Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ইআরএফ’র কর্মশালায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী

মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে

অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে জিম্মি অর্থনীতি ও বাজার * সিন্ডিকেট ধরতে না পারলে মন্ত্রীদের দায়িত্বে থাকা উচিত না * আমলারা যা বলেন, মন্ত্রীদের সেটাই করতে হয় * মন্ত্রী দুর্বল আর সচিব সবল হলে সেখানে মন্ত্রীর কোনো ভূমিকা থাকে না * সরকারি ব্যাংকের টাকা নিয়ে অনেকে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হচ্ছেন, তাদের তালিকা প্রকাশ করা উচিত * ব্যবসার নামে লুটপাট চলছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, অর্থনীতি ও বাজার-এ দুই জায়গায়ই তৈরি হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছে এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। এই সিন্ডিকেট ধরতে না পারলে এবং ভাঙতে না পারলে আমাদের মতো মন্ত্রীদের দায়িত্বে থাকা উচিত না। শুধু তাই নয়, আমলারা যা বলেন, মন্ত্রীদের সেটাই করতে হয়। মন্ত্রী দুর্বল আর সচিব সবল হলে সেখানে মন্ত্রীর কোনো ভূমিকা থাকে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তার মতে, ব্যবসার নামে লুটপাট চলছে। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা। ইআরএফ ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালার বিষয় ছিল ‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এরপরও দেশে আজ যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজ যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে-এগুলো সাংবাদিকদের আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাজারে দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কোনো কিছুর অভাব নেই। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল, ডাল, তরিতরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবকিছুতেই পরিপূর্ণ। এরপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে।’

কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, অবাক লাগে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে লাখ লাখ বেকার। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ মওকুফ করা হয় না। কাদের ঋণ মওকুফ করা হচ্ছে? যারা ব্যাংক থেকে লাখ-কোটি টাকা নিয়ে খেলাপি হয়েছে, তাদেরটাই বারবার মওকুফ করা হচ্ছে। তারা মাফ পেয়ে আবারও ঋণ নিচ্ছে। বড় খেলাপিদের এই ঋণগুলো এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের যদি দেওয়া হতো, তবে তাদের ব্যবসা আরও সমৃদ্ধিশালী হতো। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি আগেও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি, বড় খেলাপিদের ঋণ যাতে মওকুফ করা না হয়। কিন্তু বারবারই তাদের সুবিধা দেওয়া হয়। কারা ব্যাংকের মালিক হয়েছেন, কীভাবে হয়েছেন-এগুলো আপনাদের (সাংবাদিক) তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আমার ঢাকা শহরে রাজনীতির বয়স ৫০ বছর। আমি দেখেছি অনেকে ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরত, অনেকের কাছে টাকা ছিল না, অন্যের কাছে সিগারেট চেয়ে খেত-আজ তারা ব্যাংকের মালিক। তারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছে। আমি মনে করি, যারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত তাদের নামগুলো প্রকাশ করা। কেন ওনারা করেন না, আমি জানি না, এটা একটা বড় প্রশ্ন।

তিনি আরও বলেন, আজ আমরা দেখছি, যে ব্যক্তি লুটপাট করে বড়লোক হচ্ছেন, তিনি আরও সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে কিছু ব্যক্তির কাছে ব্যাংক থেকে শুরু করে পুরো অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেট আমাদের ভাঙতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে আপনারা যারা সাংবাদিক রয়েছেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেভাবে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, ১৭ কোটি মানুষের দুঃখ-কষ্ট যদি লাঘব করতে না পারি; তবে আমাদের মতো লোকের মন্ত্রী থাকা উচিত না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। কারণ, বাজারে পণ্যের যে দাম, তার পকেটে সেই টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। আমাদের চিনির অভাব নেই, আমাদের চালডাল, তরিতরকারির অভাব নেই।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সুগার মিলের যারা আখচাষি, তারাই সুগার মিলের শ্রমিক। যে কারণে মিলগুলোয় লুটপাট হয়েছে আর লুটপাটের কারণে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের চিনির মিলগুলো যদি যথারীতি চালাতাম, তবে বাজারে চিনির দাম এত বাড়ত না। এখন চিনির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, চিনি খুঁজে পাওয়া যায় না-এগুলো হতো না। একইভাবে আমাদের এসএমই খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা মুড়ি-চানাচুর বিক্রি করে চলতেন, সেখানেও দেশের বড় বড় কোম্পানি হাত বাড়িয়েছে। যে কারণে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। উন্নত দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের উন্নত বিশ্বের কাতারে যেতে হলে বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে, আমাদের অর্থনীতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তাহলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারব। দেশে যদি ক্ষুধা, দরিদ্র ও বেকার সমস্যা থাকে; তবে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ করতে পারব না। আমাদের এদিকে নজর রাখতে হবে। আমরা যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের উত্তরোত্তর এগিয়ে নিতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনকে আগামী বাজেটে ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া উচিত। যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকার অপচয় হচ্ছে, এটি না হলে এই টাকা দেওয়া কোনো বিষয় না। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বাফার এক গুদামের কাজ তিন মন্ত্রীর আমলেও শেষ করতে পারেনি, এটি মন্ত্রীদের দোষ নয়, আমলাদের দোষ। কারণ, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এখনো কমেনি। আমলারা যেটা বলেন, সেটাই আমাদের করতে হয়। মন্ত্রী যদি দুর্বল হন আর সচিব যদি সবল হন তবে সেখানে মন্ত্রীর কোনো ভূমিকা থাকে না।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মাদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। মূল প্রবন্ধে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম