Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডি

তপ্ত রোদে খোলা আকাশের নিচে সংগ্রাম

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তপ্ত রোদে খোলা আকাশের নিচে সংগ্রাম

বৈশাখের প্রখর রোদ তাদের কাছে কিছুই নয়। বিশাল এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের আরও অনেক পরীক্ষা দিতে হবে, তা তারা জেনে গেছেন। এখন চলছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম। অসহনীয় গরমে খোলা আকাশের নিচে চৌকির ওপর ঠিকানা। বেচাবিক্রি যাই হোক, উঠে দাঁড়ানোর এই চেষ্টা তাদের প্রবল। এছাড়া আর কোনো পথ যে তাদের খোলা নেই।

তবে তারা জানান, প্রখর রোদ মাথার উপর রেখে এভাবে বসে বেচাবিক্রি অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। তাছাড়া গরমের কারণে দুপুর পর্যন্ত তেমন ক্রেতা আসেন না। আছরের পর থেকে ক্রেতা সমাগম হয় এই অস্থায়ী মার্কেটে। আগে পাইকারি ব্যবসা করলেও মালামাল না থাকায় এখন তারা মনোযোগ দিচ্ছেন খুচরা বিক্রিতে।

প্রায় ৩০ বছর ধরে বঙ্গবাজারে ব্যবসা করেন সোহরাব বেপারী। তিনি ছিলেন পাইকারি বিক্রেতা। কিছুদিন আগেও লাখ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করেছেন। ভয়াবহ আগুনে সোহরাব বেপারীর চারটি দোকান ও দুটি গোডাউনে দেড় কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে তিনি বঙ্গবাজারে খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে বসেছেন।

রোববার দুপুরে সোহরাব বেপারী যুগান্তরকে বলেন, শাল, লুঙ্গি, গেঞ্জিসহ বিভিন্ন আইটেম ছিল দোকানগুলোতে। এখন এগুলোর কিছুই নেই। বঙ্গ হোমিও মার্কেটে একটি গোডাউন থেকে কিছু মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সেগুলো নিয়েই বসেছি। বেচাবিক্রি দিন দিন বাড়ছে। বৃহস্পতিবার তার দোকানে বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৭শ টাকা, শুক্রবার ২৭ হাজার টাকা, শনিবার ৪৫ হাজার টাকা এবং রোববার দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৭-৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এভাবে রোদে বসে কখনো ব্যবসা করিনি তো। যে কারণে বসে থাকাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। উপরে শামিয়ানা টানানোরও কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। শুনেছি ঈদের পর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মালিক সমিতি মিটিং করবে। তখন বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নির্মাণকাজ শুরু হলে তো আর এখানে বসতে দেবে না। আশপাশে কোনো দোকানও পাচ্ছি না। এ অবস্থায় রীতিমতো ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ক্ষতিপূরণের চেয়ে আমাদের প্রয়োজন বসার একটি স্থায়ী জায়গা। বসতে পারলে একদিন ঠিকই ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম। বঙ্গবাজারের আরেক ব্যবসায়ী হাজী সালাহ উদ্দিন। তার দুটি দোকানের ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়েছে। ছেলেকে নিয়ে চৌকি পেতে বসেছেন ঈদের আগে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়। তিনি বলেন, তীব্র গরমে এখানে বসা দায়। আগে পাইকারি বিক্রি করতাম। এখন সেই পরিমাণ মালামাল নেই, তাছাড়া পাইকারও আসছে না, যে কারণে খুচরা বিক্রির দিকে মনোযোগ দিচ্ছি আমরা। শুধু এই দুই ব্যবসায়ীই নন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শাহীন মুন্সি, শমসের রহমান হৃদয়, জসিম, ফারুকসহ অন্যরাও জানালেন, গরমের কারণে বঙ্গবাজারে বসা কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাদের। আর নিচে বালু থাকায় বাতাসে বালু উড়ে এসে পড়ছে মালামালের ওপর।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ফারুক যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবাজারে সাধারণত রমজানের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাইকারি বেচাকেনা হয়। ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় পাইকারি ব্যবসায় ধস নামে। এখন যেসব মালামাল আছে, সেগুলো খুচরা বিক্রির চেষ্টা করছি আমরা।

আগুনের ধাক্কা কাটিয়ে ৯ দিন পর ১২ এপ্রিল থেকে পোড়া মার্কেটে চৌকি পেতে বেচাকেনা শুরু করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। নতুন করে বসলেও আগের মতো ক্রেতা সমাগম হচ্ছে না। তবে খুচরা ক্রেতারা আসছেন। আছরের নামাজের পর ধীরে ধীরে ক্রেতা সমাগম বাড়ে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো জায়গাটা ত্রিপল (শামিয়ানা) দিয়ে ঢেকে দিতে পারলে গরমে তাদের কষ্টটা কম হতো। তিনি বলেন, এই কমপ্লেক্সে প্রায় চার হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। এই মুহূর্তে সবার জন্য স্থায়ী স্থাপনা করা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি তাদের জন্য কিছু একটা করার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম