নিঃস্ব ব্যবসায়ীদের বুকফাটা আর্তনাদ আর চোখের জল
‘আমরা এখন ভিখারি’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বঙ্গবাজার মার্কেট যখন পুড়ে ছাই, তখন অশ্রুসজল চোখে কার্জন হলের সামনে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ। একপর্যায়ে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না। বুকফাটা আর্তনাদে ভেঙে পড়লেন। শব্দ করে শুরু করলেন কান্না। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমি ভিখারি হইয়া গেছি ভাই, আমার সব শেষ। আমার আর কিছু নাই, আমার শেষ সম্বলও শেষ হইয়া গেছে।’
কিছুক্ষণ থামলেন। তারপর আবার চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন, ‘আমার দুইটা বাচ্চা ভাই। আমি ওগো কেমনে খাওয়ামু?’ এবার কপাল চাপড়াতে শুরু করলেন।
নূর মোহাম্মদকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন তার এক বন্ধু। কিন্তু কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছিল না। বঙ্গবাজারে তার দুটি দোকান ছিল। সকালে খবর পেয়ে দৌড়ে এসে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখায় চোখের সামনেই ছাই হলো তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। মেয়েদের বিদেশি টপসের দোকান দুটোতে লাখ লাখ টাকার মালামাল ছিল।
কত টাকার মালামাল ছিল জানতে চাইলে বলেন, ওই হিসাব করা যাইব না ভাই। আমার জীবন শেষ...।
মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবাজারের আগুনে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে ছাই হওয়ার করুণ কাহিনীতে ভারী গুলিস্তান এলাকার বাতাস। চোখের জলের বন্যা বইছে বঙ্গবাজারের চারপাশে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কষ্ট ভাগ করে নিতে চেয়েছেন।
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক ব্যবসায়ী হাজি মো. মজনু মল্লিক। তিনি বলেন, আমার তিনটা দোকান ছিল লেডিস টপসের।
সকাল ৬টার দিকে আমি আগুন লাগার খবর পাই। মার্কেটের সামনে এসে দেখি ইসলামিয়া মার্কেটের সামনে আমাদের কিছু মাল রাখা ছিল। কিন্তু আগুন এত দ্রুত ছড়ায় যে, সব পুড়ে যায়। এত ভয়াবহ আগুন আগে দেখিনি।
তিনি বলতে থাকেন, ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করছিল আগুন নেভাতে। সাধারণ মানুষও চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।
কত টাকার মালামাল পুড়েছে জানতে চাইলে তিনি এবার চোখের পানি ফেলে বলেন, ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে আমার। বলা হয়, মাল যায় যার ইমান যায় তার, এটা বলাও ঠিক না। আমি রোজাদার মানুষ। কিভাবে আগুন লাগছে, কিভাবে এমন হলো-এটা আল্লাহ জানেন।
মার্কেটের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন আহাদ। বলেন, আমার বাসা বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশেই। সাড়ে ৬টার সময় চিল্লাচিল্লি। বাইরে বের হয়ে দেখি ধোঁয়া উড়তেছে। তাড়াতাড়ি মার্কেটে আসি। তখনও আমার এক দোকানে পুরোপুরি আগুন লাগেনি। আমি দৌড় দিয়া দোকানে যাই, ক্যাশবাক্স আনার জন্য। কিন্তু দোকানের কাছে যেতেই উপরের তলার একটা এসি বিস্ফোরিত হয়। আমার হাত, পিঠে আগুনের ছ্যাঁকা লাগে। পুড়ে যায়। তাও আমি যাব ভেতরে কিন্তু দোকানদার এক চাচা আমারে টাইনা বাইরে নিয়া আসেন।
বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই উপর থেকে বিল্ডিংয়ের একটা অংশ খসে পড়ে। চাচা আমারে বাইর না করলে আমার মাথায় পড়ত। এরপরও ভেতরে যাইতে চাইছিলাম। ক্যাশে আমার ১৭-১৮ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু ততক্ষণে আগুন লেগে যায়। এরপরও আমি ভেতরে যাই লাফ দিয়া। কিন্তু ক্যাশবাক্স আর খুঁজে পাইনি। এর উপর অনেক ইট, পলেস্তারা পড়ে আছে। কিন্তু আগুনের তাপ থাকায় আর বেশি সময় থাকতে পারিনি।
অনেক ব্যবসায়ীর দোকানের ক্যাশে রাখা টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সরেজমিন বঙ্গবাজারে গিয়ে এমন অনেক ব্যবসায়ীর বুকফাটা আর্তনাদ আর আহাজারি দেখা গেছে।