প্রধান দলগুলো অংশ না নিলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যে নামতে পারে: সিইসি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ফাইল ছবি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমেও যেমন পুরোপুরি সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়। বিষয়টা আপেক্ষিক হতে পারে। ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা গেলে নিরাপদে নির্বাচন করা সহজ হয়। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, বড় দলগুলো অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত ভিত্তি) নিয়ে কোনো সংকট হবে না, তবে ল্যাজিটিম্যাসি (গ্রহণযোগ্যতা) শূন্যের কোঠায় চলে যেতে পারে।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের সভায় জাতীয় সংসদের তিনশ আসনে কাগজের ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের কথা জানান সিইিসি। এ সময় তিনি ইভিএমে ভোটগ্রহণের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। আমরা চেষ্টা করব সীমিত সাধ্যের মধ্যে। তবে এটা সত্য-ব্যালটে রিগিং প্রতিহত করা যত কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই অতটা কষ্টকর নয়। অনেকেই বলেন, রাতে ভোট হয়ে গেছে, এটা সত্য কি না, আমি জানি না। তবে একটা পারসেপশন ক্রিয়েট (মানুষের মধ্যে ধারণা) হয়ে গেছে যে, রাতেও ভোট হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু ইভিএম সকাল ৮টার আগেই চালুই হবে না। ইট ইজ সো অটোমেটিক। ন্যূনতম সুযোগ নেই। এদিক থেকে ইভিএমে সুযোগ ছিল, যেটা ব্যালটে নেই। আমরা তুলনামূলক বললাম। আবার ইভিএম ব্যয়বহুল, ব্যালট তত নয়। তবে কোনো চাপ থেকে কাগজের ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের চ্যালেঞ্জ কী-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএম অথবা কাগজের ব্যালটে নির্বাচন আয়োজন করা মোটেই বড় চ্যালেঞ্জ নয়। সবাই বা প্রধানতম দলগুলো নির্বাচনে অংগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটাই হচ্ছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, বড় দলগুলো অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত ভিত্তি) নিয়ে কোনো সংকট হবে না, তবে ল্যাজিটিম্যাসি (গ্রহণযোগ্যতা) শূন্যের কোঠায় চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, ল্যাজিটিম্যাসি ও লিগেলিটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। লিগেলিটি হলে নির্বাচন শুদ্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু ল্যাজিটিমিট হয়তো হবে না।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে ইসি চ্যালেঞ্জের মুখে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সেটা আমরা এখনো বলতে পারব না। আমরা প্রথম থেকে বলেছি, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াস শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা জোর করে কাউকে নির্বাচনে আনতে পারছি না। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আপিল আমরা করেই যাব। আমাদের কথায় যে সাড়া দেবেন তাও নয়। সংকট সরকারের সঙ্গে দলগুলোর হয়ে থাকে। বা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে। আমরা বলব, রাজনৈতিক দল হিসাবে আপনারা সংকটগুলো নিরসন করে নির্বাচনকে সহজ এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য অনুকূল করে দেন।
সব দলকে নির্বাচনে আনতে ইসির কোনো ভূমিকা আছে কি না, এর জবাবে সিইসি সরাসরি বলেন, না, ইসির রোল প্লে করার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আমাদের আহ্বান, আপনারা নির্বাচনে আসেন। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন। সংলাপ করে বিরাজমান কোনো দূরত্ব যদি থাকে, কোনো সংশয় যদি থাকে এবং বিরোধ থাকে, তা মিটিয়ে ফেলে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না-এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি সিইসি। তিনি বলেন, এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। এককথায় বলেছি, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ভোটকেন্দ্রে ভারসাম্য রাজনৈতিক দলই তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভারসাম্য সৃষ্টি কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো করে না, সেখানে সনাতন প্রক্রিয়া হচ্ছে দলগুলো থাকবে, তাদের একনিষ্ঠ এজেন্টরা থাকবে। তারা মিলে ভোটগ্রহণের এই সাতটা, আটটা ঘণ্টা কাজ করবে। তারা যদি না থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোট কক্ষে থাকবে না। কাজেই বাইরেরটা আমরা দেখতে পারব। কিন্তু ভেতরেও কারচুপির সুযোগ থাকে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলো যদি আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি এনে দেয়, তাহলে নির্বাচন করা আমাদের জন্য সহজ হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসার বিষয়ে সিইসি বলেন, আমরা অর্থ বরাদ্দ পেলে ইভিএমে ভোট করতাম। প্রথমে আমরা নয় হাজার কোটি টাকা চেয়েছি এবং পরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা চেয়েছি। সরকার বিভিন্ন কারণে ওই টাকা দিতে রাজি হয়নি। তখন দেখলাম যে আমাদের হাতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার ইভিএম আছে। ওই সংখ্যক ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তখন আমরা দ্বিধাবিভক্ত হলাম। দুজন কমিশনার জোরেশোরেই বললেন, ওই ইভিএম দিয়ে আমরা ২৫ থেকে ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ করি। আমরা তিনজন আবার বললাম না, করছি না। যার ফলে এই সিদ্ধান্ত এলো। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম ইভিএম-এর লাইফটাইম শেষের দিকে, যদি এ মেশিন ম্যালফাংশন করে, তাই আমরা ইভিএম থেকে সরে এলাম। দীর্ঘসময় আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণরূপে আমাদের সিদ্ধান্ত, কারও চাপে নয়।
নির্বাচন কমিশন আগাম ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগাম ভোটের কোনো প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি না। আমাদের মধ্যে একাডেমিকলি আলোচনা হয়েছে, কাগজ কেনা হয়েছে কি না, কলম কেনা হয়েছে কি না-এই আলোচনাগুলো যখন হয়েছে, তখন আলোচনা এসেছে হঠাৎ সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। এটা একাডেমিকলি আলোচনা হয়েছে। ওটাকে কেউ মিসকনসিভ করে প্রচার করেছে যে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে। এটা একেবারেই সঠিক নয়। আমরা ডিসেম্বরের শেষ অথবা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি।