Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বঙ্গবাজারে আগুন

আর্তনাদ থামছে না ব্যবসায়ীদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আর্তনাদ থামছে না ব্যবসায়ীদের

ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাড়খার বঙ্গবাজার

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পরও আর্তনাত থামছে না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। সেখান থেকে তারা পোড়া ও অর্ধেক পোড়া এবং অক্ষত মালামাল সরাচ্ছেন। কেউ কেউ ভবনের ওপর থেকে মালামাল ফেলছেন, আবার কেউ মাথায় করে নিচে নিয়ে আসছেন। তবে অধিকাংশ কাপড়ই পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের ফেলে রাখা পোড়া কাপড়ের স্তূপ জমছে এনেক্সকো ভবনের সামনে।

এই স্তূপ থেকে হতদরিদ্র মানুষরা বেছে বেছে তুলনামূলক কম পোড়া কাপড় নিজেদের জন্য নিচ্ছেন। এদিকে এনেক্সকো ভবন থেকে অনেক ব্যবসায়ী ভেজা পোশাক সামগ্রী উদ্ধার করেছেন। ভেজা কাপড়গুলো বিক্রির উপযোগী করতে বাসা-বাড়ির ছাদে শুকাচ্ছেন।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুন তিন দিনেও সম্পূর্ণ নেভানো যায়নি। বৃহস্পতিবারও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট বঙ্গবাজার এলাকায় কাজ করেছে। এদিন দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বলেন, আগুন এখনো সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা যায়নি। আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। মূলত এখন ডাম্পিংয়ের কাজ করছি। আগুনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর সময় নিচ থেকে আবারও কিছু কিছু জায়গায় আগুন জ্বলে উঠছে। পরে সেসব ছোট আগুন (অল্প জায়গায় জ্বলছে এমন) ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নির্বাপণ করছেন। ছোট ছোট আগুন নির্বাপণ করা হলে ফায়ার সার্ভিস এই অগ্নিকাণ্ড পুরোপুরি নির্বাপণের ঘোষণা দেবে।

ঘটনাস্থলে কর্মরত ফায়ার ফাইটাররা বলছেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে এখন আর আগুন নেই। মাঝে মধ্যে অল্প ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তবে এনেক্সকো টাওয়ারের পঞ্চমতলায় এখনো মাঝে মধ্যে ছোট ছোট আগুন দেখা যাচ্ছে মালামাল সরানোর সময়। সেগুলো এখন আমরা নেভানোর চেষ্টা করছি।

এনেক্সকো টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী মো. সালাম বলেন, ভবনটির পাঁচতলায় এখনো ধোঁয়া উড়ছে, আবার মাঝে মধ্যে আগুনও জ্বলে উঠছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তবে পানির সংকট থাকায় সময় লাগছে বেশি। এছাড়া মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আজ নিজেদের দোকান পরিষ্কার করছেন। ভেতর থেকে ভালো এবং পোড়া মালামাল বের করে নিয়ে আসছেন।

এদিকে বঙ্গবাজার মার্কেটের এক পাশের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। বঙ্গবাজার মার্কেট এবং এনেক্সকো টাওয়ারের সামনে দিয়ে কেউই প্রবেশ করতে পারছেন না। শাহবাগ থানা পুলিশ এসে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে মার্কেট এলাকায় সর্বসাধারণের যাতায়াত সীমিত করেছে।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে সর্বসাধারণের যাতায়াত সীমিত করার জন্য এই ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। সবার নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে এই কাজ করেছি।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, আদর্শ মার্কেটের প্রথম ফ্লোরে আমার দুটি দোকান ছিল। দোকানে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বের করতে পারিনি। মোহাম্মদ রনি নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এনেক্সকো টাওয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ডে শাড়ির দোকান ছিল। আল্লাহর রহমতে সবই অক্ষত আছে। তবে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের ব্যবহার করা পানিতে পোশাকগুলো ভিজে গেছে। ভেজা পোশাকগুলো উদ্ধার করে রোদে শুকাচ্ছি।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটের সহদপ্তর সম্পাদক পারভেজ ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে ধারদেনা এবং ব্যাংক লোন নিয়ে দোকানে শাড়ি কাপড় উঠাই। কয়েক ঘণ্টার আগুনে সব শেষে হয়ে গেল। সোমবারও ছিলাম আমি কোটিপতি। মঙ্গলবারের ভোরের আগুনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। মার্কেটের ভেতর আমার লাখ লাখ টাকার পোশাক ছিল। ছিল নগদ টাকা। এখন আমার বাজার করার টাকাও নেই। ২৪ বছরের প্রিয় প্রতিষ্ঠানে এসে এখন আমার শরীরে কয়লা মাখতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন চাচ্ছিল এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে। আমরাও চাই সেটা হোক। তবে এর আগে আমাদের নামে দোকান বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু দোকান বরাদ্দ না দিয়েই সিটি করপোরেশন বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে রিট করি। আদালত আমাদের পক্ষে রুল রাজি করেন। আদালতের নির্দেশেই আমরা এখানে ব্যবসা করছিলাম।

পুলিশের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম : বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাধারণ ডায়েরি করতে থানায় যেতে হবে না। তাদের সুবিধার্থে ঘটনাস্থলের কাছেই অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম বসিয়েছে রমনা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার এনেক্সকো ভবনের পাশেই এই বুথ বসানো হয়। বিষয়টি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার উল্লেখ করে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এখানে জিডি ছাড়াও ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

সহকারী পুলিশ কমিশনার বায়জীদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কষ্ট করে অভিযোগ জানাতে আর থানায় গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। তাদের সেবা দেওয়ার জন্যই অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম বসিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই তাদের সুবিধা অনুযায়ী সেবা নিতে পারবেন। সেবা নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও দোকানের কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে।

একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত : বঙ্গবাজারে আগুন নেভানোর সময় পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন মো. রাজু, শাওন, শাহাদাৎ হোসেন। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তে তাদের তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই মাসুদুল হাসান। অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে বংশাল থানার এসআই ইস্রাফিল হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই স্থানীয় উৎসুক জনতা, কেউ ব্যবসায়ী নন।

আলামত সংগ্রহ করল সিআইডি : বঙ্গবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন টিম। আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের ছবি তোলেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে এনেক্সকো টাওয়ারের ডানপাশে পুড়ে যাওয়া মার্কেটে সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যদের আলামত সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এখানে ৬ জনের একটা দল এসেছি। এখানের পোড়া স্তূপ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা এখানে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি।

প্রসঙ্গত. মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে আশপাশের আরও কয়েকটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এখনো আগুন পুরোপুরি নেভার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ফায়ার সার্ভিস।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম