মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত সেন্টমার্টিন
৩ দিনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি
কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজার টেকনাফের সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তরা ৩ দিনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারেননি। সৌর প্যানেল নষ্ট ও লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় চালু করা যায়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। লবণাক্ত পানির প্লাবনের কারণে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিমাংশের সৈকত এলাকায় খাবার পানির সংকট শুরু হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি দ্বীপে। বিধ্বস্ত বাড়িঘরের বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে মানবেতর অবস্থায় আছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো সেবা মিলছে না ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দ্রুত এ অবস্থার অবসান এবং খাদ্য সংস্থানের দাবি করেছেন দুর্গত মানুষ।
একইভাবে উপজেলার আরেক উপকূলীয় ইউনিয়ন সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপের তিনটি ওয়ার্ডেও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ সেন্টমার্টিনের মতো অবস্থায় ভুগছেন। বাতাসের তীব্রতায় তার ছিঁড়ে বিশটির বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় ৩ দিনেও বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু হয়নি এখানে। উপড়ে যাওয়া গাছগুলো সরানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন দুর্গতরা। তবে সড়ক যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এনজিওগুলো এগিয়ে এসেছে। ফলে এখানে খাদ্য সংকট নিয়ে কারও অভিযোগ নেই।
ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং মিনাবাজার এলাকায় সদ্য তৈরি মুজিববর্ষের বেশ কয়েকটি ঘরও বিধ্বস্ত হয়েছে। এ বাড়িগুলো আবার দাঁড় করাতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। জেলা প্রশাসন জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করে সহযোগিতা দেওয়া হবে।
কিন্তু ৩ দিন অতিবাহিত হলেও কার্যত পর্যাপ্ত কোনো সহযোগিতা দ্বীপে পৌঁছেনি বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তবে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত বিধ্বস্ত এবং আংশিক বিধ্বস্ত মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১২শ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের জন্য ঢেউটিন সরবরাহ করছে জেলা প্রশাসন। আজকালের মধ্যে এসব নির্মাণসামগ্রী সেন্টমার্টিন পৌঁছবে। তবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কথা স্বীকার করলেও পানি সংকটের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নন্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল মান্নান বলেন-৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে প্রায় দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আরও দেড় হাজারের মতো বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এখনো সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
তবে বেসরকারি সংস্থা ১৮০টি পরিবারকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারিভাবে ঢেউটিন বা সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। শুকনো খাবারের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ঢেউটিন ও অন্যান্য সহযোগিতা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এসে পৌঁছেনি। এরপরও সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪০০ বান ঢেউটিন, ঘর প্রতি তিন হাজার নগদ টাকা বিতরণ করতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (আজ) তা দ্বীপে পৌঁছবে আশা করা যায়। দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।
সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিজিবি : সেন্টমার্টিনে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান। মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের সেন্টমার্টিন বিওপির সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি।
এ সময় বিজিবির সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, কক্সবাজার রিজিওয়ন কমান্ডার, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন অধিনায়কসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম।
সেন্টমার্টিনে সহযোগিতায় নৌবাহিনী : দ্বীপে মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মঙ্গলবার দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে চিকিৎসা ও ওষুধসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ছোলা, লবণ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় মেডিকেল টিম গঠন করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। পরিস্থিত উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌবাহিনীর সহকারী পরিচালক সাইদা তাপসী রাবেয়া লোপা।
সেন্টমার্টিনের মানুষ ত্রাণ চান না : ক্ষতিগ্রস্ত সেন্টমার্টিনের মানুষ আর ত্রাণ চান না। তাদের এখন একমাত্র চাওয়া-বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি যেন পুনর্নির্মাণ করতে পারেন তেমন সাহায্য। পাশাপাশি দ্বীপ রক্ষায় চারপাশ হতে টেকসই একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ। তবে বিপদের মুহূর্তে যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তাৎক্ষণিক ত্রাণ দিয়ে দ্বীপের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা। সেন্টমার্টিন পশ্চিম পাড়ার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ যুগান্তরকে জানান, এ মুহূর্তে সেন্টমার্টিনবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দ্রুত পুনর্বাসন।
প্রয়োজন সরকার বা কোনো সংস্থার পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের ব্যবস্থা করে দেওয়া। আরেক বাসিন্দা বলেন, যদি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণ বা কোনো কিছু দেওয়া হয় তাহলে কার্যক্রমে সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা প্রতিনিধির উপস্থিতি কামনা করছি। নইলে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি হতে পারে। টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী মঙ্গলবার জানান, আগামীকাল থেকে সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য টিন, বাঁশ ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।