বগুড়ায় আলোচিত ঘটনা
বিচারককে স্কুলে ডাকা হয়নি, তিনি নিজেই এসেছিলেন
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অভিভাবককে অপদস্থ করার অভিযোগে বদলি হওয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনকে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বা অন্য কেউ ডাকেননি। তার মেয়েকে ‘উত্ত্যক্তকারী’ সহপাঠীদের বিচার চাইতে তিনি নিজেই স্কুলে এসেছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তার অগ্নিমূর্তি ও সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবদুল মোন্নাফ মামলার ভয়ভীতি দেখানোর কারণে এক অভিভাবক সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিচারকের পা ধরতে যান। যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন এবং অভিভাবক রেবেকা সুলতানা।
‘আমি কাউকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিনি’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার যুগান্তরে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রিপোর্টটি করা হয়। যেখানে তিনি তার ভাষায় ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমি স্কুলে যাইনি আমাকে স্কুলে ডেকে নেওয়া হয়েছে।’
যুগান্তরকে দেওয়া বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের উল্লিখিত বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন বৃহস্পতিবার বলেন, তদন্তাধীন বিষয়ে তিনি কোনো কিছু বলবেন না।
একপর্যায়ে তিনি কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে যুগান্তরকে বলেন, বিচারক তার মেয়েকে ‘উত্ত্যক্তকারী’ সহপাঠীদের বিচারের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেদিন তাকে কেউ ডাকেননি। তিনি নিজের ইচ্ছায় স্কুলে এসেছিলেন। এ সময় তিনি খুব এক্সসাইটেড ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সাইবার মামলার ব্যাপারে কথা বললে শিক্ষার্থী মরিয়ম মাহীর মা রেবেকা সুলতানা ভয় পান। তখন তিনি মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা বরে বিচারকের পা ধরতে যান। অবশ্য এ সময় অপর একজন অভিভাবক তাকে নিবৃত্ত করেন। এছাড়া বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে কোনো শিক্ষক, জজ বা অন্য কেউ রেবেকা সুলতানাকে পা ধরতে বাধ্য করেননি। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন অভিযোগ করায় পুলিশ কর্মকর্তা মোন্নাফ এসেছিলেন।’
এ প্রসঙ্গে স্কুলের শিক্ষার্থী মরিয়ম মাহীর মা রেবেকা সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি ঘটনার দিন প্রকাশ্যে সব বলেছি। পরিস্থিতির কারণে ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি বিচারকের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হই। এছাড়া শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার সময় তার মেয়ে মরিময় মাহী বা অন্যরা বিচারকের মেয়েকে উত্ত্যক্ত বা কটূক্তি করেনি।’
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনিসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেন। সেখানে তারা ঘটনার দিন যা বলেছিলেন আজও সেইসব কথা বলেছেন। মাহীর মা বলেন, পত্রিকায় দেওয়া স্টেটমেন্টে বিচারক অসত্য তথ্য দিলে আমাদের কিছু করার নেই। আল্লাহ সব কিছু জানেন। তিনি ন্যায় বিচারক।’
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে যুগান্তরকে বলেন, স্কুলে এক সহপাঠীর সঙ্গে অন্যরা দুষ্টুমি বা মজা করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সেদিন অভিভাবক হিসাবে নয়, বিচারক হিসাবেই স্কুলে এসেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে এত সব অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হয়। তারা মনে করেন, তিনি হয়তো এখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতেই গণমাধ্যমে তিন পাতার স্বাক্ষরহীন বক্তব্য পাঠিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার দিন স্কুলে উপস্থিত হয়ে বিচারকের পক্ষাবলম্বন ও ছাত্রীদের মামলার ব্যাপারে ভয় দেখানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবদুল মোন্নাফকে সোনাতলা থানায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসাবে বদলি করা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনায় তাকে বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম জানান, ‘এটা নিয়মিত বদলির অংশ। এর সঙ্গে বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।’
বগুড়া জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হজরত আলী যুগান্তরকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ৮-৯ জন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী এসেছিলেন। তারা মৌখিকভাবে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে প্রথমদিনের অভিযোগগুলোই করেছেন। তাদের কাছ থেকে লিখিত স্টেটমেন্ট নেওয়া হবে।’