সিটি নির্বাচন: সিলেট
শীর্ষ দুই দলে ‘মোশতাক’ ‘উকিল সাত্তার’ আতঙ্ক
আবদুর রশিদ রেনু, সিলেট
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে অন্যরকম আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশের শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। ভোটযুদ্ধে নেমে প্রতিপক্ষকে সামলানোর আগেই ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে উভয় দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন পর্যবেক্ষণে রাখছেন স্থানীয় নেতাদের, তেমনই বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন দলের হাইকমান্ড। বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির সব জাতীয় সংসদ-সদস্যের সঙ্গে পদত্যাগ করলেও পরবর্তী সময়ে দলের সঙ্গে ‘বেইমানি’ করে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ব্যক্তিস্বার্থে সিসিক নির্বাচনে এবার কে হচ্ছেন ‘উকিল সাত্তার’, তা নিয়ে সতর্ক বিএনপি। মেয়র আরিফ রোববার পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও নগর বিএনপির অনেক নেতাই কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। যারা একসময় নগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তবে মেয়র আরিফের সিদ্ধান্তের ওপর আটকে আছে এবারের সিসিক নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি। আরিফ নির্বাচনে প্রার্থী হলে বদলে যাবে প্রচারণার দৃশ্যপট।
এ বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় থেকে বিএনপির রাজনীতি করছি। সিলেটবাসী আমাকে ভালোবেসে প্রতিকূল পরিবেশে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত করেছেন। নগরবাসীর চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়ন করা আমার দায়িত্ব। তাই ৪২টি ওয়ার্ডের জনগণ আসলে কী চান, তা জানতে চাই। ২০ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। শুধু সিটি নির্বাচন নয়, সবকিছু থেকে অবসরে চলে যেতে পারি। আবার জনগণের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে নির্বাচনও করতে পারি। ২০ মে স্থানীয় রেজিস্ট্রারি মাঠে সভা ডেকেছেন আরিফ। ওইদিন নির্বাচন করবেন কি না, তা পরিষ্কার করবেন তিনি।
অপরদিকে টানা দুবার পরাজয়ের পর এবার হারের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে মেয়র পদ পুনরুদ্ধারে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একসময়ে সিলেটের জনপ্রিয় নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান শেষ দুটি নির্বাচনে পরাজিত হন আরিফের কাছে। এবার আওয়ামী লীগ নতুন প্রার্থী দিয়েছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতারা খতিয়ে দেখছেন আগের দুটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণগুলো। এর মধ্যে ২০১৩ সালে আরিফ বিজয়ী হন ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ওই নির্বাচনের আগে ঢাকায় হেফজতে ইসলামের ঘটনার প্রভাব পড়ে নির্বাচনে। ব্যক্তি কামরানকে ভালো পেলেও একাধিক ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট দেন। যার ফায়দা লুটেন আরিফ। আর সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’-এর শিকার হন কামরান। যার কারণে মাত্র ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারেন নৌকার প্রার্থী। কামরানের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, ওই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে কামরানের পরাজয় ঠেকানো যেত। দলে থাকা ‘খন্দকার মোশতাক’-এর প্রেতাত্মারা নৌকার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নির্বাচনের পর বিষয়টি বুঝতে পারে দলের হাইকমান্ডও। তাই শোকজ করা হয় বেশ কয়েকজন নেতাকে।
এবার যাতে এমনটি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। বৃহস্পতিবার সিলেটে অনুষ্ঠিত কর্মিসভায় নানক বলেন, মোশতাক বাহিনীর কারণেই বিগত দিনে এই নগরীর অভিভাবক (সাবেক মেয়র) বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়েছে। দলে খন্দকার মোশতাকের অনুসারী যেমন রয়েছে, তেমনই মুজিবাদর্শের লড়াকু এবং ত্যাগী কর্মীরাও রয়েছেন। এবার সেই সুযোগের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। দলের প্রতিটি ওয়ার্ডে সভাপতি এবং সম্পাদকের ভোটকেন্দ্রগুলোয় সজাগ দৃষ্টি থাকবে আওয়ামী লীগের। ভোটকেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী পুরস্কার এবং তিরস্কার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না যাতে করে রংপুরের পরিণতি ভোগ করতে হয়।
এদিকে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে নানক সিলেট সিটি করপোরেশনকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের প্রচারণার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। প্রত্যেক অঞ্চল প্রধানকে সহযোগিতায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত পৃথক টিম। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নির্বাচনে প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান জামিল। এছাড়াও নানক দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অধীনে আরও চারটি উপকমিটি গঠন করে দিয়ে যান। কমিটিগুলো হলো-দপ্তর উপকমিটি, প্রচার উপকমিটি, মিডিয়া উপকমিটি ও লিগ্যাল এইড উপকমিটি।
মেয়র পদে ৪ ও কাউন্সিলরে ২৬৭ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ : সিলেট সিটি নির্বাচনে রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র পদে ৪ জন এবং কাউন্সিলর পদে ২৬৭ জন মনোনয়ন ফর্ম কিনেছেন। মেয়রপ্রার্থী ৩ জন স্বতন্ত্র ও কাউন্সিলর পদে ২৬৭ জনের মধ্যে ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (মহিলা কাউন্সিলর) ৫৯ জন এবং ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২০৮ জন মনোনয়ন ফর্ম নিয়েছেন। মেয়র পদে মনোনয়নপত্র ক্রয়কারীরা হলেন-মোহাম্মদ আবদুল হানিফ ওরফে কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার ও হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা)।