনেছি। ওই রকম কোনো চ্যালেঞ্জের কথা বলেনি। আমরা আশা করছি, একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো আশঙ্কা দেখছি না। তবে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্ভব হলে, সেটা বিবেচনায় রেখে আমরা আমাদের সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার নেব। জঙ্গি এবং অন্যান্য বিষয় যা কিছু আছে, সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অপরদিকে বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, মাঠ থেকে তারা (প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা) পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, পাঁচ সিটি নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের কোনো নাশকতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো শঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই। তিনি বলেন, বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েনের প্রয়োজন হলে তারা তা অনুমোদন চেয়েছেন এবং কমিশন তাতে সম্মতি দিয়েছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাদের জানিয়েছে ইসি। এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, কমিশন বারবার বলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি যদি নির্বাচনের আইন-কানুন পরিপন্থি কোনো কাজ করে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে যাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখনো যাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তাদের বিষয়টা ত্বরান্বিত করতে বলা হয়েছে। কথাটা আজকেও বলা হয়েছে, যদি কেউ নির্বাচনি আইনের পরিপন্থি কোনো কাজ করে, তিনি যে বাহিনীর হোক, যেই ব্যক্তিই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সুতরাং সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। সবাই এ বিষয়ে কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন, যে যার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের পক্ষে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।
অপরদিকে ব্রিফিংয়ে পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করব। সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা প্রসঙ্গক্রমে এসেছে। নির্বাচনের সময় আমরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকব, নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দেবে, সেই নির্দেশনার আলোকেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। ভোটাররা নিঃসন্দেহে, নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও জানান তিনি। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করার জন্য। আমাদের সবার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন, আমাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। আমরা আমাদের সহযোগিতা প্রদানের জন্য এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রের আলোকে অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যেসব কার্যক্রম করা দরকার সেগুলো করা হবে। প্রয়োজনে আমরা রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে আমাদের কনসার্ন যে ইউনিটভিত্তিক কর্মকর্তারা আছেন তারা যোগাযোগ করে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন-অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা কিছু করা দরকার সবকিছু করার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা নির্বাচন করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি যে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আপনারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন-বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব; জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব; স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) প্রমুখ।